সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫ , ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হাওরের সমস্যা সমাধানে স্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হবে : যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল আরিফ আ.লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপি’র সদস্য হতে বাধা নেই : রিজভী দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিশ্বম্ভরপুর ইউএনও’র পদত্যাগ দাবিতে লংমার্চ হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে গেল স্বামী চলতি মাসে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে ২৩টি মিটিং করেছে : হাসনাত আব্দুল্লাহ জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্বোধন আমাদের সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেলা পুলিশের কল্যাণ ও অপরাধ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত গোলা ভরে ধান তুলে স্বস্তিতে কৃষক সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ভারত ও পাকিস্তান অত্যন্ত বিনয়ী মানুষ ছিল মুবিন শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ ১১দফা দাবিতে স্মারকলিপি নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের শুনানি ১৩ মে ঈদে টানা ১০ দিন ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি, বেসরকারি অফিসও বন্ধ দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, বিএনপি দেখাল শক্তি-সমর্থন জুবাইদার ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান জামালগঞ্জ-জয়নগর সড়ক এক যুগেও সংস্কার হয়নি : দুর্ভোগে লাখো মানুষ মাদকাসক্ত যুবকের ছুরিকাঘাতে প্রতিবেশী খুন এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত,লর্ড অব ওয়ার

  • আপলোড সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০১:১৯:০১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০১:১৯:০১ পূর্বাহ্ন
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত,লর্ড অব ওয়ার
আমীন আল রশীদ বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এগুলোই আবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। অর্থাৎ যাদের দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্বে যুদ্ধ প্রতিরোধ করা তথা শান্তি রক্ষা করা, তারাই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বানায় ও বিক্রি করে। হলিউডের খ্যাতিমান অভিনেতা নিকোলাস কেজের ‘লর্ড অব ওয়ার’ সিনেমার প্রথম দৃশ্যে একটি অস্ত্র কারখানা পেছনে রেখে নায়ক বলেন: ‘পৃথিবীতে ৫৫ কোটির বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তার মানে প্রতি ১২ জন মানুষের জন্য একটি করে অস্ত্র। এখন প্রশ্ন হলো, বাকি ১১ জনের হাতে কীভাবে অস্ত্র তুলে দেয়া যাবে?’ কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং জবাবে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের হামলার মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ যখন যুদ্ধে জড়িয়ে গেলো, তার পরদিন পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খ্যাতিমান শিল্পী নচিকেতা বলেছেন, ‘সারা পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে, যত হিংসা ছড়িয়েছে, সব কটির নেপথ্যে বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। সব যুদ্ধ স্পন্সর করা। আমি প্রমাণ করে দেব।’ তার ভাষায়, ‘যুদ্ধ মানেই মুনাফার খেলা। কাদের মুনাফা, সেটা বুদ্ধিমানেরা সহজেই বুঝে যান।’ ‘লর্ড অব ওয়ার’ সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। নিকোলাস কেজ নিজেই এর নায়ক বা প্রধান চরিত্র - যিনি একজন আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী। সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা তো বটেই, বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গেও তার সখ্য। তিনি উন্নয়নশীল ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে অস্ত্র সরবরাহ করেন। এই ভয়ঙ্কর ব্যবসা কীভাবে তার সংসার তছনছ করে দেয়, সেটি দেখানোর পাশাপাশি ইউরি অরলভের (নিকোলাস কেজ) চরিত্রের মাধ্যমে দেখা যায়, অস্ত্র ব্যবসা কেবল টাকার জন্য চালানো হয় না - এটি অনেক সময় রাজনীতি, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। উন্নয়নশীল বা রাজনৈতিকভাবে অস্থির দেশগুলোতে যুদ্ধ চলমান থাকলে অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে, ফলে ব্যবসায়ীদের লাভ হয়। অর্থাৎ, যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হয়, ব্যবসায়ীদের ততই লাভ। ফলে তারা চায় না পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক বা সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোয় স্থিতিশীলতা আসুক। এই সিনেমায় দেখানো হয় যে, বড় শক্তিধর দেশগুলোর সরকার অনেক সময় নিজেদের স্বার্থে বা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে পরোক্ষভাবে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে। তারা হয়তো সরাসরি যুদ্ধ শুরু করে না, কিন্তু অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করে। বাস্তবতা হলো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী দেশগুলোই সবচেয়ে বড় অস্ত্রের কারবারি। এই সিনেমায় নায়ক ইউরির সঙ্গে অস্ত্রের চালান নিয়ে আফ্রিকার একটি সংঘাতপূর্ণ দেশে যান তার আদরের ছোট ভাই - যিনি পারিবারিক নানা সংকটের কারণে একপর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে ওঠেন। ছোট ভাই সেখানে গিয়ে আবিষ্কার করেন যে তার ভাইয়ের সরবরাহকৃত অস্ত্র দিয়ে শিশু সৈনিক, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা যুদ্ধ করে। চোখের সামনে তিনি দেখতে পান একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কিছু সদস্যরা কীভাবে একটি এলাকায় ঢুকে নিরীহ নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। এই দৃশ্য ইউরির ভাইয়ের মনে গভীর রেখাপাত করে এবং একপর্যায়ে তিনি একটি অস্ত্রবোঝাই ট্রাকের দিকে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারলে ট্রাকটি ধ্বংস হয়ে যায়। এ সময় ওই অস্ত্রের ক্রেতাদের একজন তাকে মারতে উদ্যত হলে ইউরির ছোট ভাই তাকে হত্যা করেন। এ সময় পাল্টা গুলিতে তারও বুক ঝাঝরা হয়ে যায়। চোখের সামনে আপন ভাইয়ের এই করুণ মৃত্যু ইউরিকে বিষণœ করে দেয়। তিনি উপলব্ধি করেন, অস্ত্র ব্যবসায়ীরা প্রাপকের নৈতিকতা বা উদ্দেশ্য নিয়ে খুব একটা চিন্তা করেন না। ফলে তাদের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণহত্যা, শরণার্থী সংকট ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এই সিনেমায় দেখানো হয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা কীভাবে আন্তর্জাতিক আইনের ফাঁকফোকর গলে পার পেয়ে যায়। যেমন, একটি দেশে যুদ্ধ নিষিদ্ধ হলেও পাশের দেশ ব্যবহার করে অস্ত্র পাচার করে যুদ্ধ চালানো হয়। বাস্তবেও অনেক অস্ত্র চুক্তি হয় নামমাত্র কাগজে-কলমে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। অর্থাৎ সংঘাত মানেই যে অস্ত্রের চাহিদা এবং তার ফলে পৃথিবীর বহু সংঘাতের পেছনে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা এই সিনেমার প্রতিপাদ্য। ইউরি বলেন, “ওভ ও ফড়হ'ঃ ফড় রঃ, ংড়সবড়হব বষংব রিষষ.” অর্থাৎ তিনি নিজে যদি এই ব্যবসা ছেড়েও দেন, অন্য কেউ না কেউ এটা করবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে যুদ্ধ ও সংঘাত যে থামবে না বা থামতে দেয়া হবে না - লর্ড অব ওয়ারে সে কথাই বলা হয়েছে। মোদ্দা কথা হলো, পৃথিবীতে ‘লর্ড অব ওয়ার’ বা যুদ্ধের হোতা হচ্ছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা - যারা বেশ শক্তিশালী। অনেক সময় তারা এতটাই ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে যে, অস্ত্র কেনা-বেচার বিষয়টি মাথায় রেখে তারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নীতি, বিশেষ করে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়নে রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সফল হয়। আবার অনেক সময় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন তাদের টাকা ও দলের ভেতরে নানাবিধ প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে। যুদ্ধকে সাধারণত ধ্বংস, মৃত্যু ও মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এই ভয়াবহতার পেছনে রয়েছে এক বিশাল অর্থনৈতিক চক্র - যা যুদ্ধকে শুধু চালিয়ে যেতে নয়, বরং নতুন যুদ্ধ সৃষ্টি করতেও প্ররোচণা দেয়। বিশ্বরাজনীতির ছদ্মবেশে অস্ত্র বাণিজ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত স্বার্থ, করপোরেট মুনাফা এবং ভূকৌশলগত প্রভাব বিস্তারের অদৃশ্য খেলায় যুদ্ধ হয়ে ওঠে লাভজনক ব্যবসা। কাশ্মীর সংঘাতের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ভারতের কোনো একটি সিনেমায় (সম্ভবত ‘হায়দার’) একজন সৈনিক তার সিনিয়রকে প্রশ্ন করেছিলেন, সবাই মিলে বসে কেন কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করছে না? সিনিয়র তখন ওই সৈনিককে বলেন, যদি সমস্যার সমাধান হয়েই যায়, তাহলে এই সমস্যা জিইয়ে রেখে যারা ব্যবসা করছে, রাজনীতি করছে - তাদের কী হবে? সম্প্রতি কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পরে এক সাংবাদিক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কাশ্মীর ইস্যুটার সুরাহা করা কি খুব কঠিন? তিনি বলেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে ভারত-পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর কোনো কাজ থাকবে? সুতরাং, ‘লর্ড অব ওয়ার’ শুধু অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই নয়, বরং যুদ্ধের হোতা আরও অনেকে। [আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও লেখক]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স