বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনটি বাইরে থেকে দেখলে রঙচঙা মনে হলেও চরম নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ভবনের নির্মাণকাজে শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্টরা ছিলেন নীরব। পাইলিং, ঢালাই, গাঁথুনি থেকে শুরু করে ফিনিসিং পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধাপেই নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করেছেন ঠিকাদার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটির কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকির কাজে নিয়োজিতরা বিষয়টি পাশ কাটিয়ে গেছেন। যার ফলে নির্বিঘেœ ভবন নির্মাণকাজে নিম্মমানের উপকরণ ব্যবহার করে এখন তড়িঘড়ি করে বুঝিয়ে দেওয়ার তব্দির শুরু করেছেন ঠিকাদার। সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরিনা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ হয়নি। নিম্নমানের কাজের কারণে নির্ধারিত সময়ের পরও কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এখন কাজটি বুঝিয়ে দিতে তদবির শুরু করেছে নানাভাবে। ভবন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সর্বশেষ ফ্লোরের মাঝখানে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। সঠিক নির্মাণকৌশল অনুসরণ না করায় ছাদে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। রঙের কাজেও অনিয়ম হয়েছে। প্রাক্কলনে যে ধরনের ওয়েদারকোট রঙের কথা থাকলেও হালকা মানের রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। প্লাস্টার করা হয়েছে বালুর বদলে ভিটবালু দিয়ে। প্লাস্টারের পর কিউরিং করার করার কথা থাকলেও কিউরিং করা হয়নি। সরেজমিন দেখা যায়, সিঁড়ির রেলিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে নিম্নমানের পাতলা এসএস স্টিল, যা ইতোমধ্যে জং ধরে কালচে হয়ে গেছে। জানালার গ্রিলের নির্ধারিত মান অনুসরণ করা হয়নি। বাথরুমে ফিটিংস, পাইপ, বেসিন ও কমোড, দরোজাসহ অন্যান্য সামগ্রীতেও ডিটেইলস ইস্টিমেড অনুযায়ী উপকরণ দেওয়া হয়নি। পুরো ভবনের কাজে নিম্নমান বজায় রাখা হলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা ছিলেন নীরব। কাজ নিয়মিত দেখেছেন স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলজিইডি কার্যালয় ভবনের মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে অবস্থান করলেও প্রকল্পটির সঠিক তদারকি করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে দায়সারা কাজের সুযোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র আহমদ নূর বলেন, উপজেলা পরিষদ ভবনের নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজও হয়নি। তাছাড়া সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। তাছাড়া পুরো ভবনের কাজ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হেমায়েত দাবি করেন, ‘আমি যথাযথভাবে কাজ করেছি। শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বুধবার এসে দেখা করে কথা বলবো।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী সুব্রত দাস বলেন, আমরা নতুন এসেছি। অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজটা শেষ করতে হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার রহমান বলেন, আমিও নতুন এসেছি। কাজ হয়েছে আগে। আমরা এসে তাদেরকে চাপ দিয়ে কাজটি শেষ করিয়েছি। ছাদের মধ্যখানে পানি জমে রয়েছে, ভবন নষ্ট হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সমস্যা না। আরেক ঠিকাদারকে দিয়ে উপরে আলাদাভাবে নতুন বরাদ্দ দিয়ে কাজ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
সময় বাড়িয়েও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি, এখন গছিয়ে দিতে তদবির চলছে
সদর উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
- আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৫ ০৯:২৮:২৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৮-২০২৫ ১২:১৬:৩০ অপরাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ