‘জেলা প্রশাসন মেধা বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার
শিক্ষা নিয়ে কাজের ধারাবাহিকতা থাকলে ৫ বছর পর প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র পাল্টে যাবে
- আপলোড সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৮:৫৩:১৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৮:৫৩:১৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
শিক্ষা নিয়ে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী পাঁচ বছর পর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চিত্র পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেছেন, শিক্ষা নিয়ে তাড়াহুড়া করে কাজ করা যায় না। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করেছি, কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে যারা আসবেন, তারা যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র পাল্টে যাবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘জেলা প্রশাসন মেধা বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। সহকারী কমিশনার দ্বিপান্বিতা দেবী’র সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন) এ.কে. মোহাম্মদ সামছুল আহসান, পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ, প্রাথমিক শিক্ষা সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. নূরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য ও ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরো বলেন, শীঘ্রই আপনারা শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখতে পারবেন। আমরা উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করবো। উপজেলায় যেগুলো খালি পদ আছে সেগুলোতে শিক্ষক পদায়ন করা হলে শিক্ষক সংকট দূর হবে।
তিনি বলেন, একসময় যারা শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করতেন, তাদের বলে দেওয়া হতো নম্বর বেশি দেওয়ার জন্য বা এত নম্বরের নিচে দেওয়া যাবে না। যে কারণে জিপিএ-৫ বেশি পেত শিক্ষার্থীরা। পরে দেখা যেত এই সব শিক্ষার্থী ইংরেজি পড়তে পারে না, অঙ্ক জানে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। তাদের ৯৪ ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করে।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পাবে জানিয়ে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, বই ছাপা হচ্ছে, গুদামে আসতে শুরু করেছে। এতে নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়বে না। সব শিক্ষার্থী সময়মতো বই পাবে।
অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের সমাজে শিক্ষা নিয়ে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা অনেকাংশে সঠিক নয়। শিক্ষায় শারীরিক ও মানসিক বিকাশ না ঘটলে শিশুরা এগোতে পারবেনা। শুধু পড়াশোনা করে ভাল মার্কস ও সার্টিফিকেট অর্জন করলেই হবেনা। পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য মুখস্থ বিদ্যার বাইরের জগতের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। তা না হলে এসব কাগজের সার্টিফিকেট কোনো কাজে আসবে না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে শিশুদের মাঝে মমত্ববোধ গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের মধ্যে খারাপ আচরণ দেখা দিলে একসময় সেটি মনে স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধে। শিশুদের সামনে খারাপ আচরণ করা যাবে না। তারা যা দেখবে তাই কিন্তু শিখবে। সেজন্য আমাদের শিশুদের সামনে সতর্কতার সাথে যেকোনো আচার-আচরণ করতে হবে। ভালো আচরণ করলে তারা ভালো কিছু শিখবে। এছাড়াও একটি স্কুল কিভাবে পরিচালিত হয় তার উপরও নির্ভর করে শিশুদের নৈতিকতা। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করলে শিশুরা নৈতিক শিক্ষা পায়। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি কখনও উন্নত হতে পারেনা।
এসময় অতিথিবৃন্দ প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আয়োজিত এই মেধা বৃত্তির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, এই ধরনের আয়োজনের কারণে জেলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার কারণে শিক্ষার মান বাড়বে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি, বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। পরে, অতিথিগণ এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখতে আয়োজকের প্রতি অনুরোধ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, জেলায় প্রথমবারের মতো এতো বড় একটা আয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স¤পন্ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা এইধরনের আয়োজন বারবার করতে চাই। এই ধরনের আয়োজন করলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে এক ধরণের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। কে ১ম হবে, কে ২য় হবে এ-ই বিষয়গুলো যখন তাদের মাথায় আসে তখন তারা ভালো করে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। পড়াশোনায় মনোযোগী হলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হয়। মূলত এইসব কারণে মেধা বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সেরা শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চতুর্থ শ্রেণিতে ৯৯ নম্বর পেয়ে প্রথম হওয়া দোয়রাবাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহ জাবিন তালুকদার ও মধ্যনগর উপজেলার হরিপুর নওয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য মুগ্ধ। শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীন। শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শহর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরীন আক্তার খানম।
পরে, মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া ১০৬ শিক্ষার্থী, ২৪ জন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও ২১টি শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের হাতে নগদ টাকা, পুরস্কার ও ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কোর্ট মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ ইলিয়াস উদ্দিন এবং পবিত্র গীতাপাঠ করেন জ্যোতির্ময় সরকার কেশব।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২৯ অক্টোবর ‘মেধা যাচাই পরীক্ষা’র আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এতে জেলার ১২টি উপজেলার ১ হাজার ৪৭৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ৫৯ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। রবিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৫ম শ্রেণির ৫৭ জন, ৪র্থ শ্রেণির ৪৮ জন শিক্ষার্থী, ২০ জন শিক্ষক এবং ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকণ্ঠ