সুনামগঞ্জ , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ , ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শাপলা প্রতীক কেউ পাবে না: বিবিসি বাংলাকে সিইসি সুনামগঞ্জে এনসিপি’র নেতৃত্বে সাজাউর রাজা সুমন এনসিপি’র কমিটিতে নাম আসা হারুনুর রশিদ বললেন- “তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত” পাসপোর্ট ইস্যু বেড়েছে চার গুণ শহর যানজটমুক্ত করতে ১৬ জুলাই থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ : জেলা প্রশাসক একটি মাত্র সেতুর অভাবে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ পাঁচ গুণিজনকে সম্মাননা প্রদান ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে শর্তসাপেক্ষে চৌধুরী মামুনকে ক্ষমা করা যেতে পারে : ট্রাইব্যুনাল ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি, স্পষ্ট হচ্ছে অদৃশ্য শত্রু : তারেক রহমান চার উপজেলায় এসিল্যান্ড নেই, দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরা শহরের খাল উদ্ধারে ফের শুরু হচ্ছে অভিযান তাহিরপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ এনসিপি’র সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন অপহরণের ১৪ দিন পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ব্যবসায়ীকে উদ্ধার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার বিরুদ্ধে টিআরের বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে অক্টোবরে আসামি থেকে রাজসাক্ষী : সুবিধা-অসুবিধা জুয়া ও মাদকে সয়লাব শ্রীপুর বাজার জগন্নাথপুরে এমপি প্রার্থী এমএ কাহারের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি
টাঙ্গুয়ার হাওর এখন - ১

হারিয়ে যাচ্ছে মিঠাপানির মাছের জলাশয়

  • আপলোড সময় : ০৬-০৩-২০২৫ ০১:২৫:০৩ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-০৩-২০২৫ ০১:৩৩:১২ পূর্বাহ্ন
হারিয়ে যাচ্ছে মিঠাপানির মাছের জলাশয়
শামস শামীম::
টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে এসে :: টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের গ্রাম জয়পুরের কৃষক আলমগীর বাড়ির পেছনের বাগমারা জলমহাল দেখিয়ে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা তনে দেখতাছি, টাঙ্গুয়ার আশেপাশে বহুত জাগা গভীর আছিল। ই গভীর এখন বান্দের মাইট্যে ভরি গেছে। আগে পানি থাকতো। অনে গরু ঘাস খায়, আমরার বাচ্চা-কাচ্চারা খেলে।’ টাঙ্গুয়ার হাওরের মিঠাপানির মাছের আধার ঐতিহ্যবাহী বিল চোখের সামনে হারিয়ে যেতে দেখে এই কৃষকের কণ্ঠে আফসোস ঝরে। শুধু বাগমারা খালই নয় ‘ছয় কুড়ি বিল’ খ্যাত হাওরটির বাগমারা গ্রুপ বিল, টানেরগুল, মাঝেরগুল, লামারগুল, রাঙামাটি, সমসাগর, এরাইল্যাকুনা, নাইন্দা, সংসা ও ছড়ার বিলসহ অন্তত ১০টি বিল এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। বিশ্বঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওর সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। মাদার ফিসারিজ হিসেবে পরিচিত দেশেন ৬টি স্পটের একটি এই হাওর। ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয় কুড়ি বিল’ এই প্রবাদটি টাঙ্গুয়ার হাওরের বিপুল মৎস্যসম্পদের ঐতিহ্যের আধার জলাশয় মাছের পাশাপাশি জলজ উদ্ভিদ বৈচিত্রেরও আধার। মাছের সঙ্গে নানা প্রজাতির জলজ-জীববৈচিত্র্যেরও বাস্তুসংস্থান আছে হাওরের মিঠাপানির জলাশয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ ও অপরিকল্পিত ফসলরক্ষা বাঁধের মাটিতে প্রতিনিধি ভরাট হয়ে ‘নয় কুড়ি’ বিলের হাওরটি এখন চরম সংকটে। জলাশয়গুলো শুকিয়ে এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)-এর ‘বায়োডাইভারসিটি অফ টাঙ্গুয়ার হাওর : এ রামসার সাইট অফ বাংলাদেশ’ দ্বিতীয় ভলিয়ামে উল্লেখ রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ৫৪টি বিল (জলাশয়) ছিল। এগুলোকে হাওর জলাভূমির উদ্ভিদ, মিঠাপানির মাছ এবং জলাভূমি সংশ্লিষ্ট বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে উল্লেখ করে বারোমাসই বিলগুলোতে পানি থাকতো বলে উল্লেখ করা হয়। সূত্র মতে, টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাশয়ের সম্মিলত আয়তন প্রায় ৩ হাজার ৬৫১.৮৭ হেক্টর। সর্বশেষ জরিপে বাফার জোনে ৪০টি ও কোর জোনে ৯টি জলাশয়ের উল্লেখ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ১৬০ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০২.৩৬ হেক্টরই স্থায়ী জলাশয় বা বিল। এখনো টাঙ্গুয়ার হাওরকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ জলাভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে কর্মরত বেসরকারি সংগঠন সিএনআরএস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সনে বাংলাদেশ সরকার রামসার (আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি) কনভেনশন অনুমোদন করে। ১৯৯৭ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে হাওরটিকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার পর ২০০০ সালে হাওরের মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণের উদ্যোগ ও টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০০৩ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর টানা দেড় যুগের বেশি সরকারি-বেসরকারিভাবে সংরক্ষিত হয়। ২০১৬ সনে প্রকল্প শেষ হওয়ার পর আবার ২০২২ সনে প্রতিবেশ প্রকল্পে বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএ কাজ করছে। তবে এই কাজও গত মাস থেকে বন্ধ আছে। সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সনের এক জরিপে টাঙ্গুয়ার হাওরের বিলগুলোতে ৩৫ পরিবারের ১৪১ জাতের মাছ পাওয়া গিয়েছিল। দেশের মিঠাপানির মাছের অর্ধেক আছে এই হাওরটিতে। ছিল বিপন্ন মহাশোল মাছও। আলমের ডোহার নামের জলাশয়টি চিতল মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গুয়ার হাওর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাটলাই নদীর দুই তীরে জাঙ্গাল কেটে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের মাটি কাটা হচ্ছে। কোথাও কোথাও মাটি কেটে খালের রূপ দেওয়া হয়েছে। কোথাও জমির রূপ পেয়েছে ফসলি ক্ষেতে। এই মাটিই বর্ষায় গড়িয়ে পড়ছে নিচু ভূমি হাওর জলাশয়ে। আর একের পর এক ভরাট হচ্ছে মাছের আধার জলাশয়। আইইউসিএন কর্তৃক টাঙ্গুয়ার হাওরের সর্বশেষ জরিপের তালিকা ধরে বাগমারা গ্রুপ জলমহালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কান্দার পশ্চিম-পূর্ব দিকের জলাশয় শুকিয়ে গেছে। বকের দল খাবার খাচ্ছে। জলাশয়ের পূর্বের অংশে গবাদিপশু খাবার খাচ্ছে। নারীরা লাকড়ি কুড়াচ্ছেন। ভেসে ওঠছে বর্ষায় মাছধরার ‘কিরণমালা চাঁই’। টানেরগুল, মাঝেরগুল, লামারগুল বিলও শুকিয়ে গেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এগুলোর পাশাপাশি রাঙামাটি, সমসাগর, এরাইল্যাকুনা, নাইন্দা, সংসা, ছড়ার বিলও শুকিয়ে গেছে। এছাড়াও বেরবেররিয়া বাগমারা বিলের আরো কয়েকটি গ্রুপ বিল শুকিয়ে গেছে। এভাবে হাওরের ঐতিহ্যবাহী ও মাছের আধার বিলগুলো দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছে। জয়পুর গ্রামের কৃষক মো. নূরুল আমিন তার বাড়ির পেছনের বাগমারা গ্রুপ জলমহাল দেখিয়ে বলেন, বারোমাস এই জলাশয়ে পানি থাকতো। এখন গরু ঘাস খাচ্ছে। ৮-১০ বছরে চোখের সামনে বিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, একসময় এমন দিন আসবে হাওর ও জলাশয় খনন করা লাগবে। না হলে হাওরের ও জলাশয়ের অস্তিত্ব থাকবেনা। জয়পুর গ্রামের কৃষক মনির উদ্দিন বলেন, ‘বিল চর অইগেছে। অনে পাখিও নাই মাছও নাই। বাঁধ দেওয়ানে বিল চর অইগিছে।’ সুনামগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম সদরুল বলেন, কুগ মিশন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে গঠিত পানি উন্নয়ন বোর্ড পরবর্তীতে যত বাঁধ, স্লুইস গেইট, হাওর রক্ষা বাঁধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে সবখানে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পাউবো’র বাঁধের কুফল পড়েছে আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরে। বাঁধের মাটিতে মিঠাপানির মাছের আধার জলাশয়ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে মাছের সঙ্গে জলজ উদ্ভিদও হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে হাওর, বন, মাছ, পরিবেশ, প্রকৌশলী ও স্থানীয় অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে।
প্রাণবৈচিত্র গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, হাওর-জলাশয়-নদী ভরাট হওয়ার দুই কারণ। একটি কারণ আভ্যন্তরীণ। এটা পাউবো’র বাঁধের ফলে। আরেকটি কারণ আন্তঃরাষ্ট্রীয়। ভারতের মেঘালয়ের পাশে অবস্থিত হওয়ায় পলি-বালিরও স্তূপও আসছে। তাই স্থানীয়ভাবে মহাপরিকল্পনার পাশাপাশি আন্তরাষ্ট্রিক সংলাপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কৃষকের ক্ষেত থেকে ও উঁচু জায়গা থেকে মাটি নেওয়া হয় ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য। তবে বর্ষায় এসব মাটির অংশ হাওরের নিচু ভূমিতে গিয়ে জলাশয়সহ নিচু এলাকার ভূমি ভরাট হচ্ছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
এনসিপি’র কমিটিতে নাম আসা হারুনুর রশিদ বললেন- “তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত”

এনসিপি’র কমিটিতে নাম আসা হারুনুর রশিদ বললেন- “তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত”