সুনামগঞ্জ , মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ , ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত : কয়ছর এম আহমদ বিশ্বম্ভরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শান্তিগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয় : তারেক রহমান সত্যশব্দের বর্ষার আয়োজন ‘বাদল গেছে টুটি’ দিরাই থানা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইউকের ফ্যামিলি গ্যাদারিং অনুষ্ঠিত জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে : কয়ছর এম আহমেদ জামালগঞ্জে উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিদর্শনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা তাহিরপুরে তোপের মুখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শান্তিগঞ্জে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না, এই দেশ সবার : সেনাপ্রধান বর্ণাঢ্য আয়োজনে জন্মাষ্টমী উদযাপিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদের ‘সাহিত্য আড্ডা’ অনুষ্ঠিত ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু-সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে : ধর্ম উপদেষ্টা ভোট গণনার আগ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আছে : গয়েশ্বর রায় বেহাল সড়কে স্কুলে যেতে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

ঐক্যের বদলে রাজনীতির মাঠে বিভাজন

  • আপলোড সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০৬:১৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০৬:১৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
ঐক্যের বদলে রাজনীতির মাঠে বিভাজন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে একমুখী ছিল সব পক্ষ। বছর খানেক আগের সেই আন্দোলনে ডান, বাম, মধ্যম, ইসলামপন্থিসহ সব পর্যায়ের শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য গড়ে উঠেছিল। সময়ের পরিক্রমায় নানা ইস্যুতে সেই ঐক্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। রাজনীতির মাঠে অনৈক্যের সেই সুর ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে ভোটের হিসাব-নিকাশ যত এগিয়ে আসছে, বিরোধ ততই প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটের অধিকারসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যারা রাজপথে শামিল ছিলেন, মাত্র ১ বছরের মাথায় এসে তারা এখন একে অপরকে নিশানা বানাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলগুলোর পর¯পরবিরোধী অবস্থান, বিচার-সংস্কার ও নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কখনো জুন, কখনো এপ্রিল এবং সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের ইঙ্গিত এলেও এর কোনো নির্দিষ্ট রোডম্যাপ এখনো দেওয়া হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন যদিও জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল সময়কালকে সামনে রেখে প্রস্তুতি চলছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সংশয় প্রকাশ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করেন, ৫ আগস্টের আগে যে লক্ষ্যে তারা এগিয়েছিলেন, সেটি দিন যত যাচ্ছে ততই ফিকে হচ্ছে। কারণ বছরখানেক আগের সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব পক্ষের মূল লক্ষ্য ছিল, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সংসদ নির্বাচন অনিবার্য। যার মধ্য দিয়ে জনগণ তার প্রতিনিধি ঠিক করবে। সেই ভোটের দিনের ক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং অনৈক্যের খবর পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের আগে একটির পর একটি ইস্যুকে সামনে আনা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হবে কি না, সেই বিষয়ে ¯পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং রাজনীতির মাঠ পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে সরগরম রাখা হচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি মনে করছে, সংস্কার-বিচার ইস্যুতে নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আরও কঠোর ভাষায় বলেছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কিসের? কী নির্বাচন হবে? এ জন্য আগে নির্বাচনের পরিবেশ অবশ্যই তৈরি করতে হবে।’ অন্যদিকে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, আগে জুলাই হত্যাকা-ের বিচার ও সংস্কার। তারপর নির্বাচন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সংস্কার, বিচার এবং পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর এমন পর¯পরবিরোধী বক্তব্যে সংশয় বা অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতি। বিএনপি এই পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করে বলছে, এটি রাজনৈতিক বিভাজন এবং অস্থিতিশীল সরকারের পথ প্রশস্ত করবে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই পদ্ধতি নির্বাচনের আড়ালে দেশে পতিত স্বৈরাচারের পথ সুগম করে দিতে পারে।’ জানা গেছে, জামায়াত, এনসিপি, খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলনসহ বেশকিছু ইসলামি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইসিতে বর্তমানে নিবন্ধিত ৫০টি দলের মধ্যে ১৮টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে, ২৮টি বিপক্ষে এবং চারটি এখনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি। একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ কয়েকটি মিত্র দলের আসন ভাগাভাগি নিয়েও অস্থিরতা বিরাজ করছে। জামায়াত-এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সম্প্রতি নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিএনপিকে বাদ রেখে জনসমাবেশ করেছে, যা রাজনৈতিক দূরত্বের প্রমাণ। বিশেষ করে, গত ১২ জুন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যৌথ ঘোষণা দেওয়ার পর পারিপার্শ্বিক আপত্তি উঠেছে। জামায়াত-এনসিপি ঘোষণা নিয়ে সরাসরি আপত্তি জানায়। ফলে এক সময়কার ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদলগুলোর মধ্যে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে। কিছুদিন আগেও যে দলগুলোর মধ্যে নৈকট্য ছিল, আজ তা আর বহাল নেই। এক সপ্তাহ আগের সম্ভাবনা পাল্টে যাচ্ছে ‘না’ তে। ছোট ছোট অনেক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণে এদের অবস্থান কী হবে তা অনিশ্চিত। তবে কারও মতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মত এবং কার্যকলাপ থাকে। এখনো সে রকমই হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেন, ষড়যন্ত্র চলছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রের পথে অবিচল থাকবে। এই গণতন্ত্রের জন্য স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়ে মাঠে আন্দোলন করেছে। সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব দেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনার অনুসারীরা রাস্তায় মিছিল বের করার সাহস দেখাচ্ছে। কিন্তু তা সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না সরকার। জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের আন্দোলনে যেসব দল একত্রিত ছিল, তাদের মধ্যে এখন বিভেদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, সরকার সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছে না। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমার কথা বলা হলেও কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছে। কেউ কেউ নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে, যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের তাদের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িক নিষিদ্ধ করেছে গণহত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে। রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামি দলগুলো সক্রিয়। তবে দীর্ঘদিনের মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব এবং পারস্পরিক সন্দেহ রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। বিএনপিসহ দলগুলো নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করছে। এনসিপিও নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে পদযাত্রা, সমাবেশ-গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে। জামায়াত ইসলামীর নেতারাও সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনও বিশাল সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠের বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে অনৈক্যের সুর পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন নিয়ে দলগুলো এখনো সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছে না। দীর্ঘদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণতন্ত্রের লড়াই করা দলগুলো এখন একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। ‘ঐক্য থেকে অনৈক্যের পথে’ দেশীয় রাজনীতির এই যাত্রা শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্যও একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি করছে। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দরকার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ, কার্যকর সংলাপ এবং সর্বদলীয় সমঝোতা। অন্যথায় সামনে বড় রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে। -দেশ রূপান্তর

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল

প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল