সড়ক দুর্ঘটনা : ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সহায়তার উদ্যোগ প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
- আপলোড সময় : ২৫-০৯-২০২৫ ১২:০১:২৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৫-০৯-২০২৫ ১২:০১:২৯ পূর্বাহ্ন

সড়ক দুর্ঘটনা দেশের সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ, অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করছেন। এর মাশুল গুনতে হয় নিহত ও আহতদের পরিবারকে - যেখানে একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারালে গোটা পরিবার মানবেতর জীবনে ঠেলে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং মানবিক। নিহতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা এবং আহতকে অনুপাতে সহায়তা দেওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরিবার এই সহায়তার বিষয়ে জানেনই না। যাঁরা জানেন, তাঁদের অনেকেই আবেদন করতে পারেন না শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই মাত্র ১ মাসের মধ্যে আবেদন করার বাধ্যবাধকতার কারণে। এটি একদিকে অসহায় পরিবারের জন্য অন্যায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের মহৎ উদ্যোগও যথাযথ ফল পাচ্ছে না।
আমাদের সুনামগঞ্জের উদাহরণেই দেখা গেছে, ২০২৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমে অর্ধেকেরও বেশি পরিবার আবেদন করতে পারেননি কেবল প্রচারণার অভাব ও সময়সীমার সংকীর্ণতার কারণে। অথচ এই সহায়তা পাওয়া পরিবারগুলো স্বীকার করেছেন যে, দুঃসময়ে এ অর্থ তাঁদের জীবনে অক্সিজেনের মতো কাজ করেছে।
প্রশ্ন হলো- কেন এখনো এই উদ্যোগ জনগণের কাছে পরিচিত নয়? কেন এক মাসের মধ্যেই আবেদন শেষ করতে হবে, যেখানে পরিবার তখনও দাফন, শোক, আইনি প্রক্রিয়া ও মানসিক আঘাত সামলাচ্ছে?
এক্ষেত্রে আমাদের কিছু সুপারিশ হল- ১. আবেদনের সময়সীমা কমপক্ষে ৩ মাসে বৃদ্ধি করতে হবে। এতে ভুক্তভোগী পরিবার বাস্তবিকভাবে আবেদন করতে সক্ষম হবে। ২. বহুমুখী প্রচারণা চালাতে হবে। ইউনিয়ন-উপজেলা পর্যায়ে মাইকিং, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রচার এবং গণমাধ্যম ব্যবহার করে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। ৩. আবেদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ করতে হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা চালু করা উচিত। ৪. আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক গরিব পরিবার ফরম পূরণ বা কাগজপত্র সংগ্রহের ঝামেলায় পড়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের জন্য উপজেলা পর্যায়ে সহায়ক ডেস্ক থাকা প্রয়োজন।
একটি দুর্ঘটনা শুধু একটি প্রাণই কাড়ে না, ধ্বংস করে দেয় একটি পরিবারের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা। তাই এই পরিবারগুলোর প্রতি সহমর্মিতা দেখানো এবং সরকারি সহায়তাটি তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ যদি প্রচারণা ও বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে ভেস্তে যায়, তবে তা হবে এক করুণ ব্যর্থতা।
আমরা আশা করি, ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষতিপূরণ কার্যক্রমকে জনগণের কাছে সহজলভ্য ও কার্যকর করতে সরকার দ্রুত উদ্যোগ নেবে। নিহতের পরিবারের অশ্রু মোছার জন্য এটি শুধু অর্থ সহায়তা নয়, রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ও মানবিক কর্তব্য।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ