কারাগারে নিরাপত্তার চাদরে ‘রাজসাক্ষী’ সাবেক আইজিপি মামুন
- আপলোড সময় : ২৭-০৮-২০২৫ ০৯:৩২:৪৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৭-০৮-২০২৫ ০৯:৩২:৪৯ পূর্বাহ্ন

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিশেষ কারাগারে অন্যসব প্রভাবশালী বন্দির চোখের আড়ালে রয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। কর্মজীবনে যেমন বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢেকে ছিলেন তিনি, বন্দিজীবনেও সেই একই নিরাপত্তার চাদরেই আছেন। তবে পার্থক্য একটাই- এবার তার চারপাশে পাহারা দিচ্ছেন কারারক্ষীরা। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়া এই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এখন সম্পূর্ণ গোপনীয়তা ও বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ বিশেষ কারাগারে আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ অন্তত ৬৫ জন প্রভাবশালী বন্দি। কিন্তু তাদের সবার থেকে আলাদা রাখা হয়েছে সাবেক আইজিপিকে। কারা সূত্র বলছে, মামুনকে রাখা হয়েছে একটি ভবনে স¤পূর্ণ একাকী। সেখানে অন্য কোনো বন্দি প্রবেশ করতে পারেন না। এমনকি দূর থেকেও তাকে দেখা যায় না। ফলে একই কারাগারে থাকা প্রভাবশালী রাজনৈতিক বন্দিরাও জানেন না, তিনি কারাগারের কোন অংশে রয়েছেন কিংবা আদৌ সেখানে আছেন কিনা।
বিশেষ সূত্রে আরও জানা গেছে, সাবেক আইজিপির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন কিছু সাধারণ কয়েদি। তারা কাজের ফাঁকে তার সঙ্গে আলাপচারিতা করেন। কর্মজীবনে যেমন নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ছিলেন মামুন, বন্দিজীবনেও সেই বেষ্টনী অটুট রাখা হয়েছে। আদালতে নেওয়ার সময়ও তাকে একা প্রিজন ভ্যানে আনা-নেওয়া করা হয়।
কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকা অন্য রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান প্রমুখ। তবে তারাও জানেন না, রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি কোথায় আছেন। কারা কর্তৃপক্ষের এমন গোপনীয় ব্যবস্থাপনা থেকেই বোঝা যায়, তাকে কতটা উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্যে রাখা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন কেরানীগঞ্জ কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার। কথা হলে সোমবার (২৫ আগস্ট) তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কারাগারে সব বন্দিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। ২৪ ঘণ্টা কারারক্ষী এবং কর্মকর্তারা নজরদারিতে থাকেন। পাশাপাশি আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসও ব্যবহৃত হয়।
তিনি বলেন, রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে বিশেষ কারাগারে আলাদা রাখা হয়েছে। অন্যান্য বন্দিরা তো দূরের কথা, সেখানে নির্দেশনা ছাড়া কারারক্ষী বা কয়েদিরাও যেতে পারে না। তিনি ডিভিশনপ্রাপ্ত কারাবিধি অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। বিশেষ ভবনে কাজ করার জন্য যে কয়েদিরা নিয়োজিত, তারাও কেবল নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।
উল্লেখ্য, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ৩১তম মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে গত ১০ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।
সেদিন দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দায় স্বীকার করে এমন বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় ট্রাইব্যুনাল তার রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সে সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে কথা বলার সুযোগ দেন। এসময় চৌধুরী মামুন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে বক্তব্য রাখেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল ৫টি অপরাধে অভিযোগ গঠন করে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
তার আগে গত ১৭ জুন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে জানানো হয়।
গত ১ জুন জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিন আদালতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম। যা সব গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। - বাংলানিউজ
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ