শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। আঞ্চলিক মহাসড়কসহ জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছেন পথচারী, পরিবহন শ্রমিকসহ যাত্রীসাধারণ। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা নবজাতকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চলতি বছরে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে সচেতনমহল। অপ্রশস্ত ও অনুন্নত সড়কপথ, ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন চলাচল, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বেপরোয়া গতি, অসচেতনতা, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিংসহ ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রতিপালন না হওয়াকে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্যে দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ট্রাফিক বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশসহ গণমাধ্যম সূত্র জানাযায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-রাণীগঞ্জ সড়ক, দিরাই-মদনপুর সড়কসহ জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪০টি। বেশি দুর্ঘটনা পতিত হয়েছে দুই চাকার মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকসা। এছাড়াও যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়তে দেখা গেছে। ছোট বড় এসব দুর্ঘটনায় চালক, পথচারীসহ প্রাণ ঝরেছে অন্তত ৪৪ জনের। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। সর্বশেষ ৩১ জুলাই সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের চেচান এলাকায় পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আবু সালেক নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ওইদিন বিকেলে তিনি ছাতক থেকে তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে ফিরছিলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন পিকআপ ভ্যানের বেপরোয়ার গতির কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২৪ জুলাই শান্তিগঞ্জ উপজেলার দিরাই-মদনপুর সড়কে সিএনজি অটোরিকশা ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজি চালকসহ প্রাণ গেছে ৪ মাস বয়সী এক নবজাতকের। এতে আহত হয়েছেন শিশুটির মা-সহ অন্তত ৮ জন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সচেতনমহল জানিয়েছেন, দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে সুনামগঞ্জের সড়কপথ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা এবং চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন ব্যক্তিবর্গ। সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট আমিরুল হক বলেন, যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে, সেটি নিরাপদ সড়কের অন্তরায়। যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সন্দিহান থাকেন। সড়কে অবৈধ যানের পাশাপাশি অদক্ষ চালকের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এটি এখনই থামাতে হবে। সমাজকর্মী নোহান আরেফিন নেওয়াজ বলেন, সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। প্রশাসনকে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ বলেন, প্রতিটি সড়ক দখল করে রেখেছে অনুমোদনহীন যানবাহন। ট্রাফিক বিভাগ অকার্যকর। সড়কে সিএনজি অটোরিকসা-লেগুনা রাখা হয়, তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিআরটিএ’র অনুমোদনহীন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এটি কিভাবে সম্ভব? এ কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের টিআই মো. হানিফ মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জে দুর্ঘটনা বেড়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে আমরা চালকদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
জেলায় ৭ মাসে ৪৪ জনের মৃত্যু
সড়ক নিরাপদ হবে কবে?
- আপলোড সময় : ০১-০৮-২০২৫ ০২:০৪:৫১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০১-০৮-২০২৫ ০২:২১:৩০ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ