শহীদনূর আহমেদ::
বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না আসায় পানি সংকটে সুনামগঞ্জের শতাধিক হাওর। পর্যাপ্ত পানির অভাবে ব্যাহত হয়েছে মাছের প্রজনন। ফলে হাওর, নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে কমেছে মাছের উৎপাদন। ভরা মৌসুমেও হাওরে মাছ না পেয়ে জেলেদের চরম দুর্দিনে দিন কাটাতে হচ্ছে। এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। জীবন জীবিকার তাগিদে জেলেদের অনেকেই এখন ঢাকামুখী। হাওর অঞ্চলের এমন দুর্দিনের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতকে দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া প্রজনন মৌসুমে অবাধে মা ও পোনা মাছ নিধন, শুষ্ক মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা ও কীটনাশকের ব্যবহারে দিন দিন হাওর নদীতে মাছের উৎপাদন কমে আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে হাওর অঞ্চলের এমন নেতিবাচক প্রভাবে জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়লেও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা।
সম্প্রতি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরপাড়ের জেলেপ্রধান রায়পুর, বাহাদুরপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, দুই গ্রামের ৯৫ ভাগ পরিবারের জীবকা মৎস্য আহরণ। যাঁরা খরচার হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এবার হাওরে পানি কম থাকায় মাছের সংখ্যা কমে গেছে। দেরিতে পানি আসায় মাছ ডিম দিতে পারেনি। তাই ভরা মৌসুমেও মাছ ধরা পড়েনা জেলেদের জালে। মাছের উপর জীবিকার নির্ভরশীল পরিবারগুলো মাছ না ধরতে পারায় অর্থকষ্টে রয়েছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে মাছ ধরা ছেড়ে দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকার সন্ধানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় চলে গেছেন। চলতি বছরে দুই গ্রামের অন্তত ১৫ পরিবার জীবিকা পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রায়পুর গ্রামের জেলে মিনন্দ্র দাস বলেন, এবার হাওরে সময় মতো পানি আসেনি। পানি না আসায় মাছও কম হয়েছে। মাছ ধরতে বের হলে সারাদিনেও আশানুরূপ মাছ মিলেনা। খুব কষ্টে কাটছে আমাদের দিনকাল।
রথিন্দ্র দাস বলেন, আগের মতো মাছ না পাওয়ায় অনেকেই মাছ ধরে ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ ঢাকা চলে গেছে। আমাদের অবস্থাও খারাপ।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলায় জেলে রয়েছে ১ লাখ ১ হাজার। জীবিকা পরিবর্তন করায় দিন দিন এই সংখ্যা কমে যাচ্ছে। হাওরাঞ্চলের পানি কম আসা ও মাছের প্রজনন ব্যাহত হওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ি করেছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম। তিনি বলেন, এবার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। বৃষ্টিপাতের সাথে মাছের প্রজননের সম্পর্ক রয়েছে। সময় মতো মাছের প্রজনন না হওয়ায় মাছের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে এখানকার জেলেরা জীবিকা পরিবর্তন করছেন। আমরা চেষ্টা করছি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মাছের পোনা অবমুক্ত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে। পরিবেশ সংগঠক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরাঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশ ও জলজ উদ্ভিদ ও মাছ বিপন্ন হওয়ায় জেলেদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জেলেরা পেশা হারাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে হাওরাঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা রক্ষা ও পুনর্বাসনে সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের বরাদ্দ গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, হাওরাঞ্চলের মাছের উৎপাদন কমে আসছে। এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনসহ মনুষ্য অনেক কারণ দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জলাধারের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখা, ভরাট জলাশয় খনন ও মাছের অভয়াশ্রম তৈরির পাশাপাশি জেলেদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
হাওরে জলবায়ু অভিঘাত
কমছে মাছের উৎপাদন, পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা
- আপলোড সময় : ১০-০৯-২০২৫ ০৭:৪২:২৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৯-২০২৫ ০৭:৪৫:০৪ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ