কাঠইর-জয়নগর সংস্কারের তিন মাসেই সড়কে গর্ত, উঠে যাচ্ছে ঢালাই
- আপলোড সময় : ০৫-০৯-২০২৪ ০৩:৫২:৪৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৯-২০২৪ ০৩:৫২:৪৩ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তিন উপজেলার যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ কাঠইর-জয়নগর সড়ক সংস্কারকাজ শেষ করার পরপরই ভেঙে যাচ্ছে। উঠে যাচ্ছে ঢালাই। সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। নি¤œমানের কাজের কারণে তিন মাসের মাথায় নষ্ট হতে বসেছে সড়কটি। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এই সড়কটি দিয়ে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ ও জামালগঞ্জ উপজেলার মানুষজন জেলা শহরে যাতায়াত করেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এডিবির অর্থায়নে মদনপুর-কাঠইর-জামালগঞ্জ সড়কের জিরো কিলোমিটার থেকে ৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ পায় মেসার্স সালেহ আহমদ এন্টারপ্রাইজ। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত মে মাসে সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়সারা কাজ শেষ করে। এর মধ্যে জুনের বৃষ্টিতেই রাস্তার পিচঢালা ওঠে যায়। নতুন সংস্কারকৃত অংশের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা দেয়। রাস্তার দুই দিকে বর্ধিত করার কথা থাকলেও নকশা অনুযায়ী যথাযথভাবে করা হয়নি। তাছাড়া ২০২২ সালের বন্যায় এই সড়কটির যে অংশ প্লাবিত হয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে অংশ আরসিসি ঢালাই করার কথা থাকলেও সেস্থানেও যথাযথ কাজ হয়নি। এই অংশে পর্যাপ্ত সিমেন্ট, উন্নত বালু-পাথর ও পর্যাপ্ত রডও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ আছে এলাকাবাসীর। এছাড়া যে অংশ গালা দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে সেই অংশ সাথে সাথেই উঠে গিয়েছিল। সড়কটির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বিভিন্ন অংশে পাইলিং খুঁটি বসানোর কথা থাকলেও নামকাওয়াস্তে ছোট পিলার দিয়ে পাইলিং দেওয়া হয়েছে। যা কিছুদিন যেতে না যেতেই ওঠে গেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
সড়কের কাজে অনিয়মের কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ঠিকাদার, এলজিইডির কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের দিয়ে আন্দোলনকারীদের হুমকি ধমকি ও মামলার ভয় ভীতি দেখান। তখন ঠিকাদার পলিন নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে মামলার হুমকি-ধমকিও দেন।
এলাকাবাসী জানান, গত জুন মাসে দুই দফা বন্যা হয় সুনামগঞ্জে। তবে কাঠরই-জামালগঞ্জ সড়কটিতে পানি ওঠেনি। ওই এলাকায় গত কয়েক বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড পুরাতন সুরমা ও সুরমা নদীর দুই দিকে বাঁধ উঁচু করার কারণে কাঠইর-জামালগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হয়নি। যার ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি সড়কটি। বরং নি¤œমানের কাজের কারণেই ২-৩ মাসের মধ্যেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন ঠিকাদার মেসার্স সালেহ আহমদ এন্টারপ্রাইজ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের দিয়ে এই সড়কটিকে ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক হিসেবে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এই সদরদারপুর গ্রামের বাসিন্দা জসীম উদ্দিন বলেন, কাজের শুরুতেই অনিয়ম হয়েছিল। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন হুমকি ধমকি দেওয়া হয়েছিল। ২-৩ মাস যেতে না যেতেই সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাচ্ছে। সড়কের সাইডের পাইলিং খুঁটিও ওঠে গেছে। নি¤œমানের কাজের কারণেই রাস্তার পিচ, খুঁটি ও সাইডের অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকাদারের সিকিউরিটি মানি আটকে সড়কটির সংস্কার করা জরুরি বলে জানান তিনি।
কাঠইর ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি মাওলানা শামসুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকার এই সড়কটি দিয়ে সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জেলা শহরে যাতায়াত করেন। সড়কটিতে নি¤œমানের কাজের কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই গর্ত দেখা দিয়েছে। ওঠে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। সড়কটি আবারও সংস্কার প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এখনো ফাইনাল বিল দেওয়া হয়নি। আমরাও খবর পেয়েছি সড়কের বিভিন্ন অংশে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সেগুলা সংস্কার করার পর এডিবি’র অর্থায়নে বাস্তবায়িত সড়কটির কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে। তারপর চূড়ান্ত বিল দেওয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ