গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়
বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে ঠিকাদারের লোকজন

স্টাফ রিপোর্টার ::
শাল্লা উপজেলার গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আবারও নির্মাণসামগ্রী রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে ঠিকাদারের লোকজন। সম্প্রতি তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই বালু-পাথর বোঝাই নৌকা বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংলগ্ন নদীতে নোঙর করে রেখে আনলোডের চেষ্টা করে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা খেলার জন্য মাঠ সংস্কারের দাবি জানিয়ে বেশক’টি নৌকা ফিরিয়ে দেয়।
প্রসঙ্গত, গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এর আগেও দিরাই-শাল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক পুনঃনির্মাণকাজের নির্মাণসামগ্রী রেখেছিল ঠিকাদার। এতে মাঠটি খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ঠিকাদারের লোকজন মাঠটি সংস্কারের আশ্বাস দেয়। তবে তারা মাঠ সংস্কার না করেই আবারও নির্মাণসামগ্রী রাখার চেষ্টা করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বিদ্যায়ের মাঠে সড়কের মালামাল রাখার জন্য অভিভাবকদের ডেকে এনে একটি সভার আয়োজন করে। গতকাল শনিবার গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শুক্রবার মাইকিং করে সভার কথা জানানো হয় গ্রামে গ্রামে। সভায় শতাধিক অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। সভায় শিক্ষক, অভিভাবক, বিদ্যালয় পরিচালনার পূর্বের কমিটির সভাপতি, সদস্য ও ঠিকাদারের লোকদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সবাই খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখার পক্ষে কথা বলেন।
সভার সভাপতি বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, কোটি টাকার বিনিময়েও আমি খেলার মাঠে মালামাল রাখার পক্ষে নই। আমি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পক্ষে।
পূর্বের নির্বাচিত কমিটির সদস্য আব্দুল খালেকও বলেন, আমাদের তিন বেলা পেটভরে খাবার দিলেন, আর শেষে আমাদের মেরুদ- ভেঙে দিবেন তাতো হতে পারে না।
অভিভাবক ফখরুল ইসলাম বলেন, খেলার মাঠ তো আর খেলার উপযোগী নেই। গত দুই বছর খেলার মাঠে এসব মালামাল রাখার অনুমতি কারা দিলেন, কীভাবে দিলেন আমরা জানতে চাই। এখন খেলার মাঠে খেলাধুলার উপযোগী না করে আবারও মালামাল রাখার কথা কীভাবে আসে? আমরা এমন এক কমিটি বানিয়ে দিলাম, যে কমিটি বলতেই পারে না কীভাবে মালামাল রাখা হলো!
অভিভাবক সুরঞ্জিত দাশ বলেন, মাঠ দিল কারা? সংস্কার করার কথা ছিল কিনা, কত টাকার বিনিময়ে মাঠ ভাড়া দেয়া হয়েছিল? আমরা জানতে চাই।
হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার বাবলু রায় বলেন, শিক্ষার্থীরা এ মাঠে খেলাধুলা করে। তাদের মাঠ তারাই এখন সিদ্ধান্ত নিবে। বিদ্যালয়ের মাঠ জুন মাসে সংস্কার করে খেলাধুলা জন্য উপযোগী করে দেয়ার কথা শুনেছি পত্রিকার মাধ্যমে। এখন সংস্কার না করে আবারও মালামাল রাখার জন্য নৌকা নোঙর করে রাখা হয়েছে। এমনিতেই ছাত্ররা নৌকার মালামাল রাখতে দেয়নি। আমরা যদি এখন মাঠ দিই, পরে ছাত্ররা যদি প্রতিবাদ করে এই দায় কে নিবে? এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব বিষয়টি ছাত্রদের উপর ছেড়ে দেয়া হোক। ছাত্ররাই সিদ্ধান্ত নিবে তারা মাঠ ভাড়া দিবে, নাকি খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত রাখবে।
তবে মাঠ কীভাবে দু’বছর পর্যন্ত বালু, পাথর রেখে দখলে রেখেছে ঠিকাদাররা এবিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারেননি প্রধান শিক্ষক আনন্দ মোহন চৌধুরীও।
এসময় পূর্বের কমিটির সভাপতি মৃদুল চন্দ্র দাশ বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। স্কুলের শিক্ষক কাজল কান্তি চৌধুরী এই মালামাল রাখার বিষয়টি অবগত করেছিলেন আমাকে। তবে কোনও অর্থ লেনদেন হয়নি। শুধু মাঠ সংস্কারের কথা জানি। তবে সভাপতি হিসেবে অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোটভাই ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন) চৌধুরী কাউকে কিছু না বলেই এই মাঠ ঠিকাদারদের নির্মাণসামগ্রী রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন।
এদিকে, দিনভর আলোচনা করেও বিদ্যালয়ের মাঠ ভাড়া দেয়ার কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাসের কাছে স্কুলের মাঠ খেলাধুলা করার উপযোগী করে দেয়ার জন্য একটি আবেদন করেছিলেন সিলেট জজকোর্টের আইনজীবী সুব্রত দাশ। পরে ২৮ মে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে বালু-পাথর খেলার মাঠ থেকে সরিয়ে নেয় ঠিকাদার। কিন্তু গত জুন মাসে মাঠে ভিটবালু ফেলে মাঠ সংস্কার করে দেয়ার কথা থাকলেও, তা না করে আবারও মাঠে মালামাল রাখার প্রস্তুতি নেয়া হয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ