সুনামগঞ্জ , বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে : এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শান্তিগঞ্জ ইউএনও’র উদ্যোগ : বেসিক নলেজ যাচাই পরীক্ষা সম্পন্ন জামালগঞ্জে উত্তম কৃষি চর্চা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ইজিবাইকের যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে যাত্রীদের মানববন্ধন হাওর ভাতায় বৈষম্যের অবসান, খুশি স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৩০৫ পিস ইয়াবাসহ যুবক আটক পথে যেতে যেতে : পথচারী নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে একসাথে কাজের আহ্বান শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, রোগীদের চরম ভোগান্তি বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক সুনামগঞ্জে ২ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত নদ-নদীর পানি বাড়লেও হাওরে পানি কম বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে অধিকার’র মানববন্ধন ভাটির হাওরে ক্ষেতমজুররাই নব্য উৎপাদক শক্তি
স্ম র ণ

গরিবের ডাক্তার ছিলেন রাশেন্দ্র তালুকদার

  • আপলোড সময় : ২৩-০৪-২০২৫ ০৮:০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৩-০৪-২০২৫ ০৮:০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
গরিবের ডাক্তার ছিলেন রাশেন্দ্র তালুকদার
রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু ডা. রাশেন্দ্র কুমার তালুকদার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস (চৌকা) গ্রামে ১৯৪৬ সালের পহেলা এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিলেটে লেখাপড়া করেন। সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমএমবিএস পাস করেন এবং প্রথম দিকে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন। বছর দুয়েক পরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ হাসপাতালে বদলি হন। সেখান থেকে তিনি দিরাই হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন এবং দিরাই হাসপাতালের সরকারি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি দিরাই-শাল্লার জনগণকেও সেবা দিতে থাকেন। অল্প কিছু দিনের ভেতরেই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এক পর্যায়ে তিনি দিরাই শহরেই বাসাবাড়ি তৈরি করেন এবং বসবাস শুরু করেন। দিরাই হাসপাতালের আরএমও পদ থেকে সিভিল সার্জন হয়ে মাদারীপুরে বদলি হলে দিরাই-শাল্লার লোকজনের ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে চাকরি থেকে তিনি অব্যাহতি নেন এবং দিরাইয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। আশির দশকের দিকে দিরাইয়ে তখন কোনো ধরনের কোনো প্যাথলজিক্যাল সুবিধা ছিলো না। অর্থাৎ কোনো ধরনের ব্লাড, ইউরিন, এক্স-রেসহ কোনো ধরনের কোনো সুবিধাই ছিল না। জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে সিলেট পাঠানো হতো। এই অবস্থায় ডাক্তার রাশেন্দ্র তালুকদার নিজের হাতযশ বলে রোগীদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে ফেলতেন। ফলে দিরাই-শাল্লার শতশত গ্রামের হাজার হাজার লোকজন ডাক্তার রাশেন্দ্র তালুকদারের কাছেই চলে আসতেন চিকিৎসার জন্য। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা নৌকা করে বর্ষার দিনে রাশেন্দ্র তালুকদারের বাড়ির পাশেই সুবিধাজনক স্থানে নৌকা নোঙ্গর করে রোগীরা চেম্বারে চলে আসতেন। কোনো কোনো রোগী রাসেন্দ্র ডাক্তারের ফি বাবদ ২০/৩০ টাকা দিলে তিনি সানন্দেই তা গ্রহণ করতেন। একজন এমএমবিবিএস ডাক্তার হয়ে কখনো কোনো রোগীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিতেন না। যে যখন যা দেয় তাই তিনি সাদরে গ্রহণ করতেন। প্রায় ২৫ ভাগ রোগীদেরকে তিনি ফ্রি চিকিৎসা দিতেন। অনেকদিন ডাক্তার রাসেন্দ্র তালুকদারের চেম্বারের সামনে রোগীদেরকে জিজ্ঞাসা করতাম দিরাই-শাল্লায় আরো অনেক ডাক্তার আছেন আপনারা এখানে কেনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। জবাবে রোগীরা বলতেন আমাদের বিশ্বাস আমাদের ভগবানের পরেই ডাক্তার রাশেন্দ্র তালুকদার। সেই রাশেন্দ্র তালুকদারকে যদি একবার দেখাতে পারি তাহলে আমাদের রোগবালাই ভালো হয়ে যাবে। এই বিশ্বাসের ওপরেই ভর করে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকি। অনেক রোগী ৩০ মাইল ৪০ মাইল দূর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেটে, বর্ষার দিনে নৌকায় করে রাশেন্দ্র ডাক্তারকে এক নজর দেখানোর জন্য চলে আসতেন। প্রায় ৩ যুগ ধরে ডাক্তার রাশেন্দ্র তালুকদার দিরাই-শাল্লার লোকজনদেরকে এই সেবা দিয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জের জামাইপাড়ার কাঠুরিয়া বাসার নৃপ্রেন্দ্র ভূষণ তালুকদারের মেয়ে নমীতা রানী তালুকদার কৃষ্ণার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দিরাই শহরে নিজ অর্থায়নে রামকৃষ্ণ আশ্রম স্থাপন করেন। বহু গুণের অধিকারী গরীবের ডাক্তার কিংবদন্তী কীর্তিমানের মহাপ্রয়াণ হলো ২১ এপ্রিল সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচ টার দিকে দিরাই পৌরশহরের কলেজ রোডের নিজ বাসায়। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো। নিঃসন্তান রাশেন্দ্র তালুকদারের স্ত্রী আগেই প্রয়াত। ডা. রাশেন্দ্র তালুকদারের মৃত্যুতে দিরাইবাসী হারালো তাদের ভালোবাসার মানুষকে। শাল্লাবাসী হারালো তাদের প্রিয়জনকে। আমরা তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স