সুনামগঞ্জ , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সাচনা বাজারের হাসপাতাল চালুর দাবি অদম্য মেধাবী অর্পা’র স্বপ্নযাত্রা কি থেমে যাবে? গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে : প্রধান উপদেষ্টা সাগরপথে ইউরোপে যান সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রতিবাদে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের বিক্ষোভ জগন্নাথপুরে ৩ আসামি গ্রেফতার হাওরে পানি নেই, সংকটে কৃষি ও মৎস্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিভে গেল আরও এক শিক্ষার্থীর জীবন প্রদীপ খেলাধুলাই পারে মাদকের ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে : কয়ছর এম আহমদ সুবিপ্রবি’র স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরে বাস্তবায়নের দাবি দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২ টাঙ্গুয়ার হাওরে ১২টি হাউসবোটকে দুই লক্ষাধিক টাকা জরিমানা বাবর ভাই, কাজটা আপনার ঠিক হয়নি : ১০ ট্রাক অস্ত্র প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপিতে চাঁদাবাজদের স্থান নেই : কয়ছর এম আহমদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় বাদে সব কমিটি স্থগিত ভাঙা রেলিং, সরু পথ, দোয়ারাবাজার-শরীফপুর সেতু যেন প্রতিদিনের আতঙ্ক টাঙ্গুয়ার হাওরে অবৈধ হাউসবোট জব্দের নির্দেশ যে ছেলেটি ‘মানুষ’ শব্দটিকে অর্থপূর্ণ করে তুলেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘মাঠের কথা’ সমাবেশে পদবঞ্চিত নেতাদের বিপুল উপস্থিতি
আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

হাওরে পানি নেই, সংকটে কৃষি ও মৎস্য

  • আপলোড সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৯:৩১:২৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৯:৩৮:১৮ পূর্বাহ্ন
হাওরে পানি নেই, সংকটে কৃষি ও মৎস্য
বিশেষ প্রতিনিধি ::
ভর বর্ষায়ও পানি স্বল্পতায় ভোগছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলপানি না থাকায় মৎস্য সংকটে পড়েছেন হাওরবাসী। প্রকট হচ্ছে কৃষি বিপর্যয়ের শঙ্কাও। হুমকিতে পড়েছে হাওরপাড়ের জীবন-জীবিকা। এতে জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানুষের নেতিবাচক কর্মকান্ডই অনেকাংশে দায়ী। এ জন্য প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর চালানো আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ ও হাওর সচেতন মানুষেরা। অনেকের সাথে কথা বলে জানাযায়, হাওরপাড়ের মানুষ পুরোদস্তুর কৃষি ও মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল। কৃষি-মৎস্য দুটোই তাদের জীবন-জীবিকার উৎস। খাদ্যাভাব পূরণেও ধান-মাছের বিকল্প নেই। এ দুইয়ের সংস্থানই হয় হাওরে। তবে হাওর ও জলাশয়গুলোতে পানি কম থাকায় মাছের অপ্রতুলতার পাশাপাশি ফসলহানির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কৃষি ও মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে অগ্রসর হতে হবে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জলসহিষ্ণু উদ্ভিদ ও বন-জঙ্গল উজাড়, ভূমির ব্যবহারে পরিবর্তন, পানির উৎসস্থল ভরাট ও অনাবৃষ্টিসহ নানা কর্মকান্ড প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। এই প্রতিকূলতা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। ফলে অকাল বন্যা, খরা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ছে মানুষ। পুরো বর্ষা মৌসুমে হাওরে পানি না থাকাটা এর ধারাবাহিকতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতিবিরোধী কার্যক্রম পরিহার পরামর্শ সচেতনমহলের।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। গত ১৯ জুলাই থেকে পরবর্তী সাত দিনে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ২০০ মিলিলিটার। ১৯ জুলাই থেকে গেল সাতদিনে ধারাবাহিকভাবে ১১৪, ২৫, ৫৪, ২, ১, ৪ ও ২৫ জুলাই শূন্য মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে ৪-৫ দিন টানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মেঘালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হলে এ অঞ্চলের বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জামালগঞ্জে হালি হাওর, পাগনার হাওর ও তাহিরপুরের শনি হাওরের একাংশ ঘুরে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে দেওয়া ফসল রক্ষা বাঁধের অধিকাংশই ভেসে উঠেছে। নদীবেষ্টিত হাওরে বেশির ভাগ বাঁধ এভাবে ভেসে উঠায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। বর্ষার এ সময়ে যেখানে অন্তত চার-পাঁচ ফুট পানি থাকার কথা সেখানে পুরোদস্তুর শুষ্ক পরিবেশ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় জলজ প্রাণ-প্রকৃতি বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। মৎস্য আহরণ ও প্রজনন থেমে গেছে। ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আলামত স্পষ্টত চোখে পড়েছে।
জামালগঞ্জের হালি হাওরপাড়ের কৃষক মো. আয়না মিয়া বলেন, হাওরে পানি নাই। ধান-মাছের ক্ষতি হইতাছে। পানি না থাকলে জমিতে ধান কম হইব। মাছও আইতো না। হাওরের ধান-মাছ দিয়াই তো দেশ চলে। এই রকম হইলে তো সবারই ক্ষতি হইব। এইডা প্রকৃতিরই খেলানেলা। মানুষ প্রকৃতির ক্ষতি কইরা এই বিপদ ডাইকা আনতাছে। এইডা না থামাইলে এই রকম হইতেই থাকবো।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি সুনামগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, শ্রাবণে ঘাটে জল, ধানে শস্যে করে তল। অর্থাৎ শ্রাবণে পানি কমলে শেষ বর্ষার বন্যায় সব নষ্ট হবে। হাওরে পানি না থাকা পরিস্থিতির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। তিনি আরও বলেন, হাওরে এখন যে পরিবেশ বিরাজ করছে এটা প্রকৃতিগত। আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণেই এমনটা হচ্ছে। প্রকৃতিকে প্রকৃতির জায়গায় থাকতে দিতে হবে। না হলে হাওরে জীবন-জীবিকার নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।
বাংলাদেশ ক্ষেত-মজুর সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন রেজা বলেন, হাওর-বাওড়, নদীনালা, বিল বছরের পর বছর খনন না করায় উজান থেকে নেমে আসা পানির গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণেও হাওরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের বিরূপ আচরণ আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। ফলে মৎস্য ও কৃষি দুই ক্ষেত্রই দুর্বল হচ্ছে। সরকার ও সাধারণ মানুষকে প্রকৃতিবান্ধব কাজকর্মে মনোযোগী হতে হবে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদা ইসলাম বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না বিধায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টাই মুখ্য। একসময় হাওরাঞ্চলে প্রচুর বন-জঙ্গল ছিল। এখন নাই বললেই চলে। ফরেস্ট (বন) থাকলে পরিবেশের ভারসাম্যতা বজায় থাকে। তখন সময়মতো বৃষ্টিপাত হবে, পানিও থাকবে।
ক্লাইমেট চেইঞ্জের (জলবায়ু পরিবর্তন) অনেক কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, উজান-ভাটি দুইখানেই অপরিকল্পিত বাঁধ হচ্ছে। জলাশয় ভরাট হচ্ছে। এগুলো পানির গতি আটকে ফেলছে। এ জন্য সাধারণ মানুষ ও নীতি-নির্ধারকদের পরিবেশ-প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়াটা জরুরি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে ৯৫টি ছোট-বড় হাওর এবং ছোট-বড় নদী আছে ১০৬টি। হাওরে পানি না থাকার বড় কারণ হচ্ছে বৃষ্টিপাত কম হওয়া। এ বছর পানি বিপদসীমা অতিক্রম দূরের কথা, সহনীয় মাত্রা থেকেও পানি কম। এটা আসলে ভালো লক্ষণ না। এক্ষেত্রে আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকৃতির উপর তো কারও হাত দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যে কাজে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হয়, তা থেকে বিরত থাকা এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করাটা জরুরী।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সাচনা বাজারের হাসপাতাল চালুর দাবি

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সাচনা বাজারের হাসপাতাল চালুর দাবি