সুনামগঞ্জ , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ , ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লক্ষ্য একটাই, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন : মির্জা ফখরুল মাদকসহ গ্রেফতারের পর জামিনে এসে প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে মামলা! ৭২-এর সংবিধানকে টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে বিএনপি : নাহিদ ইসলাম ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের শুল্ক স্টেশন পরিদর্শন পথে যেতে যেতে : পথচারী হাসন তোরণ থেকে আলফাত স্কয়ার শুরু হচ্ছে চার লেন সড়ক নির্মাণকাজ নতুন আঙ্গিকে ‘হোটেল নূরানী’র শুভ উদ্বোধন জনগণের সেবার দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করতে হবে : অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সম্ভব-অসম্ভবে ভোটের প্রস্তুতি শাপলা প্রতীক কেউ পাবে না: বিবিসি বাংলাকে সিইসি সুনামগঞ্জে এনসিপি’র নেতৃত্বে সাজাউর রাজা সুমন এনসিপি’র কমিটিতে নাম আসা হারুনুর রশিদ বললেন- “তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত” পাসপোর্ট ইস্যু বেড়েছে চার গুণ শহর যানজটমুক্ত করতে ১৬ জুলাই থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ : জেলা প্রশাসক একটি মাত্র সেতুর অভাবে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ পাঁচ গুণিজনকে সম্মাননা প্রদান ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে শর্তসাপেক্ষে চৌধুরী মামুনকে ক্ষমা করা যেতে পারে : ট্রাইব্যুনাল ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি, স্পষ্ট হচ্ছে অদৃশ্য শত্রু : তারেক রহমান চার উপজেলায় এসিল্যান্ড নেই, দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরা শহরের খাল উদ্ধারে ফের শুরু হচ্ছে অভিযান

রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মোড়, কঠিন চ্যালেঞ্জে দেশ

  • আপলোড সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ১১:৫১:৫৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ১১:৫১:৫৭ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মোড়, কঠিন চ্যালেঞ্জে দেশ
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট আবারও নতুন মোড় নিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে আরও ১ লাখ ১৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্তে এসে আশ্রয় চাচ্ছে। পাশাপাশি, রাখাইনে মানবিক করিডর স্থাপনের জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আহ্বান বাংলাদেশের জন্য নতুন এক কূটনৈতিক ও মানবিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া সরকারি হিসাবের ১৩ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান। অন্যদিকে নতুন ১ লাখ ১৩ হাজারকে আশ্রয় দেওয়া এবং রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা পৌঁছাতে জাতিসংঘের অনুরোধ। এই দুইয়ে মিলে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করা এখন বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাখাইনে মানবিক করিডর নিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যের জেরে দেশে সমালোচনার ঝড় তৈরি হয়। রাজনৈতিক ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের অবশ্যই রাজনৈতিক ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া দরকার ছিল। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সরকার এককভাবে নিতে পারে না। এর মধ্যেই মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পালিয়ে আসা ১ লাখ ১৩ হাজারের বেশি নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক অঙ্গ সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিফিউজি এজেন্সি (ইউএনএইচসিআর)। গত সোমবার এই অনুরোধ জানানো হয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আমাদের অবস্থান হলো জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে। তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সংকট চলছে। দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ভূমিক¤প-পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারকে সহায়তা প্রদান করা। প্রেস সচিব সতর্ক করে বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সংকট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে। এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত সরকারি সংস্থা রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিশন কমিশনের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে আমাদের চিঠি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সেখানে মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশে আসা নতুন প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে আমরা এখনো কোনো উত্তর দেইনি। কারণ আমাদের আশঙ্কা, এভাবে ক্রমাগত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে থাকলে ফের পুনর্বাসনের জন্য তাদের মিয়ানমারে পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠবে। সম্প্রতি করিডর বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) একটা হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পরই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ বিপর্যয়ের কথা বলেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। সীমিত ভূখ-, সংকুচিত সম্পদ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার ঘাটতির মধ্যে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। নতুন করে আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করলে কক্সবাজারের ক্যা¤পগুলোয় অনির্বচনীয় মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আর কোনো অবকাঠামোগত বা মানবিক সক্ষমতা নেই নতুন করে এত সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে, সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে থাকলেও, এই সংকটের মূল দায় মিয়ানমারেরই। কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক মানবিক সহানুভূতির জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে, যা বিদেশি সহযোগিতার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি করছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি দেশের কূটনৈতিক ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। তারা মনে করেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ চাপ সৃষ্টি করেছে। নতুন রোহিঙ্গার ঢল এই চাপ আরও বাড়াবে। কক্সবাজার অঞ্চলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মসংস্থান, খাদ্য সংকট ও নিরাপত্তা ইস্যু আরও তীব্র হবে। ক্যা¤পগুলোর ভেতরে অপরাধ, চরমপন্থি সংগঠনগুলোর অনুপ্রবেশ এবং মাদক পাচার ইতিমধ্যে একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা এই নিরাপত্তা হুমকিকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কূটনৈতিক বিশ্লেষক আমেনা মহসীন বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘিœত হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যাবে, যা ভারত, চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর বলেন, সরকার এ নিয়ে সুস্পষ্ট কৌশল প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সক্রিয়তা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশকে জাতিসংঘ, আসিয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
লক্ষ্য একটাই, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন : মির্জা ফখরুল

লক্ষ্য একটাই, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন : মির্জা ফখরুল