ঐকমত্য কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
- আপলোড সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৮:৩৯:১১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৮:৩৯:১১ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে সাফল্যের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি কমিশনের সদস্যদের ধন্যবাদ দেন বলে তথ্য দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা অনুসারে রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দেশে একটি স্থায়ী ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যেটির মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
এ সময়ের মধ্যে ঐকমত্য কমিশন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করে। মতানৈক্য নিয়েই এতে সই করে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। এরপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন কয়েক আগে সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি সাংবিধানিক আদেশের খসড়া প্রণয়ন করে তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে। এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি। অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি। বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি।
তিনি সব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
এই জুলাই সনদ বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।
তিনি ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ দেন। পাশাপাশি মাসের পর মাস আলোচনার অগ্রগতি জনগণের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরায় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।
দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে ‘মহাচ্যালেঞ্জ’ থাকার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

সুনামকন্ঠ ডেস্ক