বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা
বজ্রপাতের তীব্রতা আগামীতে আরো বাড়বে
- আপলোড সময় : ০৭-১০-২০২৫ ০৮:১৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-১০-২০২৫ ০৮:১৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশে আগামীতে বজ্রপাতের ঘনত্ব এবং তীব্রতা আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এক বিশেষজ্ঞ। তার মতে, প্রাথমিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে গ্রামীণ এলাকার জনগণ এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের যারা সচরাচর কৃষিকাজ ও মাছ ধরার মতো বাইরের কাজে নিযুক্ত, তারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর সীমিত সুযোগের কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তার মতে, চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঘন ঘন বজ্রপাতজনিত দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং বিজলি চমকানোর হার আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিস্থিতি বজ্রপাতের জন্য আরো অনুকূল হয়ে উঠলে, আগে যেসব এলাকায় বজ্রপাতের ঘটনা কম ঘটত, সেখানে ঘন ঘন বজ্রপাত হতে পারে।
আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। প্রতি বছর ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা যাচ্ছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বজ্রপাত বৃদ্ধির এই প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে স¤পর্কিত। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাতের আওতা ও তীব্রতা বাড়ছে।
বজ্রপাত বৃদ্ধির মূল কারণ স¤পর্কে ড. মান্নান বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বজ্রপাতের ঘনত্ব এবং তীব্রতা বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকটি গবেষণায় বাংলাদেশের প্রাক-বর্ষা মৌসুমে কনভেক্টিভ অ্যাভেইলেবল পটেনশিয়াল অ্যানার্জি ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা বজ্রপাতের তীব্রতা বৃদ্ধির ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, আঞ্চলিকভাবে দূষণের হার বেড়ে যাওয়ায় বায়ুর মান আরো খারাপ হয়েছে, যা বজ্রপাত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় বাংলাদেশে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি এবং বজ্রপাতের ঘনত্ব বৃদ্ধির মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে। লম্বা গাছ কেটে ফেলায় গ্রামীণ এলাকায় বজ্রপাতের ঝুঁকি আরো বেড়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
ভৌগোলিক ও ঋতুকেন্দ্রিক ঝুঁকি স¤পর্কে ড. মান্নান বলেন, বাংলাদেশ অবস্থানগত কারণেও প্রাক-বর্ষা মৌসুমে তীব্র বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থানে রয়েছে। প্রাক-বর্ষা মৌসুমে উচ্চ আর্দ্রতা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বায়ুম-লীয় অস্থিরতার সংমিশ্রণে ঘন ঘন বজ্রপাতের জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সাম্প্রতিক একটি আঞ্চলিক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। গ্রামীণ অঞ্চলে ঘনবসতি এবং মাঠে বেশিসংখ্যক লোক অবস্থানের কারণে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাড়ছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে দিনের শেষভাগে বিশেষ করে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বজ্রপাতের হার সবচেয়ে বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা যান। তাদের মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও সিলেটে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বছরে প্রায় ১২০টি বজ্রপাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ মাটিতে আঘাত হেনেছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ