সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫ , ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‎জামালগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজা দেখার হাওর ঢেকে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উকিলপাড়ায় পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস নির্গমন : দুর্ঘটনার আশঙ্কা দুর্গাপূজা : মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য পূজামন্ডপ পরিদর্শন করলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ৩ ফার্মেসিকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা পথে যেতে যেতে: পথচারী সুনামগঞ্জ পৌর শহরে স্পিডব্রেকারগুলো যেন মরণফাঁদ! ‎জামালগঞ্জে 'উন্নতি সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির' শিক্ষা উপকরণ ও  বস্ত্র বিতরণ সুনামগঞ্জে 'ধর্ষণ মামলায়' আসামিদের শাস্তির দাবিতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক এগিয়ে নিয়েছি : সিইসি আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পালিত যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদন্ড আজীবন জনগণের সেবা করতে চাই : পাবেল চৌধুরী ফার্মেসিতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জামালগঞ্জে জগন্নাথ জিউর মন্দির পরিদর্শনে এমপি প্রার্থী মাহবুব সীমান্তের ৩৫ পূজামন্ডপে বিজিবি’র বাড়তি সতর্কতা, ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন শিগগিরই গঠন হচ্ছে নতুন ২ বিভাগ ও ২ উপজেলা মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করতে হবে

রম্যকথন--মঞ্চারোহণ

  • আপলোড সময় : ২৬-০৯-২০২৫ ০৯:৩৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০৯-২০২৫ ০৯:৪০:৩৫ পূর্বাহ্ন
রম্যকথন--মঞ্চারোহণ ছবি: লেখক মোহাম্মদ আব্দুল হক
মোহাম্মদ আব্দুল হক:
ঘোষক ঘোষণা করলেন, সম্মানিত সুধী, এখন আমাদের অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে। এরপর একেকজন সম্মানিত অতিথির নাম ঘোষণা শুরু হলো। অনুষ্ঠান আরম্ভ হবার পরে একজন একজন করে সিঁড়িতে পা রেখে একটি একটি করে সিঁড়ির ধাপ মাড়িয়ে মাড়িয়ে মঞ্চে উঠে গেলেন। তারা সকলেই সম্মানিত মানুষজন। এক-এক করে মঞ্চের সামনের সারির সবগুলো চেয়ার সম্মানিত জনের কাপড় পরা নিতম্বের স্পর্শ পেয়ে ধন্য হলো। ইতিমধ্যে মঞ্চে আরও দুই হালি সম্মানিত মানুষকে ডাকা হলো। আমি চিন্তিত হলাম, তারা কোথায় বসবেন? বুঝা গেল, চিন্তার কোনো কারণ নাই। মঞ্চের সামনের সারির পিছনে আরও এক সারি চেয়ার পাতা রয়েছে। অতএব ঘোষকের ঘোষণা অনুযায়ী পরে মঞ্চে আরোহী সম্মানিত মানুষজন বসার জায়গা পেয়ে গেলেন। আমার চিন্তা দূর হলো। সম্মানিত মানুষদের বসতে দিয়ে মঞ্চের দ্বিতীয় সারির চেয়ারগুলোও ধন্য হলো। আহা! সম্মানিত মানুষদের ভারে মঞ্চে ধন্য-ধন্য গুঞ্জন শুরু হলো। এদিকে দর্শক সারিতে যারা বসেছিলেন তারা এতোক্ষণ পর্যন্ত সামনের সারির সম্মানিত মানুষদেরকে সহজেই দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু মহামুশকিল হলো প্রথম সারির সম্মানিত মানুষের আড়ালে স্থান পাওয়া সৌভাগ্যবান মঞ্চের পিছনের সারির অর্থাৎ দ্বিতীয় সারির দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত সম্মানিত মানুষদের চেহারা সুরত আর দেখতে পাওয়া গেল না। এমতাবস্থায় দর্শকদের কেউ কেউ মাথাটা একটু ডানে বামে সরিয়ে দেখতে চেষ্টা করতে লাগলেন মঞ্চের পিছনের সারিতে কে কে বসলেন তাদেরকে দেখা যায় কি-না। না আমি ঠিক মতো মঞ্চের পিছনের সারির কাউকে দেখতে পেলাম না। এক সময় দেখা গেল মঞ্চের এককোণে পাঁচজন দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সকলেই ঘোষক এবং সকলেই নিজেকে মঞ্চে দেখতে চাই এমন ভাবখানা নিয়ে মঞ্চ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত বিশাল অনুষ্ঠানের সঞ্চালকদের তালিকায় আরও একজন যোগ দিয়েছেন। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠান উপস্থাপক হিসেবে মোট ছয়জন স্থান পেয়েছেন আমি ও আমরা দর্শনার্থীরা দেখতে পেলাম। মাইক্রোফোনের সামনে একজন দাঁড়িয়েছেন হাতে একটুকরো কাগজ নিয়ে। বুঝা যাচ্ছে ঘোষক এবার একজন একজন করে বক্তার নাম ঘোষণা করবেন এবং বক্তৃতা দেওয়ার পালা শুরু হবে। মঞ্চের পিছনের সারিতে যারা বসেছিলেন তারা কি করছিলেন জানা গেল না। তবে মঞ্চের সামনের সারির সকলের দৃষ্টি দর্শক সারির দিকে। ঘোষক মাইক্রোফোনে মুখ লাগিয়ে নিজের মুখের লালা গিলে ও গলায় জমে থাকা কফ পরিষ্কার করার জন্য গলার ভিতর থেকে ‘উহোঁ-হোঁ’ শব্দ করলেন দুই বার। তারপর মাইক ফাটিয়ে বলতে লাগলেন, প্রিয় দর্শক ও শ্রোতা মন্ডলী আপনাদের উপস্থিতিতে আজকে আমরা ধন্য। আশা করছি আপনারা শেষ পর্যন্ত সকলেই থাকবেন। দর্শক সারিতে বসা আমি ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম আমি একা নই আমার দুই পাশে কিছুটা দূরে দূরে আরও দুইজন বসে আছেন। ঘাড়ে আমার কিছুটা ব্যথা আছে। এই ব্যথা নিয়েই সাহস করে যতোদূর পারা যায় ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাই। দেখলাম আমাদের মতো আরও পাঁচজন বসিয়া আছেন পিছনে দর্শক হিসেবে। মনে মনে তৃপ্তি পেলাম, যাক বিশাল হলে যেখানে প্রায় দুই শত মানুষ বসবার জায়গা আছে সেখানে এই দুই শত মানুষের জায়গা আমরা আটজনে দখল করে আছি। আমরাও কম সম্মানিত নয় বলা যায়। আর ওইদিকে মঞ্চে যেখানে মাত্র পাঁচজন বা ছয়জন বসলে সুন্দর ফুটতো সেখানে তারা অর্থাৎ ওই সম্মানিত মানুষরা ঠাসাঠাসি ও গাদাগাদি করে বসে যে শুধু মঞ্চের চেয়ারকে ধন্য করলেন তা-নয়; বরং এতো এতো সম্মানিত মানুষকে পেয়ে মঞ্চ নিজেও যেনো ধন্য হলো! এতে করে না-হয় বাজলো মঞ্চের সৌন্দর্য্যরে বারোটা - ফেসবুকে এবং পত্রিকার পাতায়তো দেখা যাবে মঞ্চে বসে থাকা তাদের ছবিটা। আহা! আহা! এটাই-বা কম কিসের। তারা এই সমাজে সম্মানিত অতিথি বলে কথা। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে ফেসবুকে ছবি ও লেখা পোস্ট হতে লাগলো। কেউ কেউ ছবির সাথে লিখলেন প্রচুর দর্শকের উপস্থিতিতে সফল এক অনুষ্ঠান স¤পন্ন হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, সকলেই মঞ্চের ছবি পোস্ট করে ধন্য হলেন। কেউ দর্শক সারির প্রচুর দর্শকের উপস্থিতির ছবি পোস্ট করলেন না। যদিও দর্শক আমিসহ মোট আটজন। এদিকে এক বেরসিক দর্শক কোনো এক সুযোগে দর্শক সারির ছবি উঠিয়ে নিয়েছিলেন কেউ বুঝতে পারেনি আমিও বুঝিনি। তিনি ওই অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতে শেষ পর্যন্ত বসে থাকা আমি সহ মোট পাঁচজনের ছবি পোস্ট করে দিলেন। তাতে কি হলো? ফেসবুকে প্রচারিত আয়োজক ও সম্মানিত মানুষের প্রচার করা প্রচুর দর্শকের উপস্থিতি সংক্রান্ত মিথ্যা গৌরবের হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে গেল। সর্বত্র আলোচনা চলতে লাগলো, ফেসবুকে যে দেখলাম মঞ্চে যে এতো এতো সম্মানিত মানুষ মাইকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করার স্থির চিত্র ও ভিডিও পোস্ট করে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর দিলেন, তাহলে তাদের এতোসব মহা মূল্যবান কথামালা শুনতে গিয়েছিলো কারা! দুই দিন পরে আমি সকালবেলা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। শুনতে পেলাম, আমার সামনে এক ভদ্রলোক মোবাইল ফোনে বলছেন, ভাইরে ভাই শুনেন, ঠিক আছে আমি আসবো আপনাদের অনুষ্ঠানে। কিন্তু দয়া করে মঞ্চে অতিথি পাঁচজন বা ছয়জনের বেশি রাখবেন না। আর একটা কথা, দুই-তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দুইজনের বেশি উপস্থাপক রাখবেন না। মঞ্চে উঠে চেয়ারে বসার জন্য এতো তাড়াহুড়ো করবেন না। এতে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য থাকে না এবং এসব নিয়ে লোকে হাসিঠাট্টা করে। শুনেন, এখনও-তো আমি ও আমার মতো আরও পাঁচজন বা ছয়জন দর্শক ও শ্রোতা পাচ্ছেন। এভাবে সকলেই মঞ্চে বসতে ব্যস্ত হয়ে গেলে একটা সময়ে হয়তো দেখতে পাবেন মঞ্চে কেবল আপনারাই বসে আছেন আর ওইদিকে দর্শক সারির চেয়ার খালি পড়ে আছে।
[মোহাম্মদ আব্দুল হক, কলামিস্ট কথাসাহিত্যিক]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স