সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫ , ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দেশে যেন উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে : তারেক রহমান পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে যুবক নিহত জামালগঞ্জের ৬ ইউনিয়নে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘিরে সমালোচনা বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে হবে : আনিসুল হক হাওরের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা চাই: সালেহিন চৌধুরী শুভ ১০২ এসিল্যান্ড বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সাচনা বাজারের হাসপাতাল চালুর দাবি অদম্য মেধাবী অর্পা’র স্বপ্নযাত্রা কি থেমে যাবে? গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে : প্রধান উপদেষ্টা সাগরপথে ইউরোপে যান সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রতিবাদে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের বিক্ষোভ জগন্নাথপুরে ৩ আসামি গ্রেফতার হাওরে পানি নেই, সংকটে কৃষি ও মৎস্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিভে গেল আরও এক শিক্ষার্থীর জীবন প্রদীপ খেলাধুলাই পারে মাদকের ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে : কয়ছর এম আহমদ সুবিপ্রবি’র স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরে বাস্তবায়নের দাবি দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২ টাঙ্গুয়ার হাওরে ১২টি হাউসবোটকে দুই লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

হাওরের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা চাই: সালেহিন চৌধুরী শুভ

  • আপলোড সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ১২:৫৮:৪০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ০৭:২৩:১৪ পূর্বাহ্ন
হাওরের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা চাই: সালেহিন চৌধুরী শুভ
হাওর এক ধরনের স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক স্বত্বা, যা জমি, বিল ও কান্দার সমন্বয়ে গঠিত। যা বর্ষাকালে পানিতে একাকার হয়ে বিশাল জলরাশিতে পরিণত হয়। অন্যান্য জলাভূমির চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হাওরগুলো একসময়ের অখন্ড- কালিদহ সাগরের এক একটি অংশ। অখন্ড জলাশয়ে ছিল অসংখ্য চর ও কান্দা। এসবের মধ্যে বসতি স্থাপনের পর জনবসতিগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গ্রাম গঠিত হয়। পরবর্তীতে গ্রামের সাথে গ্রাম যুক্ত হওয়ার জন্য তৈরি করা হয় রাস্তা। কালক্রমে গ্রামকে কেন্দ্র করে শহর বন্দরও গড়ে উঠে। এভাবেই অখন্ড- জলাশয় ভাগ হয়ে যায়, তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্ন হাওর।
বর্ষায় ছোট বড় হাওরগুলো যুক্ত হয়ে মিশে যায়। তখন উপর থেকে দেখলে সাগরের মতো এবং শহর-গ্রামগুলোকে দ্বীপ মনে হয়। হাওরসমূহের মধ্যবর্তী সমভূমি, জনবসতি, গ্রাম-শহর, হাওরসমূহের তীরবর্তী সমভূমি ও পাহাড়ি ভূমি, হাওর নির্ভর অঞ্চলসমূহসহ
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭ জেলাকে একত্রে হাওরাঞ্চল নামে অভিহিত করা হয়। জেলাগুলো ৪টি প্রশাসনিক বিভাগের অধীনে হলেও পরস্পরের সাথে যুক্ত। হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলছে। হাওরাঞ্চলের যেকোন উন্নয়ন পরিকল্পনায় হাওরের বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক অবস্থান ও ক্রমবিকাশকে বিবেচনায় রাখতে হবে। হাওর ও হাওরাঞ্চলের ভিন্নতা বিবেচনায় রেখে স্পষ্ট করতে হবে কোন পরিকল্পনা শুধু হাওরের জন্য আর কোনটি হাওরাঞ্চলের জন্য।
হাওরগুলো বেসিনের মতো, চতুর্দিকে উঁচু ভূমি ক্রমশ নিচু হয়ে গেছে। চতুর্দিকের উঁচু ভূমি যা কান্দা নামে পরিচিত এবং মাঝখানে বিল নামক জলাশয় যেখানে সারাবছর পানি থাকে। আবার অনেক হাওরের মাঝখানে বা ভিতরের দিকেও কান্দা রয়েছে। বিলও রয়েছে একাধিক। হাওরের মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ ভূমি বোরো জমি, তা একাধিক ধাপে বিন্যস্ত। হাওরের বোরো জমিগুলো উচ্চতা ভেদে ৫-৭ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। নিচু জমি আগে পানিতে তলিয়ে যায়, দেরীতে জেগে উঠে। উঁচু জমি দেরীতে তলিয়ে যায়, আগে জেগে উঠে। হাওরের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত বিষয়গুলো পানি, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, কান্দা, জলাবন ও জনবসতি। আবার হাওরের মধ্যে জনবসতি তথা গ্রামসমূহ থাকায় জীবনের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ই হাওরের সাথে পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত।
এরমধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। হাওরগুলো দেশের মিঠাপানির বৃহৎ আধার। মিঠাপানি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। ধান চাষ, মাছ উৎপাদন, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, জীবনযাত্রা, নৌ যোগাযোগ এবং লবণাক্ততা প্রতিরোধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মিঠাপানির অবদান ব্যাপক। হাওরের কৃষি মূলত বোরো ধান চাষ, যা হাওরবাসীর প্রধান পেশা।
দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও হাওরের বোরো ফসল কাটার মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। ফসল রক্ষায় বিগত ষাটের দশকে হাওরগুলোর চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়। বাঁধগুলো প্রতিবছর সংস্কার, মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করা হয়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ বাঁধগুলো উঁচু করা হচ্ছে। ফসল রক্ষায় সাময়িক সমাধান হিসেবে প্রয়োজন হলেও বেড়িবাঁধ হাওরে অনেক সংকট তৈরি করেছে। নদীর স্রোতের সাথে উজান থেকে আসা পলিতে হাওরাঞ্চলের নদীগুলো ইতিমধ্যে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। আবার বাঁধের মাটিতে প্রতিবছর নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এতে অকাল বন্যার ঝুঁকি আরও বাড়ছে। তাই হাওরের বোরো ফসলকে স্থায়ীভাবে ঝুঁকিমুক্ত করতে নদী খননই একমাত্র সমাধান। মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারাসহ হাওরাঞ্চলের নদীগুলো খনন করতে হবে। হাওরের অপর গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো মৎস্য। মূলত বিল থেকে আহরিত হলেও বর্ষায় সারা হাওরই মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র। ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধগুলো উঁচু থাকায় হাওরে অবাধ পানি প্রবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। বাঁধের কারণে হাওর ও নদীর সংযোগকারী অনেক খাল বন্ধ হয়ে আছে। ফলে হাওরে স্রোত না হওয়ায় মাছের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়াও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, অবৈধ উপকরণ দিয়ে মাছ ধরা, বিল শুকিয়ে ফেলা, ত্রুটিপূর্ণ ইজারা পদ্ধতি, জলাবন না থাকা প্রভৃতি কারণেও হাওরগুলো মাছশূন্য। বর্ষায় হাওরে অবাধ পানিপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ, বিল ও হাওরের ভিতরের নদী খনন করাসহ বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে সঠিক নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে হাওরগুলো মৎস্য সম্পদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। হাওরের সামগ্রিক ভারসাম্যের জন্য কান্দা গুরুত্বপূর্ণ। একসময় কান্দাগুলোয় জলাবনকেন্দ্রিক সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ছিল। ইদানীং ঘাস কমে গেলেও কান্দাগুলো শুকনোর সময় বিপুল সংখ্যক গরু, ভেড়া ও ছাগলের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠে। সচেতনতা ও তদারকির অভাবে ইতিমধ্যে জলাবনশূন্য হওয়া কান্দাগুলো প্রতিবছর মাটি কাটায় বিলীন হচ্ছে। কান্দায় জলসহিষ্ণু হিজল, করচ, জালিবেত, মুর্তা, হুগলা প্রভৃতি উদ্ভিদ রোপণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ জলাবন তৈরি করা সম্ভব। জলাবন কেন্দ্রীক কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চ মাত্রায় কার্বন ধরে রাখতে সক্ষম করচবাগ বৃদ্ধির মাধ্যমে হাওরগুলো আন্তর্জাতিক কার্বন বাণিজ্যে অবদান রাখতে পারে। জলাবনে প্রাপ্ত কাঁচামালে হাওরাঞ্চলে নির্ভর কুটির শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে। প্রাণিস¤পদ বৃদ্ধির জন্য হাওরে জলজ ঘাস চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। আবাসন তথা বসবাসেও হাওর ব্যবহৃত হয়। বড় প্রতিটি হাওরে অনেকগুলো গ্রাম রয়েছে। মাঝারি আকৃতির হাওরে এক বা একাধিক গ্রাম রয়েছে। ছোট হাওরগুলোর মধ্যেও পার্শ্ববর্তী গ্রামের পাড়া বা বর্ধিত বসতি রয়েছে। গ্রামগুলোতে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় হাওরের বুক চিড়ে সড়ক নির্মাণের ফলে হাওরগুলো বৈশিষ্ট্য হারিয়ে রুগ্ণ প্রায় হয়ে যায়। একসময় হাওরের মধ্যে জনবসতি গড়ে উঠলেও প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য তেমন হুমকি ছিলনা। বর্তমানে জনসংখ্যার আধিক্য, বসতি সম্প্রসারণ, জনবসতির জন্য যোগাযোগ ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হাওরের অস্তিত্বের জন্য একটা বড় সংকট। হাওরের মধ্যেবর্তী গ্রামগুলো মূলত অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বের এলোমেলো জনবসতি যা বস্তির চেয়ে ঘিঞ্জি। হাওরকে জনঘনত্বের চাপ থেকে মুক্তি দিতেই হবে। হাওরের মধ্যে সাবমারশিবল (বর্ষাকালে ডুবন্ত) ছাড়া অন্যান্য সড়ক নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বিগত এক দশক যাবৎ বজ্রপাত হাওরের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। হাওরগুলোতে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করতে হবে। হাওরের এলোমেলো ও বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে পুনর্গঠন ও পুনঃস্থাপন করতে হবে। হাওরের তীরবর্তী খাস জায়গাগুলো নদী খননের মাটি দিয়ে ভরাটের মাধ্যমে এটা সম্ভব। সুষ্ঠু পরিকল্পনায় হাওরে হাওরে পরিকল্পিত গ্রাম গড়ে তুললে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ জীবনযাত্রার সকল বিষয়ের সংকট মোকাবিলা সহজ হবে। কৃষি ও কুটির শিল্প নির্ভর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত গ্রামগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন সক্ষম ও সমৃদ্ধ হবে। সঠিক পরিকল্পনায় হাওরাঞ্চল দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। [লেখক : কৃষি ও খাদ্য বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
বিএনপি গণমানুষের জন্য রাজনীতি করে : কয়ছর এম আহমেদ

বিএনপি গণমানুষের জন্য রাজনীতি করে : কয়ছর এম আহমেদ