জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ::
হাওরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বর্ষায় চারপাশ থাকে পানিবন্দি। সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এসব এলাকার মানুষের জরুরি সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে নৌ অ্যাম্বুলেন্সের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারের উদ্যোগে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া চারটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স একদিনের জন্যও ব্যবহার হয়নি।
২০১৩ সালে তাহিরপুরে এবং ২০১৯ ও ২০২০ সালে অন্যান্য উপজেলায় আধুনিক সুবিধাসংবলিত নৌ অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হলেও সেগুলো আজ পর্যন্ত অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও নদীতে, কোথাও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে বা থানার সামনে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে মূল্যবান এ যানগুলো। দীর্ঘদিন অযতœ-অবহেলায় যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এসিসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স ৬১ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে সরকার ক্রয় করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিলেও প্রত্যন্ত এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষজন এর সুফল পায়নি। নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার পর থেকে চালক নিয়োগ ও জ্বালানি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে এগুলো কখনো ব্যবহারযোগ্য হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এ নৌ অ্যাম্বুলেন্স তারা কখনো চোখেই দেখেননি, শুধু লোকমুখে শুনেছেন। অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে আজও ভাড়া করা ছোট নৌকায় জীবন ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়।
ধর্মপশা উপজেলার গাছতলা এলাকার বাসিন্দা জীবন মিয়া জানান, নৌ-অ্যাম্বুলেন্স এইটা কি জিনিস তাই তো চিনি না, এর সুবিধা কিভাবে পাবো। আমরা গরীব মানুষ অসুস্থ হলে আর জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতে চাইলে নিজেদের বা ভাড়া করা ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করি।
শাল্লা উপজেলার বাসিন্দা আমিন মিয়া জানান, বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। হাসপাতালে বা যেখানেই যেতে হয় নৌকায় করে যেতে হয়। সরকারি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে একটা, এটা তো কখনোও রোগী নিয়ে চলাচল করতে দেখিনি। আমাদের এলাকার কারো উপকারে আসেনি। যদি চালু থাকতো তাহলে আমাদের উপকার হতো।
তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা সাবিকুন নাহার জানান, আমরা বছরের ৬-৭ মাস নৌকা দিয়ে হাসপাতালে আসা যাওয়া করি। টাকা থাকলেই তো চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। রাতে অসুস্থ হলে সকাল ছাড়া কোনো উপায় নেই হাসপাতালে যাওয়ার। নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কি জিনিস চোখেই দেখেনি, এর সেবা পাবো কিভাবে। তবে লোকমুখে শুনেছিলাম নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের কথা।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানান, দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় নৌ অ্যাম্বুলেন্সের সুফল ভোগ করতে পারেনি হাওরাঞ্চলের মানুষজন। যদি চালু থাকতো তাহলে জরুরি প্রয়োজনে কাজে লাগতো। আর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই নৌ অ্যাম্বুলেন্সগুলো এখন বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা অপচয় হয়েছে।
শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচএফপিও ডা. দেবব্রত আইচ মজুমদার জানান, নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি একবারেই অকেজো হয়েগেছে আর শুরু থেকে এটি কোনো কাজেই আসে নি। যন্ত্রপাতি বোট থেকে খোলে আনার সুযোগ ছিলনা তাই সেভাবেই আছে। এর বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।
ধর্মপাশা উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচওএফপিও ডা. সুবীর সরকার জানান, আমি গত আট মাস আগে যোগদান করেছি। নৌ অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচওএফপিও ডা. মির্জা রিয়াদ হাসান জানান, নৌ অ্যাম্বুলেন্স যখন দেয়া হয়েছিল, তখন থেকেই চালক নেই, দেয়া হয়নি জ্বালানি বরাদ্দ। যার ফলে একদিনের জন্য রোগীদের কাজে আসেনি এটি। আর মেরামতের জন্য বার বার বললেও কোনো বরাদ্দ আসেনি। নৌ অ্যাম্বুলেন্সটির যন্ত্রাংশ বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচওএফপিও মইন উদ্দিন আলমগীর জানান, ২০২০ সালে দেয়া হয়েছিল। চালক দেয়া হয়নি, একদিন গাড়ির চালককে দিয়ে চালানোর পর নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে মেশিনগুলো নষ্ট হয়েই পড়ে রয়েছে। নৌ অ্যাম্বুলেন্স বডি থানায় সামনে রাখা আছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জসিম উদ্দিন জানান, নৌ অ্যাম্বুলেন্স ভালোর জন্য দেয়া হলেও তা কোনো কাজে আসেনি মানুষের। শুরু থেকে চালক দেয়া হয়নি, ছিলনা তেলের বরাদ্দও। এছাড়াও এই নৌ অ্যাম্বুলেন্স পরিবহন ব্যয় বহুল। যার খরচ হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের বহন করা সামর্থ্যের বাইরে। এখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা হলে প্রত্যন্ত এলাকার গরিব মানুষের উপকার হতো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স অকেজো একদিনও সেবা পায়নি চার উপজেলার মানুষ
- আপলোড সময় : ২২-০৮-২০২৫ ০৯:২৫:০৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৮-২০২৫ ০৯:৩২:০৮ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ