সুনামগঞ্জ , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫ , ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
“রাজাকারদের উৎখাতে স্বেচ্ছাসেবক দলই যথেষ্ট” ১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ, ৮১৯ অপহরণ আজ রাষ্ট্রীয় শোক শহরে জামায়াতের প্রচার মিছিল রেমিট্যান্স যোদ্ধা থেকে সফল উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম লক্ষ্য একটাই, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন : মির্জা ফখরুল মাদকসহ গ্রেফতারের পর জামিনে এসে প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে মামলা! ৭২-এর সংবিধানকে টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে বিএনপি : নাহিদ ইসলাম ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের শুল্ক স্টেশন পরিদর্শন পথে যেতে যেতে : পথচারী হাসন তোরণ থেকে আলফাত স্কয়ার শুরু হচ্ছে চার লেন সড়ক নির্মাণকাজ নতুন আঙ্গিকে ‘হোটেল নূরানী’র শুভ উদ্বোধন জনগণের সেবার দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করতে হবে : অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সম্ভব-অসম্ভবে ভোটের প্রস্তুতি শাপলা প্রতীক কেউ পাবে না: বিবিসি বাংলাকে সিইসি সুনামগঞ্জে এনসিপি’র নেতৃত্বে সাজাউর রাজা সুমন এনসিপি’র কমিটিতে নাম আসা হারুনুর রশিদ বললেন- “তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত” পাসপোর্ট ইস্যু বেড়েছে চার গুণ শহর যানজটমুক্ত করতে ১৬ জুলাই থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ : জেলা প্রশাসক একটি মাত্র সেতুর অভাবে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ

হাওরে চড়ক উৎসবে মানুষের ঢল

  • আপলোড সময় : ১৫-০৪-২০২৫ ১১:৫২:৩০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-০৪-২০২৫ ১১:৫৮:৪৮ অপরাহ্ন
হাওরে চড়ক উৎসবে মানুষের ঢল
শামস শামীম ::
হাওরে পাকা বোরো ধান দখিনা হাওয়ায় দোলছে গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশক্ষেতের আইল ধরে হাটছেন কৃষক
ধান কাটা ও মাড়াইও চলছে সামান্য। নয়মৌজার সারিসারি করচগাছগুলোও গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমে শীতল বায়ু দিয়ে যাচ্ছিল। হাজার হাজার নারী পুরুষ গোল হয়ে চড়ক উৎসবকে ঘিরে জড়ো হয়েছিলেন। সনাতন ধর্মীরা শিব দেবতা ও পাবর্তীর নামে মন্ত্র জপছিলেন। পাগনার হাওরের চারপাশে যখন এই আবহ লক্ষণীয় তখন বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন শেষ বিকেলে কৃষি ও ফসলকে ঘিরে বাঙালির আদি লোকাচার চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী চড়ক উৎসব উদযাপিত হলো জামালগঞ্জের পাগনার হাওরের দুটি গ্রামে।

ছয়হারা ও খুজারগাঁও গ্রামে গতকালের সনাতন ধর্মাবলম্বিদের উৎসবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বিরাও যুক্ত হয়ে আনন্দ উদযাপন করেছেন।

উৎসবকে কেন্দ্র করে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণকারী প্রায় তিন শতাধিক সন্ন্যাসী ১৫ এপ্রিল ক্ষৌরকার দিয়ে পরিচ্ছন্ন হয়ে মাছ-মাংস ভোজন করে গৃহে ফিরেছেন।

জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরঘেরা গ্রাম ছয়হারা। দোলতা ও কানাইখালী ঘেরা এই গ্রামটির চারদিকেই হাওর। গ্রামের কান্দায় প্রায় ৫শ বছর ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বিরা চৈত্রসংক্রান্তির দিনে এই উৎসব পালন করেন। বাঙালির কৃষিভিত্তিক এই লোকাচারটি এখনো উৎসবের রূপে দেখা গেছে।

এ উপলক্ষে গ্রামে হাওরের কান্দায় বসেছিল মেলাও। যেখানে খেলনা, প্রসাধনীসহ গৃহস্থালি পণ্যের পসরাও দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে খুজারগাঁও গ্রামেও। এছাড়াও জেলার বিশ্বম্ভরপুরে চড়ক উৎসব পালিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, চৈত্র সংক্রান্তির এই দিনে শত শত বছর ধরে গ্রামে এই চড়ক পূজার আয়োজন করা হয়। দিনে দিনে এটি উৎসবে রূপ নেয়।

সাধারণ সনাতন ধর্মাবলম্বিদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষজনও এতে অংশ নেন। ছয়হারা গ্রামবাসীর উদ্যোগে সন্ন্যাসীরা পূজায় নানা আচারাদি পালন করেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বি নারী-পুরুষ সন্ন্যাসীদের ঘিরে আচারাদি পালনের পাশাপাশি স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনায় মানসিকও (দেবতার উদ্দেশ্যে মানিত বস্তু বা উপকরণ) দেন। তারা ভোগ ও লুট বিতরণ করেন। সন্ন্যাসীরা পুরো চৈত্রমাস গ্রাম থেকে বেরিয়ে এলাকার প্রতিটি গ্রামে উৎসব উপলক্ষে মাধুকরি করে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন ফিরে এসে পরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি পূজার আয়োজন করেন। শিবের পাট বা আসন নিয়ে গ্রামগুলোতে গিয়ে, কালি নৃত্য, কৌতুক, গান ও ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন তারা। ওই সময় প্রতিটি গ্রামের লোকজন ভিক্ষা হিসেবে সন্ন্যাসীদের হাতে চাল, ডাল, নগদ টাকা, সোনাদানাও তুলে দেন। এগুলো সংগ্রহ করে চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন গ্রামে ফিরেন সন্ন্যাসীর দল। পুরো মাধুকরিকালে সন্ন্যাসীদের দলনেতা ও সহ দলনেতা অন্যান্য সন্ন্যাসীদের পরিচালনা করেন। এবার ছয়হারা, খুজারগাঁও ও বিশ্বম্ভরপুরে চড়ক পূজায় প্রায় তিন শতাধিক সন্ন্যাসী সন্ন্যাসব্রত নিয়েছিলেন। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজার দিনে পিঠে বড়শি গেথে দুই সন্ন্যাসীকে শিবদন্ডীতে ঘুরোনা হয় বিকেলে। এর পাশাপাশি ভূমি শয্যা (ভূমিতে গর্ত করে মাটি চাপা), জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, দোরলপূজা ও জিহ্বায় ধারালো লোহার শলাকা গেথে হেটে যাওয়াসহ নানা লোকাচার পালন করেছেন।
এগুলো তান্ত্রিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে পালন করা হয় বলে জানান সন্ন্যাসীরা। কৃষি ও ফসলের মঙ্গলের জন্য বাঙালি সংস্কৃতির এই পুরনো লোকাচার পালিত হয় বলে জানান স্থানীয়রাও।
এবারের তিনটি উৎসবে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। সনাতন ধর্মী নারীরা মাঠে শিবদন্ডীর নিচে শিবপাট নিয়ে বসে থাকা সন্ন্যাসীদের ভক্তির মাধ্যমে মনোবাসনা পূরণের জন্য টাকা-পয়সাসহ নানা উপকরণ দান করেন।
এদিকে সন্ন্যাসীদের বিদায়ের মাধ্যমে মঙ্গলবার এই উৎসবটি শেষ হয়। এই দিন সন্ন্যাসীরা মাধুকরির মাধ্যমে যে ভিক্ষা পেয়েছিলেন তা দিয়ে গ্রামবাসীকে ভোজন করিয়ে নিজেরাও মাছ-মাংস খেয়ে সন্ন্যাসব্রত ত্যাগ করে আবার নিজেদের গৃহে প্রবেশ করেন। স্থানীয় ক্ষৌরকাররা তাদের দাড়িগোফ ছেটে পরিচ্ছন্ন করেন।

খুজারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত পুরকায়স্থ বলেন, আমাদের গ্রামে এবারও চড়ক পূজায় ভূমিশয্যা ও দোরলপূজাও হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ছয়হারা চড়কপুজার প্রধান সন্ন্যাসী বিভাষ তালুকদার বলেন, আমাদের গ্রামে শত শত বছর ধরে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গৌরী ও শিব দেবতাকে আমরা সাধন-ভজন করে কৃষি ও ফসলের জন্য এই লোকাচার পালন করি। আমরা ১৮ চৈত্র সন্ন্যাসে বের হয়ে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন গ্রামে ফিরেছি। চড়ক পূজা শেষে মঙ্গলবার ক্ষৌরকার দিয়ে পরিচ্ছন্ন হয়ে মাছ-মাংসে ভোজন করে গৃহে প্রবেশ করেছি। আমরাসহ এবার জেলার বিভিন্ন স্থানে হওয়া চড়ক পূজায় তিন শতাধিক সন্ন্যাসী লোকাচার শেষে ঘরে ফিরেছেন।

ছয়হারা গ্রামের বাসিন্দা লেখক ও আইনজীবী কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, চড়ক উৎসব একটি আদিম লোকাচার। কৃষিভিত্তিক সমাজে এখনো এই লোকাচারটি কিছু কিছু গ্রামে টিকে আছে। ফসলের মঙ্গল কামনায় বংশ পরম্পরায় এই লোকাচারটি আদি সংস্কৃতিরও জানান দেয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
“রাজাকারদের উৎখাতে স্বেচ্ছাসেবক দলই যথেষ্ট”

“রাজাকারদের উৎখাতে স্বেচ্ছাসেবক দলই যথেষ্ট”