দিরাইয়ের হাতিয়া গ্রাম
আধিপত্য নিয়ে লড়াইয়ের অবসান চান গ্রামবাসী
- আপলোড সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০২:৩৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০২:৩৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

সামছুল ইসলাম সরদার ::
হাওরবেষ্টিত দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে হাতিয়া গ্রামের অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে চাপতির হাওর পাড়ি দিয়ে যেতে হয় ওই গ্রামে। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। গ্রামের উত্তরে একই উপজেলার তারাপাশা, পূর্বে জগন্নাথপুর উপজেলায় গাদালিয়া গ্রাম। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে নৌকা লাগে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, হাওরের অজো পাড়াগাঁয়ে গ্রামটির অবস্থান হলেও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধনস¤পদের দিক দিয়ে গ্রামটি এগিয়ে। অনেক গুণিজনের জন্ম হলেও ওই গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই দীর্ঘদিনের। আধিপত্যের লড়াইয়ে এর আগেও ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষে গত রোববার অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনী প্রথমে হাতিয়া গ্রামে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীও গুলি করে। গোলাগুলির পর ঘটনাস্থলে তারাপাশা গ্রামের আবু সাঈদ (৩৫) নামে এক রাজমিস্ত্রির গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। গুলিবিদ্ধ হন তাঁর চাচাতো ভাই আলী আকবর (৩০)।
হাতিয়া গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানান, হাওরের পাড়াগাঁয়েও আমাদের গ্রামের অবস্থান হলে ও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধনস¤পদে আমাদের সুনাম আছে, বরেণ্য রাজনীতিবিদ গুলজার আহমেদ, এডভোকেট আব্দুল মান্নান, এডভোকেট সামছুল ইসলামসহ অনেক গুণিজনের জন্ম আমাদের গ্রামে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের গ্রামে আধিপত্যের লড়াই দীর্ঘদিনের,এ লড়াই কেউ থামাতে পারেননি। বর্তমান কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাদের গ্রামের সন্তান একরার হোসেন ও ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আতিকুর রহমানের আধিপত্যের লড়াই অনেক পুরনো। এছাড়া জলমহাল, স্কুল, কলেজের কমিটিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মারামারি, দিনদুপুরে অস্ত্রের মহড়া এর আগেও অনেক বার এলাকাবাসী দেখেছেন। বছর কয়েক আগে জলমহাল নিয়ে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মামলা এখনও চলমান। সর্বশেষ গত সপ্তাহের রোববার দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, এর জের ধরে সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মাঝে গোলাগুলির ঘটনায় প্রাণ গেল পাশের গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি নিরীহ আবু সাঈদের। বর্তমানে আমাদের গ্রাম পুরুষশূন্য। হাতিয়াসহ আশপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কবে যে কি হয় সে চিন্তায় এলাকার সর্বস্তরের জনগণ। এ আধিপত্যের লড়াইয়ের অবসান না হলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
তারাপাশের গ্রামের বাসিন্দা উমেদ আলী বলেন, আবু সাঈদ অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির লোক ছিল। সে বিদ্যুতের কাজ করতে পাশের গ্রামে গিয়েছিল। এভাবে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরবে ভাবতেই কষ্ট লাগে। তার মৃত্যুতে অসহায় পরিবারটির অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। তার ছোট বাচ্চা ও পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। এলাকার সকলকে নিজ অবস্থান থেকে তাদের সহায়তার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আবু সাঈদের মা সুফিয়া বেগম জলভরা চোখে বলেন, আমাকে মা বলে কে ডাকবে? কে তার ছোট সন্তান আদর করবে? কে আমার পরিবারের হাল ধরবে এ বলে তিনি মূর্ছা যান।
পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, চারজনকে গ্রপ্তারের পর এলাকার পরিবেশ শান্ত। সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ