শামস শামীম ::
মাটি সংকটের কারণে তাহিরপুর উপজেলার দুটি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। সময় মতো কাজ শুরু না করায় বাঁধের কাজ টেকসই হবেনা এবং ফসল ঝুঁকিতে থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরাও পিআইসিকে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মাটি সংস্থান করে দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে মাটি সংকটের কারণে কাজ শুরু বিলম্ব হওয়ার ঘটনাটি অবগত হয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান কামরুল স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে মাটি সংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রতি বছর নির্বিচারে হাওরের জাঙ্গাল-কান্দা (তীর) কেটে বাঁধে মাটি কাটায় এখন ফসলরক্ষা বাঁধের মওসুমে মাটি সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পওর-১ বিভাগ) সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরুর পর এ পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলায় চলতি বোরো মওসুমে মাত্র ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যেখানে জেলার গড় কাজ ৫৮ ভাগ। এই উপজেলায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দে ৯০ কিলোমিটার বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত ও পুনঃনির্মাণে ৭৩টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওরের ১৪টি প্রকল্পে মাটি না থাকায় বাঁধের কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। সংশ্লিষ্টরা জানান, মাটিয়ান হাওরের ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪সহ মহালিয়া হাওরেরও আরো ৬টি পিআইসিতে কাজ শুরু করা যায়নি। মহালিয়া হাওরের বাঁধ নির্মাণে পাশের আরেকটি হাওরের কান্দা থেকে সম্প্রতি মাটির ব্যবস্থা হয়েছে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর থেকে মাটি এনে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে পিআইসি। এদিকে মাটিয়ান হাওরের পিআইসির পাশের পানি কমলেও কৃষকরা ধান রোপণ করায় মাটি মিলছেনা। যে এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে সে এলাকার মাটি ভেজা থাকার কারণেও কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। ফলে হাওরের বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে খোদ পাউবোই। প্রতি বছর কান্দা থেকে মাটি কেটে বাঁধে দেওয়ায় মাটির চরম সংকট বলে জানান কৃষকরা। শনির হাওরে চাষাবাদকারী ধুতমা গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা মোটামুটি বোরো ধান আবাদ শেষ করেছি। কিন্তু এখনো বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই হাওরটি সবসময় ফসলডুবির ঝুঁকিতে থাকে। আগেভাগে কাজ শুরু না হলে বাঁধ টেকসই হয় না। কিন্তু এবার সময় শেষ হতে চললেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। তাই আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে। কবে কাজ শুরু হবে আমরা জানিনা। মারালা গ্রামের কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমরা ধান চাষ করেছি। কিন্তু এখনো হাওরের বাঁধে মাটি পড়েনি। আমাদের সকল কৃষক এ কারণে শঙ্কিত। তিনি বলেন, আমাদের কৃষকরা জমিতে ধান লাগানো শেষ করেছেন। প্রতি বছর বাঁধে মাটি কাটায় কান্দা উজাড় হয়ে গেছে। তাই মাটির সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গম এসব হাওরের বাঁধ নিয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ২৩টি হাওরের একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল উপজেলার কৃষক। এবার মহালিয়া ও মাটিয়ান হাওরে মাটির অভাবে কাজই শুরু করা যাচ্ছেনা। আমি এই বিষয়টি জেনে স্থানীয় কৃষক ও নেতৃবৃন্দকে বৃহত্তর স্বার্থে মাটি সংস্থানের অনুরোধ করেছি। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের ফসলের নিরাপত্তার যা করার সবই করবো আমরা। তবে প্রতি বছর নির্বিচারে কান্দা থেকে মাটি কাটায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবস্টেশন অফিসার মনির হোসেন বলেন, মাটির কারণে কাজই শুরু করা যাচ্ছেনা। আমি প্রতিদিন যাচ্ছি। পর্যবেক্ষণ করছি। পিআইসিদের নিয়ে কথা বলছি। এখন মাটির ব্যবস্থা হলেও মাটি ভেজা থাকায় কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। তবে ১৪টির মধ্যে কয়েকটিতে কাজ শুরু করা গেছে বলে জানান তিনি। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সারা জেলায় মোটামুটি কাজের গতি ভালো। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মাটির কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওরের ১৪টি বাঁধের কাজ মাটি সংকটের কারণে শুরুই করা যাচ্ছে না। এখন প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর থেকে মাটির ব্যবস্থা হয়েছে। তাই কাজ শেষ করতে দ্রুত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওর
মাটির অভাবে ১৪ প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি
- আপলোড সময় : ০৭-০২-২০২৫ ০১:৩২:২৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০২-২০২৫ ০১:৫৯:০৪ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ