সুনামগঞ্জ , শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ , ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মাছ বাজারে প্রতারণার ফাঁদে ক্রেতারা বালুপাথর মহালের ইজারা বন্ধ নয়, ইজারা প্রথার বাতিল চাই ১১ মাসে অর্ধ শত কোটি টাকার বালু লুট জগন্নাথপুরে ৩ আসামি গ্রেফতার টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঁজা সেবন ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, ৫ পর্যটককে কারাদন্ড মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালিত “মধ্যনগরে রাজহংস হাউজ বোট বিএনপি নেতার দখলে” শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ কাদাজলে নষ্ট ভাটির বন্দরের সুনাম সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার চোরাকারবারিদের কোনো ছাড় নয় : বিজিবি অধিনায়ক টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র : অবহেলায় ধ্বংসের পথে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আদারবাজারে সুপেয় পানি ও শৌচাগার সংকট ‘৩১ দফা’ বাস্তবায়নে বিএনপি নেতা অ্যাড. নূরুল ইসলামের গণসংযোগ শান্তিগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ পাঠদান ব্যাহত, নিজ ক্যাম্পাসে ইন্টার্নশিপ করতে চান শিক্ষার্থীরা আবারও ছাতক সীমান্তে ২০ জনকে পুশইন পৌর শহরে ক্লিনিং ক্যাম্পেইন, মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসের আহ্বান গাঁজার চালানসহ মাদক কারবারি হেলাল আটক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার, বন্দুক, পাইপগান, গুলিসহ গ্রেফতার ৪ শান্তিগঞ্জে সিএনজি ও প্রাইভেট কার সংঘর্ষে আহত ৫

উৎপাদন অনুযায়ী ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়নি, হতাশ হাওরাঞ্চলের কৃষক

  • আপলোড সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ০২:০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ০২:০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন
উৎপাদন অনুযায়ী ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়নি, হতাশ হাওরাঞ্চলের কৃষক
বিশেষ প্রতিনিধি :: চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে পুরোদমে চলছে ধান কাটা। আবাদকৃত ৮০ ভাগ বেশি জমির ধান কর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হলেও এবার অন্য বছরের চেয়ে কম ধান ক্রয় করছে সরকার। জেলায় উৎপাদিত প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৬ টাকা কেজি দরে ১৪৪০ টাকা মণে সরাসরি ১০ হাজার কৃষকের কাছ থেকে এই ধান সংগ্রহ করবে খাদ্য বিভাগ। গত ২৪ এপ্রিল সরকারিভাবে ধান ক্রয় কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এদিকে গেল বছর প্রত্যেক কৃষক সরকারি গুদামে ৩ মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পারলেও এবার মাত্র দেড় মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। জেলায় পৌনে চার লাখ কৃষকের মধ্যে মাত্র ১০ হাজার কৃষক সরকারি গুদামে ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন। এমন সিদ্ধান্তে হতাশা এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। তারা ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, স্থানীয় পর্যায়ে ১০০-১২০০ টাকা মণে ধানের বাজার রয়েছে। সরকারিভাবে ধানের ধানের দাম ১৪৪০ টাকা হলেও ক্রয়ের পরিমাণ কম থাকায় এবং পরিবহন ব্যয়সহ নানা দাপ্তরিক নিয়ম-কানুনের ‘হয়রানি’ এড়াতে গুদামে ধান বিক্রি করতে অনীহা রয়েছে কৃষকদের মাঝে। তাই খাদ্যগুদামে না এসে পাইকার ও ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করছেন তারা। শান্তিগঞ্জের উপজেলার বীরগাঁও গ্রামের কৃষক মহিবুর বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি ৭০-৮০ মণ ধান বিক্রি করবো। মাত্র দেড় টন ধান বিক্রি করতে উপজেলার গুদামে নিয়ে গিয়ে আমাদের পোষাবে না। বাকি ধান আমাকে পাইকারের কাছে বিক্রি করতে হবে। তাছাড়া বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে ধান নিয়ে যেতে পরিবহনসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হবে। এছাড়া এখনই আমার টাকার প্রয়োজন। ধান কাটা শ্রমিক ও মেশিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাই পাইকারের কাছেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। আমার মতো এলাকার অনেক কৃষক স্থানীয় পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করছেন। হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, উৎপাদন অনুযায়ী ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়নি। জেলায় ৪ লাখ কৃষক রয়েছেন। আর সরকারি গুদামে ধান দিতে পারবেন মাত্র ১০ হাজার। একজন কৃষক মাত্র দেড় টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। এই অল্প পরিমাণ ধান গুদামে আনতে এবং গুদামের সিস্টেম ফলো করতে গিয়ে কৃষকরা অনীহা প্রকাশ করেন। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি কৃষকরা গুদামে না এসে স্থানীয় পর্যায়ে ধান বিক্রি করছেন। কৃষকের কাছ থেকে ৩-৪ মেট্রিক টন করে ধান কেনা হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, হাওরে ধান কাটা পুরোদমে চলছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হাওরের নিচু এলাকার ধান কর্তন শেষ হয়ে যাবে। এবার ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকদের সুবিধার জন্য ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ও পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। জেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ূন কবির বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সুনামগঞ্জে এবার ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন। জাতীয়ভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে সুনামগঞ্জেও কমেছে। এ নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। বর্তমানে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে তা অর্জিত হলে আমরা বাড়তি বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করবো। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বোরো চাষাবাদে জড়িত ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৫ পরিবার। কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭ জন। চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স