সুনামগঞ্জ , বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কমছে মাছের উৎপাদন, পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন ছায়ানটে গাইবেন রণেশ ঠাকুর ও সোহেল রানা দোয়ারাবাজারে ট্রাকজটে করুণ মৃত্যু মায়ের কোলেই নিভে গেল নতুন প্রাণ সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয়! জমিয়তের অপরাংশের নেতা আব্দুল হাফিজ গ্রেফতার, সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন তাহিরপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৩ জনের কারাদণ্ড বিশ্বম্ভরপুরে টাস্কফোর্স অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য জব্দ ক্ষোভ-শোক-প্রতিবাদে ফুঁসছে জনতা টাঙ্গুয়ার হাওরে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ট্যুরিজমে’ মনঃক্ষুণ্ণ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণের ঘটনার তদন্ত ও আইসিইউ চালুর দাবি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত তাহিরপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ১৬ জনের কারাদণ্ড জামালগঞ্জে “হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ৩ দিন ধরে নিখোঁজ, নদীতে মিলল জমিয়ত নেতার মরদেহ সীমান্তে ২৩টি ভারতীয় গরু জব্দ দিরাইয়ে তিন ভাগে বিভক্ত বিএনপি শীঘ্রই একটি নির্দিষ্ট সময় হাওরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে : উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো অবৈধ স্থাপনা

পথে যেতে যেতে: পথচারী

  • আপলোড সময় : ১১-০২-২০২৫ ০৮:১৭:২০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-০২-২০২৫ ০৮:১৭:২০ পূর্বাহ্ন
পথে যেতে যেতে: পথচারী
“যুগে যুগে বহু মানুষ পৃথিবীতে আসে আবার চলেও যায়। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি রেখে যায় তাদের চিহ্ন।” এমন কথাটি বলেছিলেন মহাপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ। পৃথিবীতে আসা-যাওয়ার মধ্যিখানে কেউ কেউ যে চিহ্ন রেখে যান আর আমরা সেই চিহ্ন খোঁজ করে তাদের স্মরণ করি। তেমিন একজন চিহ্ন রেখে যাওয়া মানুষ গুরুসদয় দত্ত। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ যার জন্ম এককালের সিলেটে অর্থাৎ করিমগঞ্জ মহকুমার বীরশ্রী গ্রামে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে। পিতার নাম রামকৃষ্ণ দত্ত চৌধুরী এবং মাতার নাম আনন্দময়ী দেবী। এই দম্পতির সর্বকনিষ্ঠ সন্তান এই গুরুসদয় দত্ত। ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন তিনি। তার জেঠামশায় ছিলেন রাধাকৃষ্ণ দত্ত চৌধুরী। তিনি ছিলেন বিদ্যানুরাগী। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন মাইনর স্কুল। মেধাবী গুরুসদয় দত্তের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় এখান থেকেই। এই স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ভর্তি হন করিমগঞ্জ ইংরেজি স্কুলে। ১৮৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে পরে শ্রীহট্ট গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রতিটি পরীক্ষায়ই তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। ফলে দেখা যায় সমগ্র আসাম প্রদেশে প্রথম হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২য় স্থান অধিকার করেন। এভাবেই পরিচয় পাওয়া যায় গুরুসদয় দত্তের মেধার। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই গুরুসদয় দত্ত পড়াশোনার পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে ভাবতেন। লোকসংস্কৃতির বিষয়গুলো তাকে খুব আকৃষ্ট করতো। কিন্তু পড়াশোনায় তিনি ছেদ দেননি। এরই ধারাবাহিকতায় উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের তখনকার এফএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তাকে তখন পেয়ে বসে অদম্য অধ্যবসায়ের নেশা। অবসর পেলেই চলে যেতেন লাইব্রেরিতে। বন্ধু-বান্ধবদের কাছে ভালো বইয়ের সন্ধান পেলে ছুটে গিয়ে সংগ্রহ করতেন ভালো ভালো সব বই। এভাবে ওহফরধহ ঈরারষ ঝবৎারপব বা আইসিএস পড়ার জন্য ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ছুটে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে গিয়ে তিনি পেয়ে গেলেন পড়াশোনার নতুন এক জগৎ। সেই জগতে শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা, জ্ঞান আর জ্ঞান। জ্ঞানের অদম্য স্পৃহা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে লাগলো। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আইসিএস পরীক্ষায় অধিকার করলেন ৭ম স্থান। স্বদেশে ফিরে এসে শুরু করলেন কর্মজীবন। তার কর্মজীবন ছিল খুবই সমৃদ্ধ। সারা জীবন তিনি বিভিন্ন সরকারি উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯১২-১৯১৬ পর্যন্ত খুলনা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, যশোর, বগুড়া, ঢাকা, বরিশাল, পাবনা প্রভৃতি জেলায় বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তার শখ চেপে বসে লোকশিল্পের প্রতি। কর্মরত এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ঐ সকল এলাকার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লোকশিল্পের উপাদানসমূহ সংগ্রহ করতেন। দেশের বাইরে গিয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তিনি ইংল্যান্ড সফর করেন। সে সময় ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রয়্যাল আলবার্ট হলে অনুষ্ঠিত অষষ ওহফরধ ঋড়ষশ উধহপব ঋবংঃরাধষ -এ অংশগ্রহণ করেন এবং বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ ঈবপরষ ঔধসবং ঝযধৎঢ় (১৮৫৯-১৯২৪) -এর সাথে পরিচিত হন। এই বিশেষ ব্যক্তিদের সাথে পরিচয়ের সুবাদে তার মনে লোকশিল্পের উপাদান সংগ্রহের ব্যাপারে অশেষ আগ্রহ তৈরি হয়। দেশে ফিরেই তিনি স্থানীয় আগ্রহী ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। অনেকেই তখন তাকে এ বিষয়ে বেশ উৎসাহ ও পরামর্শ দেন। লেগে পড়েন লোকশিল্পের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা প্রকৃতির উপাদন সংগ্রহ করতে। বাংলার আনাচে-কানাচে ঘুরে ঘুরে গুরুসদয় দত্ত মূল্যবান লোক উপাদান সংগ্রহ করতে থাকেন। গুরুসদয় দত্ত ঋড়ষশষড়ৎরংঃ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি ব্রতচারী আন্দোলন নিয়েও কাজ করেন। ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জের বীরশ্রী গ্রামে তিনি শুরু করেন ব্রতচারী আন্দোলন ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে। সমাজে ৫টি ব্রত নিয়ে তিনি এই আন্দোলন চালু করেন। এগুলো হল- জ্ঞান, শ্রম, সত্য, একতা ও আনন্দ। এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে আরম্ভ করেন। ধীরে ধীরে মানুষের উপলব্ধিতে আসতে শুরু করে বিষয়টি। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এই ব্রতচারী আন্দোলনের কথা। সমাজে শিল্প-সংস্কৃতিতে মানুষের যে অবদান তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন যথার্থভাবে। ব্রতচারী আন্দোলনে তাকে সহায়তা করতে তারই স্ত্রী মিসেস সরোজমলিনী দত্ত। কন্যা আরতী দত্ত ১৯২৪-২০০৩ ছিলেন বিখ্যাত সমাজকর্মী। রাতদিন পরিশ্রম করে করে এক সময় দুর্বল হয়ে পড়লেন গুরুসদয় দত্ত। মাত্র ৫৯ বছর বয়সে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি কলকাতায় তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
কমছে মাছের উৎপাদন, পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা

কমছে মাছের উৎপাদন, পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা