শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জের সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে সড়কে নির্বিঘেœ চলাচল করছে এসব যানবাহন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ দূরে থাক, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংখ্যা। সড়কের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি এসব পরিবহন চলাচল করায় বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। কার আশকারায় সড়কে বাড়ছে এসব যানবাহনের দৌরাত্ম্য - এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
যাত্রীদের অভিযোগ- এ বিষয়ে স্থানীয় বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের লোকদেখানো অভিযান ও নীরবতার কারণে এসব যানবাহনের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
সুনামগঞ্জের মহাসড়কে সাম্প্রতিক অধিকাংশ দুর্ঘটনার পেছনেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র বলছে, সুনামগঞ্জ জেলায় বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদিত সিএনজি রয়েছে ৪ হাজার ৬০০। বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি। জেলার মহাসড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কে প্রায় ১৫ হাজার সিএনজি চলাচল করছে বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র।
জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোতে ১০ হাজারের অধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৪৭(২) ধারা অনুযায়ী মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। এই ধারায় ‘সড়ক বা মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী’ যানবাহনের সংজ্ঞায় নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান এবং সরকার বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নিষিদ্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করা অনুরূপ যানবাহনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অথচ সুনামগঞ্জের জেলা শহর ও উপজেলা শহরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইজিবাইক ও অটোরিকশা। এর চালকদের অধিকাংশই অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা তাদের মধ্যে প্রকট। এছাড়া অটোরিকশাগুলোর দ্রুতগতি সম্পন্ন বাস, ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা, মহাসড়কে হঠাৎ ইউটার্ন নেওয়া, উল্টোপথে প্রবেশ, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোর চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংশ্লিষ্টতা উদ্বেগজনক হারে বেশি, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীরা আহত হচ্ছেন অথবা প্রাণ হারাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ, হাসপাতাল ও গণমাধ্যমের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হলেও, তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী কোনো ফল বয়ে আনছে না। অভিযান শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি আবার আগের মতো হয়ে যায়। যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, এই অভিযানগুলো কেবল সাময়িক পদক্ষেপ মাত্র। অনেক ক্ষেত্রে অভিযানের খবর আগে থেকেই চালকদের কাছে পৌঁছে যায়, ফলে তারা অভিযান চলাকালীন মহাসড়ক এড়িয়ে চলেন এবং অভিযান শেষে আবার পুরোদমে চলাচল শুরু হয়। সূত্র বলছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকদের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের মধ্যে উৎকোচ লেনদেন হওয়ায় অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। নিরাপদ সড়ক চাই,
সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি ওবায়দুল হক মিলন বলেন, সুনামগঞ্জের সড়কপথ অনুমোদনহীন সিএনজি ও অবৈধ অটোরিকশার দখলে। নিষিদ্ধ পরিবহন কিভাবে সড়কে চলাচল করে তা আমাদের বুঝে আসছে না। প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব অবৈধ যান। এর নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ফিটনেসবিহীন পরিবহন, লাইসেন্সবিহীন চালক ও ট্রাফিক আইন না মানায় বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সড়কপথ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত করবে।
জয়কলস হাইওয়ে থানার ওসি সুমন কুমার চৌধুরী বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধে আমরা হার্ডলাইনে রয়েছি। অবৈধ সিএনজির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিদিনই মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে।
এদিকে, অনুমোদনহীন পরিবহনের বিষয়ে জানতে সুনামগঞ্জ বিআরটিএ’র দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুর রশীদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
সড়ক-মহাসড়কে অটোরিকশার দাপট
- আপলোড সময় : ১২-০৮-২০২৫ ০৮:৪৭:২১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১২-০৮-২০২৫ ০৮:৫১:৩৮ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ