স্টাফ রিপোর্টার ::
‘গরিব রোগিরা সরকারি আসপাতালে গিয়া অষুধ পায়না। বাইরে তনি বেশি দামে কিনে। আর আশপাতালে কোটি কোটি টেকার অষুধ নষ্ট অয়।’ সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কথা বলেন সুনামগঞ্জের পত্রিকার হকার সামায়ুন আহমদ।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের এমন ঘটনা জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। দাবি ওঠেছে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
এদিকে এ ঘটনার খবরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য পানিশমেন্ট হয়ে বদলি হয়ে যাওয়া হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুল আলম স্টোরে বিপুল ওষুধ মজুদের বিষয় জেনেও তার বিরোধীদের সঙ্গে রাগ দেখিয়ে এসব ওষুধ বিতরণ করেননি।
সম্প্রতি তাকে ঢাকায় বদলি করা হলে বিষয়টি সামনে আসে। বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার মূল্যবান ওষুধ প্রায় ৬ মাস আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এসব ওষুধ স্টোরে পড়ে আছে। বাক্স খোলাই হয়নি। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা একাধিক রোগি অভিযোগ করেছেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে মূল্যবান ওষুধ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ওষুধ কিনতে হয় রোগিদের। বিনামূল্যের এসব ওষুধ বিতরণ না করে স্টোরে জমিয়ে রাখা হয়। এসব ওষুধ অন্যত্র পাচার করার উদ্দেশে স্টোরে রাখা হয়েছিল এমনটাও মনে করেন অনেকে। কিন্তু সময় ও সুযোগ না পাওয়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে এখন নষ্ট হয়ে গেছে গরিবের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া সরকারি বিপুল ওষুধ। এন্টিবায়েটিক, শিশুর ওষুধ, গ্যাসের ওষুধসহ অন্তত ১২ ধরনের ওষুধের মজুদ ছিল। যা গত এপ্রিল, জুন এবং সর্বশেষ ৩১ আগস্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
জানা গেছে, সদর হাসপাতালে প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় দেড় হাজার রোগি সেবা নেন। ইনডোরেও ৩-৪শ রোগি থাকেন। কিন্তু তারা কাক্সিক্ষত সেবা পাননা। পাননা সরকারের বিনামূল্যের ওষুধও।
নানা অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ২৬ মে হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছিল। তারা স্টোরের যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের খাতায় গড়মিলসহ কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছিল। কয়েকজন কর্মকর্তা নানা অনিয়মে জড়িত এসব মন্তব্যও করেছিল দুদকের পরিদর্শক দল। এবার স্টোরে বিপুল পরিমাণ ওষুধের মজুদ থাকার পরও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাটি জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সুধীজন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বদলি হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায় মাহবুবুর রহমান স্বপন ইচ্ছে করে স্টাফদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। স্টোর কিপারের পদে একজন থাকার কথা থাকলেও, বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ৭ জন। যারা মূলত মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স। তিনি তাদের পছন্দ করে এখানে অন্যদের দায়িত্ব দিয়ে নিজেই নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন এমন অভিযোগ আছে।
তদন্ত দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, হাসপাতালের স্টোর রুমে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ওষুধ ছিল। যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কার্টন খোলাই হয়নি। আগের তত্ত্বাবধায়ক জেনেও বিষয়টি চেপে গেছেন। অথচ তিনি ইচ্ছে করলে বিনামূল্যের এই বিপুল অষুধের সদগতি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সদর উপজেলার বালিকান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অসুখ বিসুখে প্রায়ই কাহিল থাকি। হাসপাতালে এলে সব ওষুধ পাইনা। বাইরে থেকে কিনতে হয়। আর এখন শুনি কোটি কোটি টাকার ওষুধের মেয়াদ চলে গেছে। এর জন্য দায়ি কারা। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জের আরপিন নগরের বাসিন্দা ও শ্রমিক আন্দোলনের নেতা সাইফুল আলম সদরুল বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগি ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। আর আড়াই কোটি টাকার ওষুধ স্টোরে নষ্ট হয়ে গেছে। এর পিছনে কি রহস্য ও কারা দায়ি তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, স্টোরের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ সব বিষয়ে জানতে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি
সুনামগঞ্জ হাসপাতালে ১২ ধরনের আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ
- আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ১২:১৪:০১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ১২:১৯:২৬ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ