হোসাইন আহমদ :: শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকর্মীদের বির”দ্ধে হারতাল, গাড়ি ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে গত ১৫ বছরে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মামলার বাদী পুলিশ। নেতাকর্মীরা এসব মামলায় হাজিরা দিতে দিতে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। বিএনপির আইনী সহায়তা সেল থাকলেও অর্থের যোগান দিতে পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ২০০৯ সাল থেকে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দমন পীড়ন, হামলা মামলায় ছিলেন জর্জরিত। শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফার”ক আহমদ ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক আমিনুর রশিদ আমিন বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে আমরা ও আমাদের নেতাকর্মীরা একাধিক হামলা মামলার শিকার হয়েছি। বিশেষে করে পাগলা ও শান্তিগঞ্জ সদরে হরতাল পালন, অবরোধ ও পিকেটিং করতে গিয়ে পুলিশের দ্বারা একাধিক গায়েবী মামলার আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোতে নেতাকর্মীদেরকে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত ও অনেককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সরকারের কাছে পুলিশের দেয়া গায়েবী মামলা থেকে মুক্তি চান বিএনপির নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সূত্র জানায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দ্বিধা-বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্বে আছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফার”ক আহমদ, অপর অংশের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনসার উদ্দিন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফার”ক আহমদ ও সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ আমিনের নেতৃত্বাধীন বলয়ের নেতাকর্মীদের একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বির”দ্ধে ২০০৯ সাল থেকে মাঠে-ময়দানে সরকার পতনের আন্দোলন সংগ্রামে মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করেছেন তারা। বিএনপির হরতাল অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে মামলায় জর্জরিত থাকলেও বিএনপির নেতাকর্মী এবং দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করায় গত ১৫ বছরে একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসকল মামলায় উপজেলার দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। বিগত সময়ে নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া ও স্ত্রী সন্তান, পরিবার রেখে বাইরে অবস্থান করেন। সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি হিসাবে এমএ মান্নান দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সজ্জন রাজনীতিবিদ হলেও তার নির্বাচনী এলাকার শান্তিগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থান থাকার কারণে বিএনপির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ ধরপাকড় এবং রাজনৈতিক গায়েবি মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করে। তবে বিএনপির গুটিকয়েক নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে হাবিল কাবিল খ্যাত আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেন। দলীয় নেতাকর্মীরা আরও জানান, গত ১৫ বছর থেকে এটাই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু দিন বদল হয়েছে, পতন হয়েছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের। দীর্ঘদিন পর শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির একটি শক্ত অবস্থানে বিবাদমান দুইটি গ্র”পই রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। আনছার উদ্দিন বলয় ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফার”ক আহমদ ও আমিনুর রশিদ আমিনের নেতৃত্বাধীন বলয়ের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক গায়েবি মামলার আসামি হয়েছেন। তবে সাবেক চেয়ারম্যান ফার”ক আহমদ ও আমিনের রশিদ আমিন বলয়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় তাদের বির”দ্ধে ৫/৬টি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন এসকল গায়েবি মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা। শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়ন বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি নুর”ল ইসলাম বলেন, বিগত দ্বাদশ নির্বাচনে ডামি প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে শান্তিগঞ্জের একজন সুপরিচিত নেতা ডামি প্রার্থী শাহীনুর পাশার পক্ষে কাজ করার কথা বলে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। ঐ নেতা বিগত ১৫/১৬ বছরে কখনো উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে ভোটে অংশগ্রহণমূলক কাজে জড়িত ছিলেন না। তিনি সব সময়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে গেছেন ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে। গত দ্বাদশ নির্বাচনেও নিজ দলীয় কর্মীদের দিয়ে ডামি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারাবরণকারী নেতাকর্মীরা এ নেতার ব্যাপারে অবগত আছেন বলে আমি মনে করি। শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ আমিন বলেন, মা, মাটি, মানুষের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র রাজনৈতিক আদর্শে আমি বিশ্বাসী এবং বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। আমি শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের বির”দ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে আন্দোলন করি। গত দ্বাদশ নির্বাচনের আগেও আন্দোলন সংগ্রম চালিয়ে যাওয়ায় আমাকে সহ আমাদের দলের শতাধিক নেতাকর্মীদের বির”দ্ধে পুলিশি গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদেরকে প্রতি মাসে ২/৩ বার করে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফার”ক আহমদ বলেন, আমাদের বির”দ্ধে মামলা আর নতুন কিছু নয়। বিগত ১৫ বছর ধরেই নেতাকর্মীদের বির”দ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার। এ উপজেলায় আমরা মাঠে ময়দানে নেতাকর্মীদের নিয়ে হরতাল, পিকেটিং করলেও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে সুবিধা নিয়েছেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে। এখন সুবিধা নিতে মাঠে ময়দানে সুবিধাভোগীদের ঢল নেমেছে। আমরা দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন দেখতে চাই। আশা করি কেন্দ্র থেকে দল তাদেরকে মূল্যায়ন করবে। আমরাও দুর্দিনে কাছে পাওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।