তানভীর আহমেদ ::
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, সংগঠন যতো বেশি শক্তিশালী হবে, আগামী দিনে কর্মসূচি বাস্তবায়ন তত সহজ হবে। আমরা বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও সুসংগঠিত করতে চাই। বিএনপি এমন একটা দল, যে দল জনগণের দল। এই দল মানুষের সাথে থাকে। মানুষের কষ্টের কথা বলে। মানুষের সুখের সময়ও পাশে থাকে, দুঃখের সময়ও পাশে থাকে। বিএনপি এমন একটা দল, যেই দল ভয়ে আত্মসমর্পণ করে নাই, এই দলের নেত্রী ভয়ে আত্মসমর্পণ অথবা আপোষ করে বিদেশে চলে যান নাই। সেই দলের দলের নেতাকর্মী আপনারা। কাজেই আপনারা আত্মসমর্পণ করতে শিখেননি, পালিয়ে যেতে কিংবা আপোষ করতেও শিখেননি।

সোমবার (২ জুন) দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের একটি রেস্টুরেন্টের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের কথা বলতে হয়েছে। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, মানবাধিকারের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং সর্বোপরি এই দেশের মানুষ যেন শান্তিতে, সুশাসনের মাঝে থাকতে পারে তার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে।
আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্যের দাবিসহ প্রতিটি সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে জনগণের পাশে থেকে কথা বলেছি। কিন্তু আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি এখনো সিন্ডিকেট টিকে আছে। মানুষের যে ন্যায্য অধিকার, আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলি তা উত্তরণের জন্য জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ করে দেওয়া দরকার। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য আবারও যদি আমাদের কথা বলতে হয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা কথা বলবো।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই দ্রুততার সাথে আগামী দিনের সংস্কার, বিচার ও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করুন। একই সাথে জনগণের অধিকার যত দ্রুত আপনারা জনগণের কাছে এবং তাদের মালিকানা ফেরত দেবেন তত দ্রুত এ-দেশের সমস্যা সমাধান হবে।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি তিলে তিলে গড়ে উঠা দল। বিএনপির স্থান জনগণের মাঝে। মনে রাখতে হবে বিগত সময়ে জনগণের অধিকার হরণ করে রেখেছিল কর্তৃত্ববাদী সরকার। সেই জনগণকে তাদের অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি করার দায়িত্ব আপনাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের)। সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে ঐতিহাসিকভাবে ইতিহাসে আপনাদের নাম লিখা থাকবে। আর যদি সেটি সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন বা অন্য কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।
বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে বিএনপির শতশত নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, আমরা তাদের ফেরত চাই। আসাদের হাজার-হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। জুলাইয়ে ছাত্র জনতার আন্দোলনের গণ-অভ্যুত্থানের সময়েও আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আমাদের অনেক নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছেন, পঙ্গুত্ব নিয়ে অনেক কষ্টে তারা দিনাতিপাত করছেন, অনেকেই অসুস্থ অবস্থায় আছেন আমরা তাদের জন্য দোয়া করি তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।
প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১০ মাস হতে চলেছে দেশ পরিচালনা করছে। দেশের মানুষ বুকভরা আশা নিয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে আছে। জনগণের ওপর যে নির্যাতন, নিপীড়ন চালানো হয়েছে কত দ্রুততার সাথে তার বিচার তারা দেখতে পাবেন। কত দ্রুত এই দলবাজ নির্বাচন কমিশন, দলবার বিচার ব্যবস্থা, দলবাজ প্রশাসন এবং দলবাজি করে যেসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল তা থেকে মুক্ত হয়ে দ্রুত জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার চার্জশিট কেন ১১৮ বার পেছানো হয়েছে? আর এই ১০ মাসেও বেশ কয়েকবার পেছানো হয়েছে তার কারণ কি? বিগত ১৭ বছরে ৬৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন, এসব হত্যাকান্ডেরও তো বিচার হওয়া দরকার। আমাদের তো জানার আগ্রহ আছে ইলিয়াস আলীকে কারা গুম করেছে, তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে না কেন? আমরা জানতে চাই- বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আপার স্বামীকে যে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারা কারা? আজকে আপনার ক্ষমতায় আছেন আমরা আপনাদেরকে প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে বলবো না কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আজকে যদি এগুলো জনসম্মুখে না আসে তাহলে কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য কথা থেকে যাবে। মানুষ আশাহত হবে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার কার্যক্রম চালিয়েছেন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছেন তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা উচ্চ আদালতে দেখলাম সংস্কার একটু হলো তারপর সংস্কার স্তব্ধ হয়ে গেল বন্ধ হয়ে গেল, এটা তো হওয়ার কথা না।
আওয়ামী দোসরদেরকে যদি না সরাতে পারেন তাহলে আপনাদেরকে তারা ভুল পথে পরিচালিত করবে। এই বিষয়টা আপনাদেরকে মাথায় রেখেই সংস্কার কার্যক্রম চালাতে হবে।
বর্ধিত সভায় সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন-এর সভাপতিত্বে ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত) এডভোকেট আব্দুল হকের সঞ্চালনায়
প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ্ব জি. কে. গউছ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম নূরুল।
বর্ধিত সভায় এডভোকেট মল্লিক মইন উদ্দিন সোহেল, এডভোকেট শেরেনূর আলী, এডভোকেট মাসুক আলম, আ.ত.ম. মিছবাহ, আনিসুল হক, এডভোকেট জিয়াউর রহমান শাহিন, মো. মুনাজ্জির হোসেন সুজন, কামরুজ্জামান কামরুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।