সুনামগঞ্জ , বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ , ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হাসপাতাল চালুর দাবিতে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জন বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ হাওরে চড়ক উৎসবে মানুষের ঢল ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা, দ্রুত পাকা ধান কাটার আহ্বান বন্যার ঝুঁকিতে হাওরাঞ্চল তিন দপ্তরের ছুটি বাতিল গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত বেড়ে ৫১ হাজার, নিখোঁজ ১১০০০ ধর্মপাশায় দুই আসামি গ্রেফতার বিএনপি’র ঈদ পুনর্মিলনী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নববর্ষ উৎসব ডাকসু নির্বাচনের কমিশন গঠন মে মাসে এই সরকারকে ৫ বছর চাওয়ার কথা আমার নয়, জনগণের : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাগর-রুনি হত্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছালো ১১৮ বার সুনামগঞ্জ শহরের শৃঙ্খলার জন্য অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা নববর্ষের প্রত্যাশা, বিজন সেন রায় বোরো ধান কাটার ধুম, হাওরে বৈশাখী হাসি আমাদের পহেলা বৈশাখ ছাতকসহ দেশের ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিকল্পনা বাতিল ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টির বিক্ষোভ

হাওরে বৃক্ষরোপণের জায়গা পাচ্ছেনা পাউবো!

  • আপলোড সময় : ২৫-০২-২০২৫ ১০:৫০:৪২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-০২-২০২৫ ১১:১১:১১ পূর্বাহ্ন
হাওরে বৃক্ষরোপণের জায়গা পাচ্ছেনা পাউবো!
শামস শামীম::
হাওর জেলা সুনামগঞ্জে এডিবি অর্থায়নে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে বৃক্ষ লাগানোর অগ্রগতি নেই
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই বিভাগের হিসেবে গত প্রায় দেড় বছরে মাত্র ৮ হাজার বৃক্ষ লাগানো হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে হাওরের জলজ উদ্ভিদ হিজল-করচকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যান্য প্রজাতিসহ প্রায় ৭৯ হাজার বৃক্ষ লাগানো শেষ করার কথা।
তবে মওসুম ছাড়া যেসব বৃক্ষ লাগানো হচ্ছে তা বাঁচানো সম্ভব হবেনা বলে জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশবিদরা ভুল সময়ে ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে বৃক্ষরোপণ করায় বৃক্ষ বাঁচে না এবং প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বন্যা সহায়তা পুনঃনির্মাণ জরুরি প্রকল্পে (এফআরইএপি) জেলার ১২টি উপজেলায় স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও বৃক্ষরোপণের জন্য মোটা অংকের বরাদ্দ দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এর মধ্যে ১২ উপজেলায় প্রায় ৭৯ হাজার বৃক্ষ লাগানোর কথা। যাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পে হাওরের জলাবন হিসেবে পরিচিত হিজল-করচ বৃক্ষই লাগানোর নির্দেশনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ, সরকারি সড়ক, সরকারি খাস ভূমিসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাওর জলাভূমির পরিচিত জলসহিষ্ণু বৃক্ষ হিজল-করচকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ লাগাতে হবে। বিশেষ কিছু এলাকায় জায়গার সংকট হলে অন্যান্য ফলজ ও বনজ বৃক্ষও লাগানো যাবে।
জানা গেছে, হাওর-জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বনায়নের জন্য এই সহায়তা করেছে এডিবি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ-১) বৃক্ষ লাগানোর জায়গার সমস্যা নেই জানালেও পওর বিভাগ-২ জানিয়েছে জায়গা সংকটের কারণে তারা বৃক্ষ লাগাতে পারছেনা। পওর বিভাগ-২ এর অধীনে দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অবস্থান। আর সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-১ এ অবস্থিত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ-১) ৬টি উপজেলায় ১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪২ হাজার বৃক্ষ লাগানোর কথা। এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা মাত্র ৫ হাজার বৃক্ষ লাগিয়েছেন। তবে বৃক্ষ লাগানোর উপযুক্ত মওসুম ছাড়া বৃক্ষ লাগানোয় অধিকাংশ বৃক্ষই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছেনা। লাগানোর পর ৬ মাস বৃক্ষ বেঁচে থাকলে তবেই ঠিকাদার বিল পাওয়ার কথা। কিন্তু এখানেও সঠিক নজরদারি হচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ-২) প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পে ৬টি উপজেলায় ৩৭ হাজার বৃক্ষ লাগানোর কথা। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এই বৃক্ষ লাগানোর যুতসই জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। তারা এ পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার বৃক্ষ লাগিয়েছেন। জায়গা সংকটের কারণে বৃক্ষ লাগাতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তারা।
শাল্লা উপজেলার কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আকরামুল হক বলেন, আমাদের এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বৃক্ষ লাগানোর চিত্র চোখে পড়েনি। বৃক্ষ লাগানোর মতো শাল্লায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাস জায়গা রয়েছে। এতে স্থানীয়দের সংযুক্ত করলে প্রকল্পে সফলতা আসবে। হাওরের প্রাণ ও প্রতিবেশ সুরক্ষিত হবে। যা জলবায়ু মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সুনামগঞ্জ হাওর উন্নয়ন সংসদ (হাউস)-এর নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, ভুল সময়ে ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে বৃক্ষরোপণ করায় ফসলরক্ষা বাঁধে সাধারণত বৃক্ষ বাঁচার সম্ভাবনা নেই। এর আগেও অন্যান্য প্রকল্পে তারা বৃক্ষ লাগিয়েছিল। কোথাও বৃক্ষ বাঁচেনি। তিনি বলেন, গাছের চারা লাগিয়ে কেবল দায় সারলেই হবেনা, পরবর্তীতে পরিচর্যাও করতে হবে। অন্যথায় প্রতিবছরই সরকারি তহবিলের অপচয় হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সহ সভাপতি সাইফুল আলম সদরুল বলেন, হাওরে কান্দাসহ (তীর) প্রচুর খাস জমি রয়েছে। যেখানে সহজে হাওরের জলজ উদ্ভিদ হিজল-করচ লাগানো যাবে। জায়গা সংকটের কারণে বৃক্ষ লাগাতে বিলম্ব হচ্ছে এটা ঠিক না। তবে বৃক্ষ লাগানোর পর নজরদারি বা পরিচর্যা না করলে বৃক্ষ বাঁচানো সম্ভব হবেনা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ ইমদাদুল হক বলেন, আমরা বৃক্ষ লাগানোর পর্যাপ্ত জায়গা খুঁজে পাচ্ছিনা। যে কারণে বিলম্ব হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে মেয়াদ শেষ হবার আগে বৃক্ষ লাগানো সম্ভব হবেনা বলে জানান তিনি। তবে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার বলেন, বৃক্ষ লাগানোর জন্য আমার বিভাগে জায়গার সমস্যা নেই। সমস্যা হলো মওসুমের। এখন বৃক্ষ লাগানোর মওসুম নয়। যে কারণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট অর্থ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা বলে জানান তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স