সুনামগঞ্জ , বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ , ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ধোপাজানে অবৈধভাবে ১৪ দিনে ২৪ কোটি টাকার সিলিকা বালু লুট জুলাই আন্দোলনের পর সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন আমলারা : হাসনাত আবদুল্লাহ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ধর্মপাশায় সড়ক পুনঃনির্মাণের দাবিতে অবরোধ যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত গণভোটে কী হবে? কলেজে টিকটক-লাইকির ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি সুনামগঞ্জে শব্দদূষণ বিরোধী অভিযান: ৫ যানবাহনকে জরিমানা, জব্দ ৭ হাইড্রোলিক হর্ণ দোয়ারাবাজারে স্কুলছাত্রীকে হত্যার চেষ্টা, বখাটের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা, প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের ১০ লাখ টাকার চেক ফেরত দিয়েছি, কর্মীর ভালোবাসা গ্রহণ করেছি : কামরুজ্জামান কামরুল শহরে অনুমোদনবিহীন পোস্টার-ব্যানার অপসারণের নির্দেশ ধোপাজান খুবলে খাচ্ছে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে ৫ লাখ মানুষ নির্বাচনে সব দলকে অংশ নেয়ার আহ্বান বিএনপি মহাসচিবের দরিদ্র মানুষের বিচারপ্রাপ্তির আশ্রয়স্থল গ্রাম আদালত : অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া আক্তার জাহান যারা পিআর পদ্ধতির দাবি করে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় : কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন প্রাচীন বাংলার হাবেলি দুর্গ ও রাজবাড়ি দখল হচ্ছে প্রতিদিন ফুটপাতে ‘উচ্ছেদ-দখল’ খেলা ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সিলেট-১ আসনে কার হাতে উঠবে ধানের শীষ?

প্রচারণার ব্যানার-ফেস্টুনে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে সুনামগঞ্জ শহর

  • আপলোড সময় : ২৩-১০-২০২৫ ০৭:৫২:১৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৩-১০-২০২৫ ০৭:৫৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
প্রচারণার ব্যানার-ফেস্টুনে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে সুনামগঞ্জ শহর
তানভীর আহমেদ::
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সড়ক পার্শ্ববর্তী গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য সাইনবোর্ড-ব্যানার-ফেস্টুন।
প্রচারণায় পিছিয়ে নেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোও। এসব ব্যানার, ফেস্টুন গাছে ঝোলানো হয়েছে পেরেক ঠুকে। একেকটি গাছ যেন একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ড। এ যেন ব্যানার, তোরণ আর ফেস্টুনের শহর। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি ভবনের দেয়াল, বাদ নেই ল্যাম্পপোস্টের খুঁটিও! পোস্টার, ব্যানার ও বিজ্ঞাপনে এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে কোনটা কোন গাছ, কোনটা বিদ্যুতের খুঁটি তা আর চেনার উপায় নেই। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে সুনামগঞ্জ শহর। এভাবে দিনের পর দিন চললেও তা যেন দেখার কেউ নেই। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছে পেরেক ঠুকে এসব ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর প্রবণতা বাড়লেও সুনামগঞ্জ পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দিন দিন এর প্রবণতা বাড়ছে।
তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।
পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশের গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার অসংখ্য ফেস্টুন। ফেস্টুনগুলো পেরেক দিয়ে গাছে আটকানো হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও রাজনীতিকের ফেস্টুন-ব্যানার। পিছিয়ে নেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর বিজ্ঞাপন। শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সকল সড়কের বিদ্যুতের খুঁটি, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ভবনের দেয়ালে লাগানো হয়েছে পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন। বাদ যায়নি রিভার ভিউ এলাকার শতবর্ষী গাছটিও। এই গাছেও ঝুলছে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন। গাছগুলোকে দেখে এখন আর সবুজ প্রকৃতির অংশ মনে হয় না, বরং মনে হয় যেন একেকটি গাছ একেকটি ‘বিজ্ঞাপন বোর্ড’। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রচারসামগ্রী দৃশ্যমান করতে গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণের গাছগুলোতে কমপক্ষে ৫-৮ টি করে ব্যানার-ফেস্টুন পেরেক মেরে লাগিয়ে রাখতে দেখা যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও আদালতে আসা লোকজনের নজর কাড়তেই এসব ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও সম্প্রতি শহরের অলিগলির বিভিন্ন বাসাবাড়ি কিংবা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস বা বাসভবনের দেয়ালে স্প্রে ক্যান ব্যবহার করে সরাসরি দেয়ালে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন আঁকা হয়েছে। যেখানে একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীকসহ এক ব্যক্তির নাম উল্লেখখ করে ‘এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ লেখা আছে। এই বিজ্ঞাপন লাগানো হয়েছে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবনের দেয়ালেও।
এছাড়া, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের প্রবেশপথের দেয়াল ও বিভিন্ন স্থাপনায় একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রচারণা মূলক ব্যানার-ফেস্টুন ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিজ্ঞাপন লাগানো হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের মতে, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ব্যাহত হয় গাছের বৃদ্ধি। এমনকি সংক্রমণের কারণে গাছের আয়ুষ্কাল কমে যায়। অনেক সময় মরিচা ধরা পেরেক গাছের জন্য বিষের মতো কাজ করে। এতে গাছ মারাও যেতে পারে। তাই কোনো গাছে পেরেক ঠোকা মানে ওই গাছের চরম ক্ষতি করা। যেখানে বেশি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো গাছের ক্ষতি করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে বলেও জানান তাঁরা। গাছে গাছে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর এমন পরিবেশবিরোধী কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
শহরের বিলপাড় এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, গাছ আমাদের বন্ধু, তারা আমাদের অক্সিজেন দেয়। অথচ এই গাছগুলোর ওপর প্রতিনিয়ত নির্মম অত্যাচার চলছে। গাছের শরীরে অনায়াসে পেরেক মারা হচ্ছে। অথচ পৌরসভা থেকে এসবের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। দ্রুত এসব অপসারণ করে গাছগুলোকে বাঁচানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শহরের ষোলঘরের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ বলেন, ব্যানার-ফেস্টুনে সুনামগঞ্জ শহর ছেয়ে গেছে। এতে শহরের সৌন্দর্য্যহানি ঘটছে। পৌর কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গাছের প্রতি এই নির্দয় আচরণ আমাদের হতাশ করে। শুধু রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থে পরিবেশের ক্ষতি করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও পৌর শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসনাত বলেন, গাছের সাথে প্রতিনিয়তই এই ধরনের অত্যাচার করা হচ্ছে। শহরের সকল সড়কের পাশের গাছগুলোতেই কোনো না কোনো ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলে আছেই। গাছের প্রতি এই নির্দয় আচরণ বন্ধ করা প্রয়োজন। এগুলো বন্ধ না হলে একদিকে শহর সৌন্দর্য হারাবে অন্যদিকে আমাদের গাছগুলো দিন দিন ধ্বংস হবে। আমরা চাই, পৌর প্রশাসন দ্রুত এসব ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের পাশাপাশি যারা এই কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, আমরা গাছকে যখন বিভিন্নভাবে ব্যবহার করি তখন ভুলেই যাই যে গাছেরও প্রাণ আছে। গাছে পেরেক ঠোকার মাধ্যমে আমরা শুধু তার গায়ে আঘাত করি না, তার প্রাণকেও কষ্ট দিই। গাছ আমাদের নিঃস্বার্থভাবে ছায়া, অক্সিজেন ও জীবন দেয় - তাই গাছের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াই আমাদের দায়িত্ব। আশাকরি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিবে এবং গাছগুলো থেকে পেরেক ও সাইনবোর্ড উঠিয়ে নিবে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মো. মতিউর রহমান খান বলেন, শহরে অনুমোদন ছাড়া যেসকল বিজ্ঞাপন বা ব্যানার ফেস্টুন আছে সেগুলো অপসারণের জন্য শীঘ্রই পৌরসভার পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ব্যানার ফেস্টুন গাছে ঝুলানো থাকলে শহরটা দেখতে অসুন্দর লাগে। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে অবশ্যই এগুলো সরিয়ে নিতে হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স