শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি :: শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাবিলাখাই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আকল মিয়ার খড়ের ঘরের খড় আগুনে পোড়ার ঘটনায় একই গ্রামের প্রতিপক্ষ গ্রামের নুরুল হকের পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে এনে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে গ্রামবাসী বলছেন, খড়ের ঘরের খড় আগুনে পোড়ার ঘটনা সত্য, তবে কে বা কারা, খড়ে আগুন দিয়েছে তারা জানেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। পাশপাশি প্রায় দেড় মাস আগে একই গ্রামের নুরুল হকের চারটি গরু অজ্ঞাতনামা চোরেরা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ নুরুল হকও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। গরু চুরি ও খড় পোড়ানোকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। স্থানীয় ও এলাকাবাসী জানা যায়, গত শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টায় কাবিলাখাই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আতল মিয়ার খড়ের ঘরে আগুন লাগলে গ্রামবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। খড়ের ঘরটিতে গ্রামের আবু মিয়া, সুজাত মিয়া, রুহুল আমিন ও আব্দুর রাজ্জাক আকল মিয়ার খড় রক্ষিত ছিল। আগুনটি লেগেছিল আবু মিয়ার রক্ষিত খড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন গ্রামবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। এ ঘটনায় গত (১১ মে) রবিবার আব্দুর রাজ্জাক আকল মিয়া বাদী হয়ে গ্রামের প্রতিপক্ষ মৃত হাজী উলফত উল্লাহ’র ছেলে নুরুল হক, নুরুল হকের ছেলে রাজিব মিয়া ও তাদের গৃহকর্মী সাগর মিয়াকে আসামি করে শান্তিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আবু মিয়াকে রাখা হয় প্রধান সাক্ষী। অপরদিকে গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রতিপক্ষ মৃত হাজী উলফত উল্লাহ’র ছেলে নুরুল হকের গরুর ঘর থেকে তালা কেটে ৪টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। ঘটনার পরদিনই নুরুল হক শান্তিগঞ্জ থানায় তার গরু চুরির ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ঐ সময় চুরি যাওয়া গরুগুলোর কোন সন্ধান পাননি তারা। কিছুদিন আগে গ্রামের কয়েক জনের মাধ্যমে জানতে পারেন গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আকল মিয়া, মৃত লিয়াকত মিয়ার ছেলে মো. সুজাত মিয়া ও সুজাত মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া গরু চুরির রাতে নুরুল হকের বাড়ির রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর কাছে নুরুল হক বিচারপ্রার্থী হলে গত ৫ মে রাতে গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার নুর মিয়ার বাড়িতে বিচার সালিশ বৈঠক হয়। বিচার অমান্য করে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আকল মিয়াসহ তার পক্ষের লোকজন নুর মিয়াকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে বৈঠক থেকে চলে যান। এসময় পরিস্থিতি উত্তেজনা দেখা দিলে গ্রাম্য সালিশ ব্যক্তিরা নুরুল হকের লোকজনকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। পরে গ্রাম্য সালিশ ব্যক্তিরা ঘটনাটি নিয়ে আবার বসার আশ্বাস দেন। গ্রাম্য সালিশ অমান্য না করার জন্য অনুরোধ করে নুরুল হকের লোকজনকে থানায় মামলা না করার জন্য বলেন। এ ঘটনা উল্লেখ করে গত রবিবার (১৮ মে) নুরুল হক বাদী হয়ে তার গরু চুরির ঘটনায় ও প্রাণে হত্যার হুমকির ঘটনা উল্লেখ করে গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আখল মিয়া, মৃত লিয়াকত মিয়ার ছেলে মো. সুজাত মিয়া ও সুজাত মিয়ার ছেলে রিপন মিয়াকে আসামি করে শান্তিঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। খড়ের ঘরে আগুন লাগার ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আখল মিয়ার মামলার প্রধান সাক্ষী মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আবু মিয়া জানান, আমি অসহায় মানুষ। জায়গা জমি আমার নাই। প্রতি বছরের মতো এই বছরও আমার গরুর জন্য কিছু খড় শুকিয়ে আখল মিয়ার খড়ের ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু গত কয়দিন আগে আমার রাখা খড়ের মধ্যে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে আসি আগুন নেভানোর জন্য। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভাতে সক্ষম হন। এ সময় আখল মিয়া সহ সবাই আমরা গ্রামবাসীকে জানিয়েছে কে আগুন লাগিয়ে আমরা দেখিনি। পরের দিন সকালে আখল মিয়া ও উনার ভাই আব্দুল ছোবহানসহ তাদের লোকজন আমাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে বলে, তর কারণে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। সব ক্ষতিপূরণ তুই দিবে। না হলে আমরা যে ভাবে বলবো সে ভাবে চলতে হবে। তারা আমাকে বলেছে, নুরুল হক চাচার বিরুদ্ধে তারা মামলা করবে, ফেসবুকে লাইভ দিবে, আমি যেন নুরুল হক চাচা ও উনার ছেলে রাজিবের বিরুদ্ধে কথা বলি। পরে আমার জান বাচাতে তাদের কথা মতো আমি তাদের মামলায় সাক্ষী হিসেবে নাম লেখাই ও ফেসবুকে লাইভে কথা বলি। আমি যা বলেছি তা স¤পূর্ণ মিথ্যা ও তাদের সেখানো কথা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নূরুল হক জানান, আমার ৪টি গরু দুই আড়াই মাস আগে আমার গুরুঘর থেকে চুরি হয়েছে। সে সময় অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। গত কয়েকদিন মাস খানেক আগে আমি জানতে পারি গরুগুলো আখল মিয়া ও তার লোকজন চুরি করেছে। এ নিয়ে গ্রামে সালিশ বৈঠক হয়েছে। গ্রাম্য সালিশ অমান্য করে আখল মিয়া আমাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে বৈঠক থেকে চলে যায়। পরে গ্রামের লোকজন আমাদের বিষয়টি দেখে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। গরুচুরির ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই তারা তাদের খড়ের ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের বিরোদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। যা স¤পূর্ণ একটি নাটক। তার অভিযোগের প্রধান সাক্ষী আবু মিয়াকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আখল মিয়া জানান, আমার খড়ের ঘরে আমি সহ আবু মিয়া, সুজাত মিয়া ও রুহুল আমিনে খড় রক্ষিত ছিল। নুর মিয়ার ছেলে রাজিব কিছুদিন আগে হুমকি দেয়। আমার খড়ের ঘরের খড় পুড়িয়ে দিবে। গত (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টার সময় তারাই আগুন লাগিয়েছে। গ্রামের সবাই ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আবু মিয়ার প্রথমে আগুন লাগিয়েছে। ফেসবুক লাইভে সে সময় স্বীকার করেছে যে, নুরুল হক ও রাজিব মিয়া তার খড়ে আগুন লাগিয়েছে। আমরা তাকে কেন ভয় দেখাবো। এখনতো মনে হচ্ছে যে, আবু মিয়াকে নুরুল হক ও তার ছেলে ভয় ভীতি দেখিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলাচ্ছে। গরু চুরির ঘটনায় তাদের কোন সম্পৃক্ততা নাই। আমরা নিরীহ মানুষ, গ্রামের বিচার সালিশকারী সবাই নুরুল হকের মানুষ। গ্রামের সালিশ ব্যক্তি গয়াছ মিয়া জানান, গরু চুরির ঘটনায় আমরা গ্রামবাসী মিলে সালিশ বৈঠকে বসেছিলাম। আখল মিয়ার লোজকন সালিশ অমান্য করে বৈঠক থেকে চলে যায়। পরে নুরুল হকের লোকজনকে আমরা শান্ত থাকতে বলি। বিষয়টি আমরা আবার উভয় পক্ষকে নিয় গ্রাম্য শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে বসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আখল মিয়ার লোকজন আমাদেরকে পাত্তাই দেননি। কয়েকদিন আগে আখল মিয়ার খড়ের ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এর পরেও আমরা আখল মিয়ার লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেছি। উভয়পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন করার জন্য। আখল মিয়া আমাদের কথা না শুনে তিনি নুরুল হক ও তাঁর ছেলে রাজিবকে আসামী করে মামলা করেছেন। এখন আবার সেই মামলার সাক্ষী আমাদের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়ে বলছেন, আখল মিয়ার লোকজন তাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে মিথ্যা স্বাক্ষ্য ও ফেসবুকে লাইভ করিয়েছেন। সাবেক ইউপি সদস্য ও গ্রাম্য সালিশ ব্যক্তি নুর মিয়া জানান, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি উভয়পক্ষের সমস্যা সমাধান করার। কিন্তু আখল মিয়া গ্রাম্য সালিশ অমান্য করেছে। এখন উভয়পক্ষই মামলা-মোকদ্দমায় চলে গেছেন। আমরা গ্রামের শান্তিশৃংখলা বজায় রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আখল মিয়ার লোকজন সেটাকে ঘোলাটে পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন। নুরুল হক সাহেবের গরু চুরি হয়ছে দুই আড়াই মাস আগে। গত মাস খানেক আগে নুরুল হক সাহেব আমাদের কাছে বিচার প্রার্থী হয়ে বলেছেন আখল মিয়া তাঁর গরুগুলো চুরি করেছেন। আমরা বিচারের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আখল মিয়ার লোকজন সেটা মানেন নি। পরে ঘর জালানোর ঘটনা ঘটলেও আমার চেষ্টা করেছি উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার। সেটাও সম্ভব হয়নি আখল মিয়ার লোকজনের কারণে। শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম আলী জানান, খড়ের ঘর পুড়ানো ও গরু চুরির বিষয়ে দরগাপাশা ইউনিয়নের কাবিলাখাাই গ্রামের উভয়পক্ষের দুটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুটি বিষয় গুরুত্বের সাথে আমরা দেখছি।