স্টাফ রিপোর্টার::
জামালগঞ্জ উপজেলায় উজান দৌলতপুর গ্রামে শতবর্ষ ধরে ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত সরকারি খাস জমি একক ব্যক্তির নামে দেওয়া বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন গ্রামবাসী।
গত ২৫ মে গ্রামবাসীর পক্ষে গণস্বাক্ষর সম্বলিত এই লিখিত আবেদন করেন কংকন সরকার। সে সময় জামালগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনারের (এসিল্যান্ড) দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকীন নুর আবেদনটি আমলে নিয়ে ভীমখালী ভূমি অফিসের তহশিলদার মো. দেলোয়ার হোসেন কাজীকে সরেজমিন তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করেন।
লিখিত আবেদনে উজান দৌলতপুর গ্রামবাসী উল্লেখ করেন, সার্বজনীন কাজে ব্যবহৃত ও গ্রামবাসীর দখলে থাকা উল্লেখিত বন্দোবস্তকৃত জায়গায় শত বছর ধরে শ্রী শ্রী লক্ষ্মী মন্দির স্থাপিত রয়েছে। সেখানে প্রতিবছর চৈত্র মাসে হাওরের একমাত্র বোরো-ইরি ফসল কাটার আনুষ্ঠানিক শুরুতে লক্ষ্মীপুজো অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখে লাগোয়া হাওরের কয়েক হাজার মণ ধান কাটার পর এই জায়গা ধান মাড়াই ও ধান শুকানোর খলা হিসেবে ব্যবহার করেন গ্রামের লোকজন।
এছাড়া এই মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিবছর ফালগুন মাসে সর্বজীবের মঙ্গল কামনায় শ্রী শ্রী হরিনাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক ভক্তবৃন্দের আগমন ঘটে। কিন্তু একক ব্যক্তির স্বার্থে এই জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়ায় গ্রামবাসী চরম বিপাকে পড়েছেন। আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, গ্রামেরই জয়সেন সরকার নামে জনৈক ব্যক্তি দক্ষিণ দৌলতপুর মৌজার সরকারি খাস খতিয়ানের ৯৭ হাল দাগের (সাবেক দাগ-৮৭) চারা সমতুল্য ৯৪ শতাংশ জমি ২০১৪ইং সনে বন্দোবস্ত নেন। এবং পরে নামজারি করেন বলে জানা গেছে। যা গ্রামবাসী আদৌ জানতেন না। বন্দোবস্ত নেওয়ার প্রায় এক যুগ পর চলতি বছরের গত ৯ মে জয়সেন সরকার জনৈক গ্রাম্য সার্ভেয়ার নিয়ে বন্দোবস্তকৃত জায়গা দখলের উদ্যোগ নিতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী কয়েক দফা বৈঠক করে চলতি বছরের গেল ২৫ মে জনস্বার্থে এই বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে জামালগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের দীর্ঘ ৫ মাস চলে গেলেও তদন্ত করেননি তহশিলদার। পরবর্তীতে আবেদনের ৫ মাস পর গত ২৩ অক্টোবর গ্রামের লোকজন পুনরায় জামালগঞ্জ উপজেলার নবাগত এসিল্যান্ডের সাথে সাক্ষাৎ করে আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় আমলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এরপর ২৮অক্টোবর বন্দোবস্তকৃত জায়গায় সরেজমিনে তদন্তে যান ভীমখালী ভূমি অফিসের তহশিলদার মো. দেলোয়ার হোসেন কাজী।
এ ব্যাপারে জয়সেন সরকার জানান, আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবেদন করে এই জায়গার বন্দোবস্ত পেয়েছি। তবে গ্রামবাসী চাইলে এই জায়গার দখল বিষয়ে তিনি গ্রামবাসীর সাথে সমঝোতা করতে রাজি আছি। এছাড়া উপযুক্ত মূল্য পেলে এই জায়গা তিনি গ্রামবাসীর কাছে বিক্রি করতেও রাজি আছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে তহশিলদার মো. দেলোয়ার হোসেন কাজী জানান, আমি গত ২৮ অক্টোবর সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে দেখেছি, গ্রামবাসীর দখলে থাকা উক্ত জমিতে ধর্মীয় মন্দির আছে, ধান মাড়াই ও ধান শুকানোর খলা আছে। আমি উভয়পক্ষের সাথে কথাও বলেছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকীন নুর বলেন, বন্দোবস্তকৃত জমি বিক্রি করা যাবে না। যদি কেউ বন্দোবস্ত নিয়ে থাকেন তবে তো সেই জায়গা তার দখলে থাকার কথা। কিন্তু তিনি যদি দখল না রাখতে পারেন, যদি স্থানীয় সমস্যা হয়, তবে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে শুনানি করে বিষয়টি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
জামালগঞ্জে ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত জমির ব্যক্তি মালিকানা বন্দোবস্ত বাতিলের দাবি
- আপলোড সময় : ০২-১১-২০২৫ ১১:৩২:০৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৯:০১:২৭ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকণ্ঠ