পথে যেতে যেতে : পথচারী
- আপলোড সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ১২:৩৭:৪০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ১২:৩৭:৪০ পূর্বাহ্ন

বছর ঘুরে এলো পবিত্র ঈদ-উল-আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়ে থাকে। আরবি চন্দ্র মাসের ১০ তারিখ এই উৎসব পালিত হয়। আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র কাবিল ও হাবিলের দেওয়া কোরবানি থেকে এই ইতিহাস সৃষ্টি হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় হযরত ইব্রাহিম (আ.)- আল্লাহ তা’আলা স্বপ্নে দেখালেন আল্লাহর রাস্তায় তার প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করতে। হযরত ইব্রাহিম (আ.) একে একে বিভিন্ন বস্তু আল্লাহর রাস্তায় দান করলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়। অবশেষে ইব্রাহিম (আ.) ভেবে দেখলেন তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তার ¯েœহের প্রথম পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)। অবশেষে বিবির সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নিলেন ¯েœহের পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কেই জবাই করে কোরবানি করবেন। ঠিক তাই হলো। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর ইসমাইল (আ.)-কে গোসল করানো শেষে, ভালো পোশাক পরিধান করিয়ে নিয়ে গেলেন ময়দানে। তার আগে ইসমাইল (আ.)-এর হাত ও চোখ বাঁধতে বললেন তিনি নিজেই। কারণ চোখে চোখ রাখলে বাপ-ছেলের মধ্যে প্রীতির পরশ আসতে পারে। যেমন কথা তেমন কাজ। পিতা ইব্রাহিম (আ.) নিজ সন্তানের গলায় ছুরি চালালেন। কিন্তু গলা কাটলো না। এরপর ছুরি ফেলে দিলেন পিতা। ভাবলেন ছুরির ধার কমে গেছে। ফেলে দেওয়া ছুরি যখন পাথর উপর গিয়ে পড়ল তখন সেই পাথর কেটে দু’ভাগ হয়ে গেল। তাতে বুঝা গেল ছুরির ধার ঠিকই আছে। কারণ ইসমাইল (আ.)-এর গলায় ইসলামের মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) একাধিকবার চুমো খেয়েছেন। তাই সেখানে ছুরি কাজ করছে না।
অবশেষে ইব্রাহিম (আ.) যখন ঘাড়ের দিক থেকে ছুরি চালাতে উদ্যত হলেন ঠিক তখনই পাশে দেখতে পেলেন একটি দুম্বা সেখানে উপস্থিত। তখনই নিজ সন্তান ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে সেই দুম্বাকে কোরবানি করলেন। সেখান থেকেই শুরু হলো কোরবানি। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।
পশু কোরবানির আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। যেমন ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়তে হয়। নামাজের আগে ভালোভাবে গোসল করা সুন্নত। উত্তম ও নতুন পোশাক পরা, সুগন্ধী ব্যবহার করা সুন্নত। কেননা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) সুগন্ধী ব্যবহার করতেন। সুগন্ধী আমরা সবাই এমনিতেই ব্যবহার করি। নামাজের আগে কিছু না খাওয়া ধর্মীয় মতে মুস্তাহার। ঈদগাহে একসাথে যাওয়া এবং অন্যপথে ফেরত আসা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে সালাত আদায় করতেন।
হযরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশ পরিচয় সম্পর্কে জানাযায় যে, তার এক ভাই ছিলেন নাম ইসহাক। সৎ মা ছিলেন নাম সারা। চাচা ছিলেন লাহোর। চাচাতো ভাই লোট। তার সন্তানাদি ছিলেন যথাক্রমে:- নবায়োভ, কেদর, মিরসম, আদবেল, মিশুম, মসা, দেদ, তেমা, যিটুর, নাফিশা ও কেদমা।
ঈদ-উল-আজহার উৎসব শুধুই আনন্দ-হাসির নয়, এই উৎসব ত্যাগের। অনেকে প্রশ্ন করেন- পশু জবাই করে তো মুসলমানরা গোশত খান। তাহলে আল্লাহর কাছে যায় কি? আল্লাহর কাছে যায় শুধু মনের ইচ্ছা। পশুকে যেভাবে কোরবানি দেয়া হয়েছে ঠিক সেভাবেই কোরবানি দিতে হবে মনের পশুত্বকে। আমাদের সমাজে আজ পশুত্বের উৎসব চারিদিকে। কী বীভৎসতা সমাজে দেখছি আমরা। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পিতা-মাতার প্রতি অন্যায় আচরণ, সন্তান-সন্ততি, প্রতিবেশী-আত্মীয়-স্বজনের প্রতি যে অমানবিক আচরণ তা পরিহার করার শিক্ষা দেয় ঈদ-উল-আজহার কোরবানি উৎসব। আমরা যেন তা ধারণ করতে পারি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ