সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫ , ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‎জামালগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজা দেখার হাওর ঢেকে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উকিলপাড়ায় পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস নির্গমন : দুর্ঘটনার আশঙ্কা দুর্গাপূজা : মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য পূজামন্ডপ পরিদর্শন করলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ৩ ফার্মেসিকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা পথে যেতে যেতে: পথচারী সুনামগঞ্জ পৌর শহরে স্পিডব্রেকারগুলো যেন মরণফাঁদ! ‎জামালগঞ্জে 'উন্নতি সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির' শিক্ষা উপকরণ ও  বস্ত্র বিতরণ সুনামগঞ্জে 'ধর্ষণ মামলায়' আসামিদের শাস্তির দাবিতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক এগিয়ে নিয়েছি : সিইসি আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পালিত যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদন্ড আজীবন জনগণের সেবা করতে চাই : পাবেল চৌধুরী ফার্মেসিতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জামালগঞ্জে জগন্নাথ জিউর মন্দির পরিদর্শনে এমপি প্রার্থী মাহবুব সীমান্তের ৩৫ পূজামন্ডপে বিজিবি’র বাড়তি সতর্কতা, ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন শিগগিরই গঠন হচ্ছে নতুন ২ বিভাগ ও ২ উপজেলা মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করতে হবে

দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য

  • আপলোড সময় : ২৯-০৯-২০২৫ ০৯:৩৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-০৯-২০২৫ ০৯:৩৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য
নিরঞ্জন অধিকারী:: আমরা ধর্মগ্রন্থ পুরাণে দেখি, শুভ শক্তির দ্বারা অসুরকে, অন্যায়কে, অত্যাচারকে, অশুভকে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যুগে যুগে। শক্তির দেবীর হাতে ভয়ংকর অসুরদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শান্তি ও কল্যাণ। বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন উপাখ্যানে আমরা এ কথার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। যেমন মার্ক-েয় পুরাণের শ্রীশ্রী চন্ডী অংশে আমরা দেখি, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছেন। কিংবা দেবী অম্বিকারূপে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই ভয়ংকর দৈত্যকে নিধন করে শান্তি স্থাপন করেছেন। দেবতারা যখন সহজেই অসুরদের কাছে পরাজিত হন, তখন তাঁদের লজ্জা লুকানোর আর জায়গাই যেন থাকে না। পুরাকালে একাধিকবার দেবতারা ভোগ-বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সরে গিয়েছিলেন নিজ নিজ কর্তব্য থেকে। আর তখন দেবতাদের এই ঔদাসীন্য আর ভোগতন্ময়তার সুযোগে অসুররা দখল করে নিয়েছিল স্বর্গরাজ্য। দেবতারা দেবরাজ ইন্দ্রসহ স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। দৃষ্টান্তরূপ বলা যায়, একবার দেবরাজ ইন্দ্রের ঔদাসীন্য ও নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মহিষাসুর নামে এক অসুর দেবতাদের স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত করে স্বর্গ ও মর্ত্যের অধীশ্বর হয়ে বসেছিল। রাজ্যহারা দেবতারা তখন ব্রহ্মা ও শিবকে অগ্রবর্তী করে গেলেন বিষ্ণুর কাছে। বিষ্ণু ও শিব আগত দেবতাদের ভৎর্সনা করলেন এবং ভেঙে না পড়ে সবার শক্তি একত্র সংহত করে অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরামর্শ দিলেন। সব দেবতার মিলিত শক্তি থেকে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা। এই যে ‘সব দেবতার শক্তির সম্মিলন’ - এর মধ্যেই রয়েছে দুর্গাপূজার তাৎপর্য। দুর্গতি থেকে ত্রাণের জন্য দেবতাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রমূর্তরূপে প্রকাশ পায় দেবী দুর্গার প্রতীকে। আর দুর্গতি থেকে ত্রাণ করেন বলে মহাদেবীর এক নাম দুর্গা। ধর্মগ্রন্থ শ্রীশ্রী চন্ডীতে আরো একটি উপাখ্যান আছে। সেখানে দেখা যায়, অসুর ভ্রাতৃদ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভ মহিষাসুরের মতোই তেজোদীপ্ত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রসহ দেবতাদের স্বর্গরাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন দেবী অম্বিকা ও কালী রূপে দৈত্য শুম্ভ ও নিশুম্ভ এবং তাদের অনুচর চন্ডী মুন্ডসহ সুরদের বধ করে স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধার করেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র আবার বসেছিলেন স্বর্গের সিংহাসনে এবং অন্যান্য দেবতা ফিরে যেতে পেরেছিলেন তাঁদের প্রিয় ও সুখের নিলয় স্বর্গরাজ্যে। দেবী দুর্গা বা অম্বিকা হলো দেবদের ঐক্যের প্রতীক। সম্মিলিত শক্তির প্রতীক। কঠোর সাধনায় সুদক্ষ হয়েই দেবতারা দৈত্যদের পরাজিত করতে পেরেছিলেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ সংহত শক্তির অনুশীলন ও ঋদ্ধ নৈপুণ্যের কাছে পরাভূত হয়েছিল বৈরী অসুররা। বাধ্য হয়েছিল স্বর্গরাজ্য ছেড়ে দিতে। সুতরাং দেবী দুর্গার একটি তাৎপর্য হচ্ছে শক্তির সম্মিলন, মিলিত শক্তির আঘাত এবং শত্রুর পরাজয়ের পর হৃতরাজ্য বা স¤পদের পুনরুদ্ধার। দেবী দুর্গা কেন তাঁর শক্তি প্রদর্শন করেন? এ কথার উত্তর হলো : অশান্তির উৎসকে ধ্বংস করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। শক্তির দেবী দুর্গা কেবল কঠোর নন, তিনি কোমলও, তিনি ভক্তদের শান্তি দেন। সুতরাং দেবী দুর্গার দুই রূপ। এক রূপে তিনি কঠোর দানবদলনী, অসুরনাশিনী, অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবিধানকারিণী। আরেক রূপে তিনি কুসুমকোমল, তিনি ভক্তের সব দুর্গতি বিনাশ করেন এবং ভক্তকে দেন শান্তি ও সমৃদ্ধি। শ্রীশ্রী চন্ডীতে মহাদেবী দুর্গা বা অম্বিকার এই দুই রূপের প্রতিই শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে : যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥ অর্থাৎ যে দেবী সমস্ত বিশ্বচরাচরে শক্তিরূপে বিরাজমান, সেই দেবীকে বারবার নমস্কার করি। আবার, যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥ অর্থাৎ যে দেবী বিশ্বচরাচরে শান্তিরূপে বিরাজমান, সেই দেবীকে বারবার নমস্কার করি। আজকের এই বিশ্বে কোনো রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্রকে যুদ্ধের সাহায্যে জয় করে নিজের অধিকারে সাধারণত নিতে পারে না। নিলেও রক্ষা করতে পারে না বিবেকবান অন্য শক্তি বা ঐক্যবদ্ধ বিশ্বশক্তির চাপে। আজকের বিশ্বে আগ্রাসন হয় অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্য দিয়ে। সুতরাং ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে তার সঙ্গে লড়তে হয়। আবার নিজের দেশের ভেতরে কখনো কখনো অপশক্তি প্রতিষ্ঠা পায়- শুভ পক্ষের শক্তির অসচেতনতা, ভোগলালসা বা অনৈক্যের কারণেও। তখন শুভ পক্ষের শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার দ্বারা সত্য প্রতিষ্ঠায় প্রয়াসী হতে হয়। এখানেও দুর্গাপূজার প্রতীকী তাৎপর্য প্রকাশিত। আবার সমাজ এবং ব্যক্তির ক্ষুদ্রতর পর্যায়েও আমরা ভোগের জন্য লালায়িত হই, অন্তরের ভেতরে জেগে ওঠে অশুভ অসুরগুলো। তখন অন্তরের শুভ শক্তি যদি তার কাছে পরাজিত হয়, তাহলে আমরা অন্যায়ে লিপ্ত হই, অসংগত ও অনৈতিক আচরণ করি। পক্ষান্তরে আমরা যদি সমাজের বা অন্তরের অশুভকে দমন করি ন্যায় ও সত্যের শক্তিতে, তাহলে অন্যায় থেকে, পাপ থেকে মুক্ত থাকি। শুভ্র-সুন্দর উজ্জ্বলতায় সমাজ ও ব্যক্তি ভাস্বর হয়ে ওঠে। আর প্রতীকী তাৎপর্যে তখনই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে যায়। দুর্গাপূজার আরো কিছু তাৎপর্য রয়েছে। কোনো এলাকার ভক্তরা মিলে যখন দুর্গাপূজার আয়োজন করেন, তখন তার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐক্য। বিভেদগুলো দূর হয়। এক মিলনমেলায় সবাই মিলিত হয়। আমাদের দেশে দুর্গাপূজার উৎসবে অংশ নেয় জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব মানুষ। রাজনৈতিক নেতারা আসেন শুভেচ্ছা জানাতে, বুদ্ধিজীবীরা ভাষণ দেন, শিল্পীরা সংগীত, নাট্য, নৃত্য প্রভৃতি পরিবেশন করেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেতার, টেলিভিশনে প্রচারিত হয় নানা অনুষ্ঠান, প্রকাশিত হয় পত্রপত্রিকার বিশেষ সংখ্যা বা ক্রোড়পত্র। দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রকাশিত হয় বিশেষ সাময়িকী। এর দ্বারা শিল্প-সাহিত্যের চর্চা হয়, সংস্কৃতি বিকশিত হয়। বলা বাহুল্য দুর্গাপূজার প্রতিমা এবং দুর্গাপূজা উপলক্ষে তোরণ নির্মাণ, আলপনা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে চিত্রশিল্পের বিকাশ ঘটে। তাই দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় কৃত্য নয়, তা সামাজিক ও মানবিক গুরুত্বসম্পন্ন একটি সর্বজনীন উৎসব। এই সম্প্রীতির আবেগে স্বদেশ ও বিশ্বের সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি। লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অনারারি অধ্যাপক

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স