দুলাল মিয়া::
সুপ্রিয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী বন্ধুরা শুভেচ্ছা নিও। ২৬ জুন, বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে তোমাদের জীবনের দ্বিতীয় পাবলিক এইচএসসি পরীক্ষা। এ পরীক্ষা জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি কেবল শিক্ষাজীবনের একটি বড় পরীক্ষাই নয়; বরং ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত জীবনের জন্য মাইলফলক। ১৯ ফেব্রুয়ারি, বুধবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার স্বাক্ষরিত এইচএসসি পরীক্ষার ২০২৫ সালের প্রকাশিত সময়সূচিতে দেখা যায়, এবছর এইচএসসি পরীক্ষা বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। তত্বীয় পরীক্ষা ২৬ জুন থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। তোমরা জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছো। দুনিয়াটাই একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। জীবনের প্রতিটি ধাপে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। এ সময়টুকু তোমাদের অত্যন্ত আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে।পরীক্ষার আগ মুহূর্তে দুশ্চিন্তা না করে সময়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল সবারই কাম্য। নিজের সেরাটা দিলেই অর্জন করা যায় কাক্সিক্ষত সাফল্য। এজন্য পরীক্ষার প্রস্তুতিও হওয়া চাই সেরা। পরীক্ষায় ভালো করার জন্য যেসব বিষয়ের প্রতি যতœবান হতে হবে- * পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে অবশ্যই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কক্ষে আসনগ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী সরবরাহকৃত উত্তরপত্রে তার পরীক্ষার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি ওএমআর ফরমে যথাযথভাবে লিখে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মার্জিনের মধ্যে লেখা কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না। * পরীক্ষার্থীকে বহুনির্বাচনি, সৃজনশীল / রচনামূলক এবং প্র্যাক্টিক্যাল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) আলাদাভাবে পাস করতে হবে। * আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। মনে কর, তুমি সবকিছুই পারো, সব তোমার মনে আছে। খাতায় লিখতে পারবে। কোনো অবস্থায়ই মনে থাকবে কিনা; লিখতে পারবো কিনা এমন হতাশায় ভোগবে না। নিজের ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস রেখো। * ভালো ফলাফল অর্জনের পূর্বশর্ত হলো শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা। এজন্য অভিভাবকেও ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে হবে। শিক্ষার্থীর পড়ালেখার উত্তম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যতœশীল থেকে পড়ালেখাসহ প্রতিটি ভালো কাজে সমর্থন, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে হবে। * শিক্ষার্থীর ঘুম ও খাবারে যাতে কোনো অনিয়ম না হয় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পরীক্ষার তারিখ, বার ও সময় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। সকল দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। * পরীক্ষার পূর্বের রাতেই প্রবেশপত্র, এডমিট কার্ড, কলম, পেন্সিল, রাবার, স্কেল, ক্যালকুলেটর ও জ্যামিতি বক্সসহ প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো নিশ্চিত হয়ে প্লাস্টিকের একটি সাদা ফাইলে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। * শিক্ষার্থীর পঠিত সব বিষয়েরই গুরুত্ব রয়েছে। তাই প্রত্যেকটি বিষয়ে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। শেষ মুহূর্তেও মূল বইয়ে গুরুত্ব সহকারে অনুশীলন করতে হবে। পরীক্ষায় কাক্সিক্ষত নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্ন নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ,তেমনি যথার্থ উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। * পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উত্তরপত্রের ডেকোরেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃষ্ঠার ওপরে দেড় ইঞ্চি, নিচে আধা ইঞ্চি, বামে এক ইঞ্চি এবং ডানে আধা ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা খালি রাখতে হবে। একটি উত্তর লেখা শেষে এক থেকে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ফাঁক দিয়ে আরেকটি উত্তর লেখা শুরু করতে হবে। হাতের লেখা স্পষ্ট ও পাঠযোগ্য হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ঘষামাজা, কাটাছেড়া যথাসম্ভব পরিহার করা উচিত। লেখার ক্ষেত্রে কালো কালির বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করা ভালো। * প্রশ্ন পাওয়ার পর এক থেকে দুইবার খুব মনোযোগ দিয়ে প্রশ্নটি পড়ে নিবে। ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নের উত্তর লেখাই ভালো। পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের নম্বর পৃষ্ঠার মাঝামাঝি লেখাই ভালো। * পরীক্ষা চলাকালীন অবশ্যই ঘড়ি ব্যবহার করতে হবে। মোবাইল ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ। পরীক্ষার্থী কোনভাবেই মোবাইল / কোনো ডিভাইস সাথে রাখতে পারবে না। পরীক্ষার্থীরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে না। * পরীক্ষার হলে সময় সচেতন থাকা খুবই দরকার। মনে রাখতে হবে, ফুলমার্কস আনসার করা খুবই জরুরি। প্রতিটি প্রশ্নের সময় ভাগ করে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত পাঁচ মিনিট আগেই লেখা শেষ করতে হবে। * পরীক্ষার হলে রিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লেখা শেষ করেই পুরো উত্তরপত্র রিভিশন দিবে। এতে অনিচ্ছাকৃত অনেক ত্রুটি সংশোধন করতে পারবে। ফলে কাক্সিক্ষত নম্বর পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই নি¤েœর নম্বর বণ্টন ও সময় বিভাজন স¤পর্কে খুবই সচেতন থাকতে হবে- * ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনি (এমসিকিউ) পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় ৩০ মিনিট। ৭০ নম্বরের সৃজনশীল বা রচনামূলক (সিকিউ) পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। * ব্যবহারিক বিষয়সংবলিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনি (এমসিকিউ) অংশের জন্য ২৫ মিনিট বরাদ্দ থাকবে।৫০ নম্বরের সৃজনশীল (সিকিউ) পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট বরাদ্দ থাকবে। * সকাল ১০: ০০টা থেকে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে- সকাল ০৯: ৩০ মিনিটে ‘অলিখিত উত্তরপত্র’ ও ‘বহুনির্বাচনি ও ওএমআর শিট’ বিতরণ। সকাল ১০: ০০টায় ‘বহুনির্বাচনি প্রশ্নপত্র’ বিতরণ। সকাল ১০: ৩০ মিনিটে ‘বহুনির্বাচনি উত্তরপত্র’ (ওএমআর শিট) সংগ্রহ ও ‘সৃজনশীল প্রশ্নপত্র’ বিতরণ। (২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ সময় ১০: ২৫ মিনিট)। * বেলা ০২:০০টা থেকে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে- বেলা ০১: ৩০ মিনিটে ‘অলিখিত উত্তরপত্র’ ও ‘বহুনির্বাচনি ওএমআর শিট’ বিতরণ। বেলা ০২: ০০টায় ‘বহুনির্বাচনি প্রশ্নপত্র’ বিতরণ। বেলা ০২:৩০ মিনিটে ‘বহুনির্বাচনি উত্তরপত্র’ (ওএমআর শিট) সংগ্রহ ও ‘সৃজনশীল প্রশ্নপত্র’ বিতরণ। (২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ সময় ০২:২৫ মিনিট)। পরীক্ষা বিরতিহীনভাবে প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সময় পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ ‘বহুনির্বাচনি’ ও ‘সৃজনশীল’ উভয় অংশের পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না। প্রশ্নপত্রে উল্লেখ করা সময় অনুসারে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিমে পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। মোট কেন্দ্র ২৭৯৭টি। শিক্ষার্থীবান্ধব, সুষ্ঠু ও ইতিবাচক পরিবেশে পরীক্ষা স¤পন্ন হোক। সবার জন্য শুভকামনা। [লেখক : প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, জাউয়া বাজার ডিগ্রি কলেজ, ছাতক, সুনামগঞ্জ]
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
এইচএসসি পরীক্ষা
সাহস ও মনোযোগেই আসবে সাফল্য
- আপলোড সময় : ২৫-০৬-২০২৫ ১১:৪১:৪০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৫-০৬-২০২৫ ১১:৪৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ