শামস শামীম, হাওরাঞ্চল ঘুরে ::
জাতিসংঘের এফএও তহবিলের জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে লক্ষ্য পূরণ হয়নি, বিদেশ সফরেই প্রকল্প সারা।
সুনামগঞ্জের দুই উপজেলায় জাতিসংঘের ‘ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’র (এফএও) তহবিলে চার বছর মেয়াদী জলবায়ু সহনশীল (কমিউনিটি বেইজ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ এন্ড একায়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ-প্রকল্প) প্রকল্প শেষ হওয়ার পথে। নতুন করে বাড়ানো হয়েছে ৬ মাসের মেয়াদ। এই প্রকল্প হাওরে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কোনও কাজে আসেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত জনগোষ্ঠীর কাজকে নিজেদের কাজ দেখিয়ে কাজ সেরেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রকল্পের কোন চিহ্নও দেখা যায়নি। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প লক্ষ্য অর্জন না করেই এখন শেষ হওয়ার পথে। কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর আর লোক দেখানো কাজেই ছিল প্রকল্পের মূল।
গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাওরাঞ্চলের বিশিষ্টজন। জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে সুনামগঞ্জের হাওর উপজেলা শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুরসহ মৌলভীবাজার উপজেলার জুড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর, উপকূলীয় এলাকার বাগেরহাট সদর, কচুয়া, ডুমুরিয়া, দাকোপ এবং শ্যামনগর উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জেলা মৎস্য অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য বিভাগের কারিগরি সহায়তা ও জাতিসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন-এর মাধ্যমে চার বছর মেয়াদে হাওরে জলবায়ু সহনশীল প্রকল্প জেলার দুটি উপজেলাসহ দেশের ৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলাও রয়েছে। জলবায়ু ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে হাওরের ভুক্তভোগী গোষ্ঠী জলবায়ু সহনশীল জীবিকা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাবে হাতে কলমে এই শিক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের সফলতার জন্য ৯ উপজেলার ৯ জন কৃষক, ৯জন মৎস্য অফিসারসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্তত ৩০ জন অফিসার জলবায়ু সহনশীল ট্রেনিং বা অভিজ্ঞতা নিতে বিদেশ সফর করেছেন। সরেজমিন ঘুরে এবং মাঠপর্যায়ে যুক্ত সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পে অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। গত ১ বছর ধরে এ বিষয়ে তথ্য চাইতে গিয়ে সরকারি মৎস্য বিভাগ ও প্রকল্পের লোকজনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা কেউ তথ্য দিতে চাননি। এমনকি প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে কোনও ধরনের তথ্য দিতে ‘জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা’ রয়েছে বলে জানান। এভাবে তথ্য দিতে অপারগত প্রকাশ করেন তারা। পরে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে কিছু তথ্য ও মাঠ পর্যায়ে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জলবায়ু সহনশীল এই প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে জাতিসংঘের অর্থ সহায়তায় মৎস্য বিভাগকে যুক্ত করে চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের কার্যক্রম ২০২০ সালে শুরু হয়। জলবায়ু সহনশীল মৎস্য চাষ ও মৎস্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় মৎস্য অভয়াশ্রম, বিল নার্সারি স্থাপন, খাচা, পুকুর ও ধান ক্ষেতে মৎস্য চাষ, গলদাচিংড়ি ও মুক্তা চাষ, পেনফিশ কালচার, মাছধরার জাল তৈরি কার্যক্রম, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শুঁটকি তৈরিতে সহযোগিতাসহ নানা কার্যক্রম ছিল। প্রকল্পটি কমিউনিটি ভিত্তিক সমিতি করে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণসহ কারিগরি কাজ করার নির্দেশনা ছিল।
কিন্তু প্রকল্পের লোকজন ও মৎস্য বিভাগের লোকজন মিলেমিশে লুকোচুরি করে প্রকল্পের দায়সারা কাজ সেরেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওরের জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু সহিষ্ণু জ্ঞান প্রদান ও ঝুঁকি মোকাবেলা করে কিভাবে নিজেদের পেশা চালিয়ে নিবেন এ লক্ষ্যেই কার্যক্রমটি শুরু হয়। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে অভিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে জলবায়ু সহিষ্ণুতা লক্ষ্য করা যায়নি।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা শান্তিগঞ্জের তিনটি স্পটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের কোনও কাজ দৃশ্যমান নেই। মুক্তাচাষ, খাচায় মাছ চাষ, অভয়াশ্রম, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ এবং ডোবায় শিং-মাগুর চাষ করার কথা থাকলেও বাস্তবে নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু দেখা যায়নি। এই প্রকল্পের অগ্রগতি দেখার জন্য এই প্রতিবেদক চার দফা শান্তিগঞ্জের সদরপুর, উজানীগাঁও ও ডুংরিয়া পরিদর্শন করেন। একটি স্থানে প্রকল্পের সাইনবোর্ড থাকলেও দুটি স্থানে কোনও সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। তবে এগুলো প্রকল্প শুরুর আগ থেকেই স্থানীয়রা সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় বাস্তবায়ন করছিলেন বলে সরেজমিন জানা গেছে।
কাগজে আছে, বাস্তবে নেই : ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২৫ এপ্রিল ও ১৫ জুন শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুরে গিয়ে দেখা যায় যেখানে মুক্তা চাষ করার কথা বলা হচ্ছে সেটা এক দশক আগ থেকেই নামকাওয়াস্তে একজন ব্যক্তি চাষ করছেন। তাকে আবার ধান ক্ষেতে মাছ চাষ করার প্রকল্প সাইটও দেওয়া হয়েছে। পিছনে পুকুর থাকলেও ধানক্ষেত দেখা যায়নি যেখানে মাছ চাষ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদক যখন সেখানে যান পুকুরটি ছিল শুকনো। নাজিম উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তি এক দশক আগে বাংলাদেশ মুক্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় নামকাওয়াস্তে মুক্তা চাষ করছেন। তার কাজে সাইনবোর্ড ছাড়া কোনও আউটপুট নেই। সরকারি মালিকানাধীন খাল দখল করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মুক্তাচাষ করে যাচ্ছেন! এখানেই সাইট দেওয়া হয়েছে ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স প্রকল্পের। তার সাইটের পাশেই নাইন্দা নদীতে এই প্রকল্পের একটি অভয়াশ্রম কাগজে আছে। নাইন্দা নদীতে গিয়ে উল্লেখিত সময়ে কোনও অভয়াশ্রম দেখা যায়নি।
কাগজে মিন্টু ও গোপাল বাবু অভয়াশ্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা এখানে প্রায় দুই দশক ধরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অভয়াশ্রমের কাজ করেন। তাদের পুরনো কাজটিকেই জলবায়ু সহনশীর প্রকল্পে নতুন অভয়াশ্রম হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে শান্তিগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও পয়েন্টে নাইন্দা নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করার কথা বলা হলেও সেখানেও কিছু দেখা যায়নি উল্লেখিত সময়ে। এই উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামে ডোবা-নালায় শিং-মাগুর চাষ করা হয়েছে বলা হলেও গ্রামের সাবেক মেম্বার জসিমের বাড়িতে গিয়ে কোনও সাইনবোর্ড এবং বাস্তবে শিং-মাগুর মাছ চাষের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুরে ১টি করে অভয়াশ্রম, শান্তিগঞ্জে ২টি বিল নার্সারি ও জগন্নাথপুরে ১টি অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। খাচায় মৎস্য চাষ শান্তিগঞ্জের জয়কলসে একটি ও জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরে একটি বলা হলেও জয়কলস ও নলুয়ার হাওরে গিয়ে সেখানে কোথাও এই চিত্র দেখা যায়নি। মাছের খাদ্য তৈরি ডুংরিয়া ও জগন্নাথপুরে করার কথা বলা হলেও সেটিও কাগজেই আছে এবং পেশাদার কিছু লোকজন দীর্ঘদিন ধরে শুঁটকি প্রসেসিংয়ের কাজ করছেন। এভাবে পুরনো কাজগুলোকে নিজেদের দেখিয়ে প্রকল্পের দায়সারা কাজ করায় হাওরবাসীর কোন উপকারে আসেনি প্রকল্পটি।
প্রশিক্ষণ : প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওর এলাকার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, মৌলভীবাজার উপজেলার জুড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর, উপকূলীয় এলাকার বাগেরগহাট সদর, কচুয়া, ডুমুরিয়া, দাকোপ এবং শ্যামনগর উপজেলায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের হাওরে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা জানান, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জের ৬০০ জন কৃষককে দু’দিন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সিবিও ও পাইলট প্রকল্পে ১৩টি ব্যাচে ৩২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পে ৩০ জন অফিসারকে ও ৯ উপজেলার ৯ জন কৃষককে জলবায়ু সহনশীলতার উপর বিদেশে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২৫০ জন অফিসার দেশে এ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে গত চার বছরে ৯টি এলাকার ৫ হাজার ৮৮০জন কৃষক জলবায়ু সহনশীলতার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্প শুরু হয় ২০২০ সালে। পাইলট প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের বক্তব্য : মুক্তাচাষ, ধানক্ষেতে মাছ চাষ প্রকল্পে যুক্ত আর ডব্লিউ এস নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রকল্পের পাইলট সাইট পেয়েছে।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন জানান, একবার কিছু মাছের পোনা, মাছের খাদ্য, কিছু উপকরণ পাওয়া গিয়েছিল। একইভাবে মুক্তাচাষেও প্রশিক্ষণ কিছু যন্ত্র পাওয়া গিয়েছিল। এর বেশি কিছু পাওয়া যায়নি। এটি ময়মনসিংহ মুক্তা চাষ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাস্তবায়ন করছেন বলে জানান। তবে তার এই কাজের আউটপুট নাই বলে নিজেই স্বীকার করেন তিনি। তার এই প্রকল্পে যুক্ত মো. জাকারিয়া স্থানীয় পদ্মা নামের একটি এনজিওতে কাজ করেন। সম্পর্কে নাজিম উদ্দিনের ভাতিজা তিনি। সদরপুরে ধানক্ষেতে কার্প জাতীয় মাছ ও গলদাচিংড়ি চাষ সমিতির সভাপতিও জাকারিয়া। তিনি এই প্রকল্পে ২০২৪ সালে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ফিলিপাইন গিয়েছিলেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নয় বিভিন্ন সাইট ঘুরে স্থানীয়দের জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় করে পেশা চালিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম দেখেছেন। তার সাইটে গিয়েও কাজ লক্ষ্য করা যায়নি।
মো. জাকারিয়া বলেন, আমাদের সাইট ছাড়া এই প্রকল্পের অন্য পাইলট সাইটের অবস্থা ভালো না। বিদেশ গিয়ে আমি সেখানকার কৃষকদের কিছু সাইট ভিজিট করেছি। যেখানে সবাই মা মাছ, অভয়াশ্রমের প্রতি কতটা আন্তরিক প্রত্যক্ষ করেছি। তাদের প্রকল্পে গত চার বছরের মধ্যে মাত্র একবার মাছের খাবার, নেট, সেন্ট্রি রুম নির্মাণ, মাছ মাপার যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রকল্পের আউটপুট ভালোনা। আমরা চেষ্টা করেও মানুষকে বোঝাতে পারিনা। মানুষ সচেতন না হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবেনা। একই উপজেলার ডোবা-নালায় দেশিয় প্রজাতির শিং-মাগুর চাষ করা হয়েছে ডুংরিয়া গ্রামের সাবেক মেম্বার জসিম উদ্দিনের বাড়ির আশপাশের ডোবায়-প্রকল্পে তাই বলা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে কিছু মজা ডোবা দেখা গেলেও সেখানে মাছ চাষের কোনও আলামত দেখা যায়নি। কোনও সাইনবোর্ডও ছিলনা।
জসিম উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের লোকজন আমাকে একবার ১ কেজি ছোট শিং-মাগুরের পোনা দিয়েছিল। যখন দিয়েছিল তখন ফেলার পর উদবিড়ালে খেয়ে ফেলেছে। এক বছর পরে তারা এখানে এসে মাছ হয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখেন একটি মাছও নেই। বড় পোনা দেওয়ার কথা থাকলেও শান্তিগঞ্জ মৎস্য অফিসার ময়মনসিংহ থেকে ছোট পোনা দিয়েছিলেন। যার অর্ধেক মারা যায় আর অর্ধেক ফেলার পর উদবিড়াল খেয়ে ফেলে। এরপর তারা আর কিছু দেয়নি বলে জানান জসিম। নাইন্দা নদীতে খাঁচায় মৎস্যচাষের জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয় উজানীগাঁও গ্রামের আজম আলী আর মতিউর রহমানকে। কিন্তু এখানেও কোনও মাছ চাষের খাচা দেখা যায়নি।
আজম আলী বলেন, আমি ২০ বছর ধরে মাছে মধ্যে খাঁচায় মাছ চাষ করি। আমার এইটা পুরনো। প্রকল্পের লোকজন আমাকে একবার সামান্য সহযোগিতা করেছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: সুনামগঞ্জে এই প্রকল্পে কর্মরত সফিউল্লাহ স্বীকার করেন, খাঁচায় মৎস্য চাষ ও ডোবা-নালায় দেশি মাছ চাষ নিয়ে তারা হতাশ। সুবিধাভোগীদের সহায়তা দিয়েও পরে গিয়ে বাস্তবে কিছু পাননি বলে জানান। প্রকল্পের ব্যয় কত টাকা এবং কিভাবে খরচ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতিসংঘ এই টাকা বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে ব্যয় করছে। আইনগতভাবে এই ব্যয় বাইরের মানুষের জানাতে মানা আছে। কাজে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও কোনও অনিয়ম হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ডুংরিয়ায় যে মাছ ছাড়া হয়েছিল তা ছিল ছোট। পরে আমরা এখানে এসে আর মাছ পাইনি। সদরপুরেও অভয়াশ্রম নিয়মিত করেননি মৎস্যজীবীরা। জলবায়ু সহনশীল সচেতনতা না থাকায় তারা কেউ প্রকল্প এগিয়ে নিতে আন্তরিক ছিলেন না। এতো প্রশিক্ষণ পেয়েও তারা অভিজ্ঞতা কাজে লাগাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জেলা মৎস্য অফিসার মো. শামসুল করিম বলেন, জাতিসংঘের অর্থ সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের লোকজন আছে। আমরা কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। তারপরও উপজেলা মৎস্য অফিসাররা ভালো বলতে পারবেন।
প্রকল্প পরিচালক মো. শামসুদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুরসহ ৯ উপজেলার মোট বরাদ্দ ৫.৪ মিলিয়ন ডলার। যেখানে কৃষকসহ সরকারি কর্মকর্তারা অনেকেই বিদেশ সফর করেছেন। তারা জলবায়ু সহনশীল ট্রেনিং নিয়েছেন। জুন মাসে মেয়াদ শেষ হলেও আরো ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রকল্পে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
জাতিসংঘের এফএও তহবিলের জলবায়ু সহনশীল প্রকল্প
জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে লক্ষ্য পূরণ হয়নি, বিদেশ সফরেই প্রকল্প সারা
- আপলোড সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ১২:৫২:১৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ০১:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ