বিশেষ প্রতিনিধি ::
৯ মার্চ দিরাইয়ে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘটিত সংঘর্ষে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে উভয়পক্ষের লোকজন।
সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান ও আশিক মিয়ার গ্রুপের মধ্যে ঘন্টব্যাপী এই সংঘর্ষে অন্তত ১৮জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন উভয়পক্ষের আরও ৩০ জন লোক। রণভূমি গ্রামের সংর্ষে গুলাগুলির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে দেখা দেয় প্রতিক্রিয়া। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রকাশ্যে এমন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজন। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকেরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলেও মামলা হয়ছে এক পক্ষের অনুকূলে। অপরদিকে, ঘটনার সপ্তাহ দিন পার হওয়ার পরও কোনো পক্ষের কাছ থেকে এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সচেতনমহল। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় ও মাঠপর্যায়ে কঠোর আইনের শাসন বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্রমশই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার, খাস জমিদখল, জলমহাল, গ্রামীণ কোন্দলসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দিরাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সংঘর্ষ হয়ে থাকে।
গেল বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত উপজেলার তাড়ল, মাতারগাঁও, কুলঞ্জ, রায়বাঙ্গালিসহ বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ৬ টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষের বেশিরভাগটিতেই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
৪ অক্টোবরের খাসজমি নিয়ে উপজেলার মাতারগাঁও গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে নইমুল ইসলাম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়।
৩ ডিসেম্বর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুলঞ্জ ইউনিয়নের রাড়ইল গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন বলে জানা যায়।
এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার রায়বাঙ্গালী গ্রামে মাদ্রাসার ফান্ডের টাকা নিয়ে সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়। এতে ২০ জন গুলিবিন্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।
সর্বশেষ ৯ মার্চ তাড়ল ইউনিয়নের রণভূমি গ্রামের জমি সক্রান্ত বিরোধের জেরে লুৎফুর চেয়ারম্যান ও আশিক মিয়ার লোকদের মধ্যে সংঘর্ষে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রর ব্যবহার হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় একটি ভিডিওতে দেখাযায় আশিক মিয়ার পক্ষে অন্তত ৫ জন অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর গুলি ছুঁড়েন। এর বিপরীতে লুৎফুর মিয়ার পক্ষের লোকদেরও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করতে দেখা যায়। সংঘর্ষের এই ঘটনায় আশিক মিয়ার পক্ষের দিরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। লুৎফুর চেয়ারম্যানের পক্ষে একাধিক গুলিবিদ্ধ থাকলেও এখনো কোনো মামলা নেয়নি দিরাই থানা পুলিশ।
তবে দিরাই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রণভূমির ঘটনায় আশিক মিয়ার পক্ষের একটি মামলা নেয়া হয়েছে। অপরপক্ষও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। যাছাই-বাছাই শেষে তাদের অভিযোগটিও আমলে নেয়া হবে। ঘটনার অনেকগুলো দিন পার হলেও ভিডিওতে দেখা কোনো অস্ত্রই উদ্ধার করতে না পারলেও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। ফিল্ডে অস্ত্র থাকলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা। যেভাবেই হোকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। অস্ত্র উদ্ধারে আমরা সিরিয়াসলি কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট অফিসার্স ইনচার্জকে সেইভাবেই নির্দেশনা দেয়া আছে। এদিকে অবৈধ অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ। সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা ছবি ও ভিডিও পেয়েছি। অবৈধ অস্ত্রধারীদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের ধরতে অভিযান চলমান রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
দিরাইয়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি
উদ্ধার হয়নি রণভূমির অস্ত্র
- আপলোড সময় : ১৮-০৩-২০২৫ ০৯:৪৯:৫০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৩-২০২৫ ০৯:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ