মিলেছে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান
- আপলোড সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১২:৩৯:২৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১২:৩৯:২৪ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ::
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুদকের একটি দল হাসপাতালটিতে অভিযানে নামে। তারা হাসপাতালে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়মিত না আসা, ডিসপেনসারিতে ওষুধের গড়মিল, রোগীদের মধ্যে কাক্সিক্ষত ওষুধ বিতরণ না করা, ওয়াসরুম অপরিচ্ছন্ন, নি¤œমানের খাবার পরিবেশনসহ নানা অনিয়মের সত্যতা পায়। এছাড়াও সরকারি টেন্ডারে ক্রয়কৃত ওষুধের ক্রয় রেজিস্ট্রার পাওয়া যায়নি বলে আভিযানিক দল জানিয়েছে। প্রতি বছর ওষুধ ক্রয়েই সবচেয়ে বড়ো দুর্নীতি হয়ে থাকে।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী দুদকের সংশ্লিষ্টরা জানান, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার সিলেট থেকে অভিযানে আসে একটি দল। অভিযানে অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে ফাঁকিবাজি, বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অনুপস্থিতি, কর্তব্যে অবহেলা, বিলম্বে এসে দ্রুত চলে যাওয়া লক্ষ করেন তারা। প্রতিদিন অর্ধেকের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আভিযানিক দল। তবে অভিযানকালে সবচেয়ে বড়ো দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে সরকারি ২-৩ কোটি টাকার ওষুধের ক্রয় রেজিস্ট্রার গায়েব। প্রতি বছর হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে এই ওষুধ ক্রয় করে বলা হলেও ঠিকাদারের সঙ্গে আতাত করে বরাদ্দের পুরো ওষুধ না দিয়ে সামান্য ওষুধ গুদামজাত করে বরাদ্দ লোপাট করা হয়।
অভিযানে সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, কর্মকর্তাদের মধ্যে আজ দু’জন অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত থাকলেও তাদের ছুটির আবেদন পাননি তারা। এছাড়াও হাসপাতালের সরকারি ডিসপেনসারিতে সরাসরি সরকারি ওষুধ আসে এবং ক্রয়কৃত ওষুধ সংগ্রহ করা হয় তার রেজিস্ট্রার পাওয়া যায়নি। সেখানে দেখা গেছে এন্টিবায়োটিক ওষুধ বাস্তবে থাকলেও রেজিস্ট্রার খাতায় এন্ট্রি করা নেই। কিন্তু গোডাউনে অনেক এন্টিবায়োটিক ওষুধের মজুদ মিলেছে। এছাড়াও রোগীদের বাথরুমগুলো অপরিষ্কার, রান্নাঘর অপরিষ্কার ও নি¤œমানের খাবার পরিবেশনের সত্যতা পেয়েছে দুদকের আভিযানিক দল।
দুদকের আভিযানিক দলের প্রধান ও সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন, আমরা যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছি বেশির ভাগেরই সত্যতা মিলেছে। কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত সবাই দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করেন। ওষুধের ডিসপেনসারিতেও ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। খাবার থেকে শুরু করে সেবা কার্যক্রমের সব শাখাতেই অনিয়ম পাওয়া গেছে। আমরা এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
দুদকের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার আরও জানান, হাসপাতালের বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন পণ্য ও টেন্ডারের মাধ্যমে ওষুধ ক্রয়ের কোন ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। ওষুধ ক্রয় ও সরবরাহ নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রার ফলো করার কথা থাকলেও এমন নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে সরকারি ওষুধ তসরুপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্টোরকিপারের দায়িত্বে থাকা সাবেক কর্মচারী সুলেমান হাসপাতালে কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে এমন অনিয়ম করে আসছিলেন।
দুদক কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বলেন, আমরা হাসপাতাল ঘুরে দেখছি, হাসপাতালে রোগীদের ওয়ার্ডে স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক। হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন তারা মানসম্মত সেবা পাচ্ছেনা। হাসপাতাল প্রধানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ডাক্তাররা নিয়ম মেনে অফিস করেন না। সপ্তাহের প্রায়দিন হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকলেও কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ২৬ মে অফিস প্রধানসহ আনোয়ার নামে এক কর্মচারী কোনো আবেদন ছাড়া ছুটিতে রয়েছেন। হাসপাতালে বায়োমেট্রিক হাজিরা থাকলেও সেটি কেউ ফলো করছেন না। অনেকেই দেরিতে ডিউটিতে আসেন এবং অফিস টাইমের আগেই চলে যান। হাসপাতালের স্টোর রুমে অনেকে এন্টিবায়োটিক মেডিসিন পেলেও রেজিস্ট্রারে বলা হচ্ছে ওষুধ নেই। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা এন্টিবায়োটিক ওষুধ পান না।
দুদকের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন, মে মাসে কিছু টেন্ডার হয়েছে। অথচ টেন্ডারের কোনো ফাইলপত্র কর্তৃপক্ষ আমাদের দেখাতে পারেননি। আমরা হাসপাতালের কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছি। তা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
এদিকে দুদকের আকস্মিক অভিযানকালে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন। তাই দাপ্তরিক অনেক কিছুই জানা ছিলো না ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দের। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ছুটিতে রয়েছেন। আমি মাত্র একদিনের জন্য দায়িত্বে রয়েছি। দাপ্তরিক অনেক কিছুই আমি জানিনা। দুদকের টিম আসছিলেন। তারা হাসাপাতালে ওয়ার্ড, স্টোর রুম, ফার্মেসি পরিদর্শন করেছেন। অনেক ডকুমেন্টস আমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন। দুদক হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে হাসপাতালে দুদকের এমন অভিযানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে এমন অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান সচেতনমহলের।
সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসা দিল হক নামের রোগীর স্বজন বলেন, দুদক আসার পরে হাসপাতালে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সতর্ক। অন্য দিনের চেয়ে আজ হাসপাতালের পরিবেশ ভিন্ন ছিল। দুদকের কর্মকর্তারা রোগীদের সাথে কথা বলেছেন। বিষয়টি অনেক ভালো লেগেছে।
সমাজকর্মী নুরুল হাসান আতাহের বলেন, এমন অভিযান বার বার হওয়া প্রয়োজন। এতে কর্তৃপক্ষ দায়িত্বে সচেতন থাকবেন। সেবার মান উন্নত হবে। আশা করি দুদক অভিযান অব্যাহত রাখবে।
এ বিষয়ে জানতে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ