জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘মেধা যাচাই বৃত্তি পরীক্ষা’
সুনামগঞ্জের শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
- আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০৭:২৩:১৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০৭:২৩:১৮ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে “মেধা যাচাই বৃত্তি পরীক্ষা”। যা শুধু একটি পরীক্ষা নয়, বরং শিক্ষাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জেলার ১২টি উপজেলায় একযোগে প্রায় ৬৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, শিক্ষা এখন শুধু স্কুলের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি এখন হয়ে উঠছে এক সামাজিক আন্দোলন।
দীর্ঘদিন ধরে হাওরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা নানা সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে চলছে। বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের অসুবিধা, শিক্ষকের সংকট, পরিবারে দারিদ্র্য -সব মিলিয়ে প্রাথমিক স্তরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার এখনো চিন্তার কারণ। এই প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও দৃষ্টান্তমূলক।
এই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য কেবল মেধা যাচাই নয়; বরং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে সচেতনতা তৈরি করা। আরএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফলাফল বিশ্লেষণের উদ্যোগটি দেখিয়ে দিয়েছে প্রশাসন শুধু পরীক্ষা নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ডেটা-নির্ভর ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মূল্যায়নের পথে হাঁটছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা করা এবং পাঠদানের মান উন্নয়ন - সবই সহজতর হবে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি যেভাবে বলেছেন- “এই মেধা যাচাই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিরিয়াসনেস তৈরি হবে, যা এসএসসি ও এইচএসসি পর্যন্ত বহমান থাকবে” - তা আসলে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা চক্রের ভিত্তি স্থাপন করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি শিক্ষার্থীরা মনোযোগী ও আগ্রহী হয়, তাহলে সেই ধারাবাহিকতা উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত গড়ে উঠতে পারে।
আমরা মনে করি, শিক্ষকদের ভূমিকা এখানেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফল নয়, বরং শিক্ষার্থীরা যেন ধারণাগতভাবে শেখে, সমস্যা বিশ্লেষণ করে সমাধান করতে পারে - এমন শিক্ষাদান পদ্ধতির ওপরই জোর দেওয়া প্রয়োজন। এই পরীক্ষার অভিজ্ঞতা যদি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, তাহলে এটি জাতীয় পর্যায়ে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
এই বৃত্তি পরীক্ষা ঘিরে অভিভাবকদের উৎসাহও ছিল অনন্য। সকাল থেকে সন্তানদের হাত ধরে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, তাদের মুখে প্রত্যাশার আলো - সব মিলিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো পরিণত হয়েছিল এক উৎসবমুখর প্রাঙ্গণে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিক্ষা তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন তা পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত অংশগ্রহণে পরিণত হয়।
সুনামগঞ্জে এই মেধা যাচাই বৃত্তি পরীক্ষা প্রমাণ করেছে- উদ্যোগ, সদিচ্ছা ও সুশাসন থাকলে যে কোনো জেলায় শিক্ষাবিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এখন প্রয়োজন, এই উদ্যোগকে ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখা, ফলাফল বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং ভালো ফলাফলকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুত বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে তাদের প্রণোদনা বজায় রাখা।
সুনামগঞ্জ আজ দেখিয়ে দিয়েছে- শিক্ষা উন্নয়ন কেবল নীতি নয়, এটি হতে পারে প্রশাসনিক উদ্ভাবনেরও এক অনন্য রূপ। এই ‘মেধা যাচাই বৃত্তি পরীক্ষা’ হোক দেশের প্রাথমিক শিক্ষার নবজাগরণের সূচনা - এই প্রত্যাশা করি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

সম্পাদকীয়