পথে যেতে যেতে : পথচারী
- আপলোড সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ১২:৩০:১০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ১২:৩০:১০ পূর্বাহ্ন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। সৃষ্টি হয়েছিল নতুন এক ইতিহাস।
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এই দীর্ঘ সময় ধরে অনেক ভালো কাজ করেছিল দলটি। কিন্তু কিছু অনিয়ম করার কারণে তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করেছিল। এ সময় যথেষ্ট পরিমাণে উন্নয়ন হয়েছে দেশে। যোগাযোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে এ সময়। উল্লেখ করতে গেলে বলতে হয়- বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, ন্যায্যমূল্যে টিসিবি’র পণ্য - এ ধরনের অনেক সুবিধা চালু হয়েছিল। উড়াল সেতু, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল এ রকম বহু উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা যায়। তবে এ সময় দলটির কতিপয় নেতার লাগামহীন কথাবার্তা সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। তোফায়েল আহমদ, হাসান মাহমুদের মতো নেতারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে আচরণ করেছেন দায়িত্বহীনতার মতো। প্রধানত দেশের বৃহৎ বিরোধী দলসমূহকে তারা সম্মান জানানো তো দূরের কথা, পাত্তাই দেয়নি। দেশের অর্থ ব্যবস্থার ব্যাপক যাচ্ছেতাই ব্যবহার অর্থনীতিকে একেবারে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছিল। শেয়ার মার্কেট লুট, ব্যাংক লুট, ঋণখেলাপি চরম আকার ধারণ করেছিল। দলীয় নেতাকর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্মীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বেপরোয়া কার্যক্রম সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।
নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয়। আওয়ামী লীগের এ সময় ৩টি নির্বাচন যেমন ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচন ছিল প্রহেলিকার। সাধারণ মানুষ তাদের ভোট দিতে পারেনি। ২০১৪ নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু শেখ হাসিনার বিবেকবোধ ন্যূনতম কাজ করেনি। পার পেয়ে গেলেন দিব্যি। বিরোধী দল আন্দোলন করলো নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য। কাজ হলো না। আওয়ামী লীগের নেতারা ভাবল নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তো তারা নির্ঘাত ধরা খেয়ে যাবে। চলতে থাকলো আন্দোলন, চলতে থাকলো ধরপাকড়। কথা বললেই মামলা।
আসলো ২০১৮ নির্বাচন। নির্বাচনে আহ্বান জানানো হলো বিরোধী দলকে। সরল বিশ্বাসে অংশ নিলো বিরোধী দল। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ভোটটা যথা নিয়মে না হয়ে হলো অন্যভাবে। তা হলো দিনের ভোট রাতে। গোয়েন্দা বাহিনীর সহযোগিতায় রাত ৩টায় হয়ে গেল ২০১৮ সালের ভোট। সাধারণ মানুষ রয়ে গেল অন্ধকারে। এটি যে দেশের জন্য কত ক্ষতিকর ছিল তা ইতিহাস সাক্ষী। ক্ষমতায় এলো আবার আওয়ামী লীগ। তাদের আর পায় কে? চলতে থাকলো তাদের স্বৈরাচারী শাসন। সৃষ্টি হলো ‘আয়নাঘরের’। আসলো ২০২৪। এই নির্বাচন হলো আমি-মামী-ডামি নির্বাচন। অর্থাৎ কে সরকারি দলের প্রার্থী, কে বিরোধী দলের প্রার্থী বুঝা গেল না কিছুই। এর আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন দলের ২৪ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে হয়ে গেল ২০২৪-এর নির্বাচন। এমন নোংরামি হলো এই নির্বাচনে যা ইতিহাসে বিরল। অর্থাৎ দলের মনোনীত ব্যক্তির পাশাপাশি দলের অন্যরাও অংশ নিতে পেরেছে ওই নির্বাচনে। ফলে মূল প্রার্থী পরাজিত হলে নির্দলীয় প্রার্থী জয়ী হয়ে দলে ভিড়তে পেরেছে। ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগেরই জয়। বলা হলো এই নির্দলীয় প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামী লীগ তো কোন দিনও নির্বাচনে পরাজিত হবে না। ২০৪১ পর্যন্ত তারা ঘুরেফিরে ক্ষমতার মসনদে থাকতে পারবে। তাদের আর পায় কে? এটিই ছিল শেখ হাসিনার মূল চাবিকাঠি। ফলে তারা হয়ে উঠলো চরম ফ্যাসিবাদী। তাই জুলাই/২০২৪-এ কোটাবিরোধী বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনকে তারা গুরুত্ব দেয়নি। পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ