শোষিতের দুঃখনাশা মন্ত্রগীতে বাউল করিমের বেহালা বাজুক
- আপলোড সময় : ০৯-০২-২০২৫ ১২:০৭:৩২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০২-২০২৫ ১২:০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বাউল শাহ আব্দুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনের লোকউৎসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক ড. মোহম্মদ ইলিয়াস মিয়া। তাঁর ভাষণে তিনি বলেছেন, “বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমকে মানুষ ভালোবাসে বলেই হৃদয়ের টানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এখানে ছুটে এসেছেন। তাঁর গানের মূল কথাই হচ্ছে মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি। তার স্মৃতি বিজড়িত উজান ধলের মাঠে আজকের অনুষ্ঠানই প্রমাণ করে তিনি কতটা জনপ্রিয়। তিনি আমাদের জন্য যা সৃষ্টি করে গেছেন, তার সৃষ্টিচর্চা আরও বাড়াতে হবে। সকল শ্রেণিপেশার জনগণকে তার স্মৃতি ধরে রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।”
আমরা তাঁর মতামতের সঙ্গে পুরোপরি না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত পোষণ করছি এবং তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা বাউল করিমকে ‘সম্রাট’ বলে অভিহিত করে নিপীড়িত মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাই না। তিনি সম্রাট ছিলেন না, ছিলেন সাধারণ শোষিত-নিপীড়িত মানুষের প্রাণের মানুষ, যাকে বলে বন্ধুজন। তার সৃষ্টির পরতে পরতে সাধারণ মানুষের দুঃখজয়ের মন্ত্রগীত অনুরণিত হয়েছে। তিনি শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্নের জয়গান গেয়েছেন তাঁর গানে গানে। তাঁর সঙ্গে মানুষের প্রভু-দাসের সম্পর্ক ছিল না। সম্রাট উপাধিটি প্রভু ও দাসত্বের সম্পর্ককে অবতারণা করে, সেখানে বন্ধুজনের সহমর্মিতার বন্ধন নেই, আছে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতার বীজ। আমরা ভুলে যেতে চাই না যে, এই বিশেষ উপাধি করিমকে শোষিত শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে শাসক শ্রেণির কাছে অন্তরীণ করার দ্যোতকতার প্রতীক। তাছাড়া অতীব পরিতাপের বিষয় যে ইতোমধ্যে বহুজাতিক বাণিজ্যসংস্থা বাউল করিমকে বিশ্বব্যাপী পণ্য করে তোলেছে, তার পরিকল্পনা অনুসারে হচ্ছে লোকোৎসব। কিন্তু কথা ছিল, এই লোকোৎসবের আয়োজন ও পৌরোহিত্য থাকবে লোকায়তিক সমাজের সাধক আউল-বাউল-ফকিরদের জিম্মায়। তাঁদের সঙ্গে তাদের বন্ধু হাওরপাড়ের হাজার হাজার লুঙ্গি-নেংটি পরা উৎসাহী মানুষেরা,
সেখানে নাচবে গাইবে তাদের নিজেদের মতো করে।
আমরা আশা করি করিম তার নিজের উচ্চতায় ও মর্যাদায় একদিন না একদিন ফিরে আসবেন। তাঁকে সম্রাট হয়ে পুঁজির প্রভুত্বের ছাতার তলায় বসে বেহালা ধরতে হবে না। হাওরের মুক্ত উদার নিসর্গের বুকে দখিনের বসন্তবাতাসে তাঁর বেহালার সুর ভেসে বেড়াবে অপার আশির্বাদের মতো, শোষিত মানুষের দুঃখনাশা মন্ত্রগীতের সুরে উজ্জীবিত হবে বৈষম্যহীনতার বাতাসে বিমোহিত উদার আকাশের নীচে দিগন্তজুড়া ফসলের মাঠ। এই প্রত্যাশা নিয়ে বার বার বলি, হাওরের আকাশে বাতাসে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, শোষিত মানুষের দুঃখনাশা মন্ত্রগীতে করিমের বেহালা বাজুক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ