সুনামগঞ্জ , রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫ , ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পাঁচ আসনে নবীন মুখের ছড়াছড়ি অদ্বৈত জন্মধাম পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে দু’পক্ষের হাতাহাতি শিশুযত্ন কেন্দ্র, পাঁচ ভুবনে বেড়ে উঠছে শিশুরা হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাড. নূরুল ইসলামের শোডাউন কারা সেফ এক্সিট চায়- নাহিদকে স্পষ্ট করার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার নির্মাণের পর থেকেই বন্ধ খাবার পানি পরীক্ষাগার বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন ওএসডি, আছে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও দোয়ারাবাজারের চিলাই নদীর বালু লুট ঠেকাতে বাঁশের ব্যারিকেড ফেরার সময় চলে এসেছে : তারেক রহমান আদালত চত্বরে নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, প্রাক্তন স্বামী গ্রেফতার আগামী নির্বাচনে ইসলামি সকল দলের বাক্স হবে একটা : চরমোনাই পীর ‎কেন্দ্রীয় যুবলদের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের গণসংযোগ ‎জামালগঞ্জে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার লিটনের মতবিনিময় শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো সিএনজি স্ট্যান্ড,অনুমোদন নেই একটিরও তাহিরপুরে যাদুকাটা বালুমহাল ১ এর সীমানা নির্ধারণ জেলা আ.লীগের সহসভাপতি ব্যারিস্টার ইমন গ্রেপ্তার দোয়ারাবাজারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ২ জনের কারাদন্ড ইজিবাইক সিএনজি যখন সড়কে যমদূত সেপ্টেম্বরে ৪৪৬ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৭ প্রকাশিত হলেই বিকশিত নয়

কবিতার গল্প

  • আপলোড সময় : ১১-১০-২০২৫ ০৩:৪৯:৫২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-১০-২০২৫ ০৩:৪৯:৫২ পূর্বাহ্ন
কবিতার গল্প
আহমেদ নূর আলবাব::> কবিতা এক বিশেষ ধরনের সাহিত্য শিল্প। সৌন্দর্য সৃষ্টিই কবিতার মূল উদ্দেশ্য। এইজন্য কবিতায় কবির সুগভীর আন্তরিকতা, বিষয় তন্ময়তা এবং কবি হৃদয়ের সংবেদনশীল ভাষাচিত্র প্রকাশ পায়। কবিরা শব্দকে ব্যবহার করে এক ধরনের গুণপনা সৃষ্টি করেন যা পাঠকের হৃদয়াবেগকে উদ্বুদ্ধ করে। আর এ কারণেই কবিতা শব্দ ও ভাষাগত বোধের শিল্প। কিন্তু কবিতা কাকে বলে এই নিয়ে বিভিন্ন কবিগণ বিভিন্ন সংজ্ঞা দাঁড় করিয়েছেন। যদিও এগুলো তাঁদের নিজ নিজ ভাবনা মাত্র। সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া কঠিন। কবিতার সংজ্ঞা নিয়ে ইংরেজ কবি কোলরিজ বলেন- ইবংঃ ড়িৎফং রহ ঃযব নবংঃ ড়ৎফবৎ. অর্থাৎ অপরিহার্য শব্দের অবশ্যম্ভাবী বাণী বিন্যাসই কবিতা। একজন কবি যখন কবিতা লিখেন তখন অসংখ্য শব্দ কবির লেখনি মুখে ভিড় করে, তখন এই সব শব্দ থেকে একটিমাত্র যথাযথ শব্দই কবিতায় ব্যবহার উপযোগী ‘অপরিহার্য’ শব্দ। এই জাতীয় শব্দ লেখকের কল্পনা বা অনুভূতি প্রকাশে অত্যন্ত উপযোগী। অবশ্যম্ভাবী বাণী বিন্যাস বলতে মূলত ছন্দের প্রয়োজনীয়তায় কথা বলা হয়েছে। কারণ অযত্ন বিন্যস্ত শব্দে কবিতা হয় না। শব্দগুলো বিন্যস্ত হলে তাদের মধ্যে চিত্রগুণ ও প্রবাহের সৃষ্টি হয় এবং রসাত্মক বাক্যে সমর্পিত হয়ে অবশ্যম্ভাবী ছন্দময় রূপ লাভ করে তখনই হয় কবিতা। জীবনানন্দ দাশ বলেন, সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি; কবি- কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার ও কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য বিকিরণ তাদের সাহায্য করছে। কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। নানা রকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়। কবিতার স্বরূপ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেন- অন্তর হতে আহরি বচন, আনন্দলোক করে বিরচন গীতি রস দ্বারা করে সিঞ্চন সংসার ধূলিজালে। গ্রিক কবি ও দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন- কবিতা আসলে বাস্তব জীবন কিংবা ঘটনারই এক ধরনের অনুকৃতি মাত্র। কবি এলিয়ট বলেন- কবিতা রচনা হল রক্তকে কালিতে রূপান্তর করার যন্ত্রণা। মোটকথা কবিতা সংবেদনশীল কবি হৃদয়ের ভাষা চিত্র। তাই কবিতার ভাষা সংবেদনশীল। কিন্তু অর্থ ব্যঞ্জনার দিক থেকে তা সম্প্রসারণশীল এবং তা হৃদয়াবেগকে উদ্বুদ্ধ করে। আর এ কারণেই কবিতাকে বলা হয় শব্দ ও ভাষাগত বোধের শিল্প। তবে আচার্য বিশ্বনাথ কবিরাজ তাঁর ‘সাহিত্য দর্পণ’ গ্রন্থে বলেছেন- "বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম’। অর্থাৎ রস যে বাক্যের আত্মা স্বরূপ তাই কাব্য। কারণ কবিতা জিনিসটা তো একটা নিরাকার কিছু নয়, ঐ বাক্যই তার দেহ। তাই কবিতায় ‘ভাষা’ আর তার সঙ্গে ‘ছন্দ’ এই দুটি মিলে কবির কোন অনুভূতি যখন বাক্যে রূপ ধারণ করে তখনই তা সত্যিকার কবিতা হয়ে উঠে। কিন্তু কবি যখন বলেন- ১. “কুব্জপৃষ্ঠ ন্যুব্জদেহ সারি সারি উট চালকের ইঙ্গিত মাত্রই দেয় ছুট।” ২. “জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে, সে জাতির নাম মানুষ জাতি; এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত, একই রবি শশী মোদের সাথী।” --এসব কবিতা নয়। কারণ প্রথমটিতে কবি ‘উট’কে জ্ঞাতব্য বিষয় করেছেন এবং অপরটিতে কবি ‘মানুষ’ সম্বন্ধে একটি চিন্তা প্রকাশ করেছেন। উট বা মানুষ সম্পর্কে কোন একটা ভাবের অনুভূতি রূপময় হয়ে উঠে না বলে এসব কবিতা আমাদের প্রাণে রসোদ্রোক হয় না। কিন্তু কবি যখন বলেন- ১. মনে পড়ে বরিষার বৃন্দাবন অভিসার একাকিনী রাধিকার চকিত চরণ, শ্যামল তমালতল, নীল যমুনার জল, আর দুই ছলছল মলিন নয়ন। এ ভরা বাদর-দিনে কে বাঁচিবে শ্যাম বিনে, কাননের পথে চিনে মন চায়, বিজন যমুনা কুলে বিকশিত নীপমুলে কাঁদিয়া পরাণ বুলে বিরহ ব্যথায়। ২. ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে আয় গো আয়। কাঁচা রোদ খানি পড়েছে বনের ভিজে পাতায়। ৩. ওই নীল বিভ্রমে আকাশের আলো দিকে দিকে ‘দিশা’ পায়, আর ভ্রমি যায় বায়ু আয়ুহীন সম মুহু মুহু মুরছায়, ব্যাপি ক্ষিতি অপ- অপ্সরা সব সরে -যায়, ফিরে চায়! - উপরে তিনটি কবিতায় দেখা যায় ভাবের সঙ্গে ভাষার এবং ছন্দের সঙ্গে সুরের যেমন মিল রয়েছে তেমনি কবির প্রাণে যে ভাবের সুর জেগেছে তা সত্যিকার অনুভূতির বস্তু না হলে কবিতার ঐ পংক্তিগুলো এমন রসের আবেগে টলমল করত না। প্রথমটির বিষয় বা ভাবের আশ্রয় হয়েছে বাহিরের বর্ষার রূপ এবং তা দেখে কবির প্রাণে একটি মধুর উৎকণ্ঠা। তাই বৃন্দাবন, রাধা ও যমুনার সেই পুরাতন গাঁথা তার মনে পড়েছে। এর কল্পনাকে স্মৃতি কল্পনা বলা যেতে পারে। এখানে বিষয়টি এই হিসেবে বাস্তব যে, আমাদের মনের মধ্যে ওই রূপ কতগুলো ভাব সত্যিই সঞ্চিত হয়ে আছে এবং বর্ষার সঙ্গে তাদের স্মৃতি স¤পর্ক আছে। দ্বিতীয়টিতে ভাষা যেমন অতিশয় সরল ছন্দেও তেমনি একটি সুরে দোল আছে। কিন্তু এতেও কবির আনন্দ যেন উছলিয়া পড়েছে। প্রকৃতির একটি সাধারণ দৃশ্য কবির প্রাণকে স্পর্শ করেছে--- ওই যে, “কাঁচা রোদ খানি” এটি শুধু বাহিরের আলো নয় কবির নিজের মনের আলো। তার উপরে পড়েছে তাই এটি এত সুন্দর দেখাচ্ছে। আমরা ওই দৃশ্য কতবার দেখেছি, কিন্তু কবির দেখা আর আমাদের দেখা এক নয় বলে আমরা ঐরকম ভাষা ও ছন্দে তা প্রকাশ করতে পারিনি। বৈষ্ণব কবিতার সেই লাইনগুলি-- সই, কেবা শুনাইলো শ্যাম নাম- কানের ভিতর দিয়া মরমে পাশিল গো! আকুল করিল মোর প্রাণ। ----এই কবিতায় ভাষার কোন সাজসজ্জা নাই। কিন্তু সহজ সরল কথাগুলোয় এমন একটি সুর লেগে আছে যা তাতে প্রাণের গভীর অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে। কবি যখন বলেন--- “ওরে প্রাণের বাসনা, প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নাহি।” মোটকথা সাহিত্য শিল্পীর মানসিক অবস্থা বা আবেগ যখন ‘প্রকাশ বেদনা’য় ব্যাকুল হয় তখনই তার মনে জেগে ওঠে ভাষা ও ছন্দ বা ভাব প্রকাশের অপার বাসনা। আর এই আবেগময় ভাষা ও ছন্দের মধ্যে ভাবের অন্তরঙ্গ যোগ না ঘটলে কবিতা সার্থক হয় না। কিন্তু বর্তমানে গদ্য কবিতা, কবিতার এক ধরনের রূপ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জনক। আধুনিককালে এই রূপটা বেশ জনপ্রিয়। পদ্য কবিতায় ভাষা ও ছন্দের প্রকাশ রীতির এক ধরনের অবগুণ্ঠন থাকে বলে ভাবপ্রকাশে অনেক সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। গদ্য কবিতা তার তুলনায় অনেক স্বাধীন ও জীবনের রুক্ষ রূপ প্রকাশে অনেক সহায়ক। গদ্য কবিতার কারণেই জীবনের সব বিষয়-আশয় প্রকাশ করা সহজ হয়েছে। গদ্য কবিতা যদিও কাব্যচ্ছন্দ থাকে না কিন্তু বাক্যচ্ছন্দ আছে। তাই গদ্য কবিতায় ও ছন্দ বিদ্যমান। পদ্যে সেটা সুপ্রত্যক্ষ আর গদ্যে সে টা অন্তর্নিহিত। কাব্যের মূল লক্ষ্য হৃদয় জয় করা ছন্দের ঘোড়ায় চড়েই হোক আর গদ্যের পা চালিয়েই হোক। মূলত কোনটা দ্বারা উদ্দেশ্য সিদ্ধি হবে সেটা বিবেচনা করতে হবে। বাস্তব জগত ও রসের জগতের সমন্বয় সাধনে গদ্য কাজে লাগবে কেননা গদ্য শুচিবায়ুগ্রস্ত নয়। গদ্য ছন্দের চাল স্বাভাবিক চলন, আর পদ্যের ছন্দের চাল নাচের চলন। পরিশেষে বলা যায়, কবিতাকে কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়, ছন্দে বেঁধে রাখা যায় না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে কবিতা আমাদের সামনে এসেছে। নারী যেমন আকার-ইঙ্গিতে, সাজ-সজ্জায়, বিলাস-প্রসাধনে আপনাকে মনোরমা করে তোলে কবিতাও তেমনি শব্দে, সঙ্গীত, উপমা, রূপক, উৎপেক্ষায়, চিত্রে ও অনুভূতির নিবিড়তায় নিজেকে প্রকাশ করে। ভবিষ্যতেও আরো নানা রূপে আমাদের সামনে আসবে। কবিতা বিভিন্ন রূপের জন্য বিভিন্ন নিয়ম নীতি থাকবে, কিন্তু কবিতা থাকবে চিরকাল উন্মুক্ত। কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায়, ছন্দে কবিতাকে কখনো আবদ্ধ করা যাবে না। কারণ বিজ্ঞান দর্শনে আমরা জগৎকে জানি, কিন্তু কবিতায় কাব্যে আমরা নিজেকে জানব। কারণ কবিতা প্রকৃতপক্ষে কাব্য-সত্য ও কাব্য-সৌন্দর্য রূপে মানব জীবনের সমালোচনা বা জীবন-দীপিকা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
পাঁচ আসনে নবীন মুখের ছড়াছড়ি

পাঁচ আসনে নবীন মুখের ছড়াছড়ি