শিশু-কিশোরদের দিয়ে মাদক বিক্রি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন
- আপলোড সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০৫:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০৫:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন

তাহিরপুরের নয়নাভিরাম পর্যটন স্পটগুলো- টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, যাদুকাটা নদী, বারেকটিলা, শিমুল বাগান, লাউড়েরগড় এখন শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নয়, হয়ে উঠেছে একটি ভয়ংকর সামাজিক অপরাধের কেন্দ্রস্থল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে এসব স্পটে শিশু-কিশোরদের দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি করানো হচ্ছে - এটা নিছক একটি অপরাধের খবর নয়, এটি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গভীর ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
প্রতিদিন হাজারো পর্যটক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাওরের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক কারবারিরা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় মদ প্রবেশ করিয়ে শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে তা বিক্রি করছে। ছোট নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে মাদকের সঙ্গে কিশোরের সংশ্লিষ্টতা এবং ট্যাকেরঘাটে পর্যটকের কাছ থেকে ভারতীয় মদ উদ্ধার হওয়ার ঘটনা বিষয়টির ভয়াবহতাকেই আরও স্পষ্ট করেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- এই ভয়ঙ্কর কারবারে ব্যবহার করা হচ্ছে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের। যারা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি জীবনের মূল উদ্দেশ্য, তারা এখন অপরাধজগতের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। এ প্রজন্ম যদি এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তবে জাতির ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? শিশুশ্রম নয়, বরং এটি শিশু-অপরাধ ব্যবহারের মারাত্মক উদাহরণ, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
তাহিরপুর নৌ-পর্যটন সমবায়ের নেতৃত্ব যেমন জানিয়েছেন, পর্যটকরা মদ চাইলেও হাউসবোট চালকরা না করে। অথচ মাদকচক্র স্থানীয় শিশু-কিশোরদেরকে সামনে রেখে এই অনৈতিক চাহিদা পূরণে তৎপর। এখানে দায় এড়াতে পারে না প্রশাসনও। অপর্যাপ্ত নজরদারি, দুর্বল গোয়েন্দা তৎপরতা এবং স্থানীয় পর্যায়ের অসহযোগিতা এই চক্রকে আরও বেপরোয়া করে তুলছে।
তাহিরপুর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র তার বিপরীত। অভিযান কিংবা অপরাধীদের আটকের চেয়ে আরও জরুরি- এই মাদক সরবরাহের উৎস, ব্যবস্থাপনা ও মূল হোতাদের চিহ্নিত করে শক্ত হাতে দমন করা। পাশাপাশি শিশুদের সুরক্ষা, পুনর্বাসন এবং এই বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নয়, এই দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পর্যটন সংগঠন, অভিভাবক সমাজ এবং সচেতন নাগরিকদেরও নিতে হবে।
আমরা মনে করি, পর্যটনশিল্পের সুনাম ও ভবিষ্যৎ যদি ধরে রাখতে চাই, তবে তাহিরপুরসহ দেশের সকল পর্যটন এলাকায় অবিলম্বে মাদকদ্রব্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধ করতে হবে। এবং সর্বাগ্রে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করে যারা এই ঘৃণ্য অপরাধে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ