ধর্মপাশা প্রতিনিধি :: ধর্মপাশা উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামে হযরত মাদার পীর (রা.) স্মরণে দুদিন ব্যাপী ৪৪তম বার্ষিক ওরস মোবারক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র একই গ্রামে দু’দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে ধর্মপাশা উপজেলা সর্বদলীয় ইসলামী ঐক্য পরিষদ। ২৮ জানুয়ারি ও ২৯ জানুয়ারি দুদিন ব্যাপী পৃথক এই কর্মসূচির আয়োজন করায় দুই পক্ষের লোকজনদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উপজেলা প্রশাসন, ধর্মপাশা থানা পুলিশ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে পৃথক পৃথক আলোচনা করে সমঝোতা করতে সক্ষম হন। সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে ও আলেম-ওলামাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দুদিন ব্যাপী ওরস মোবারক কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছেন ওরস পরিচালনা কমিটি। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে ওরস পরিচালনা কমিটির সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো (৫০) দুদিন ব্যাপী ওরস অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার বিষয়টি ধর্মপাশা থানার ওসির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় সকল শ্রেণি পেশার মানুষজনদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও মাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের আহম্মদপুর গ্রামে হযরত মাদার পীরের (রা.) নামে এক মাজার রয়েছে। গত ৪৩ বছর ধরে সেখানে ওরস মোবারক উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, জিকির আসকার ও বাউল গান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ৪৪তম বার্ষিক ওরস মোবারক উপলক্ষে ২৮ জানুয়ারি ও ২৯ জানুয়ারি দুদিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করে ওরস পরিচালনা কমিটি। এশার নামাজের পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মিলাদ মাহফিল ও রাত ১০টা থেকে ভোর রাত চারটা পর্যন্ত জিকির আসকার ও বাউলগানের আয়োজন করে ওরস পরিচালনা কমিটি। তিনমাস আগে চারজন বাউল শিল্পীর সঙ্গে চুক্তিপত্র করে এ বাবদ অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া দুই সপ্তাহ আগে থেকে মাইকিং করে ঢাকা, কুমিল্লা ও গাইবান্ধা থেমে নামকরা বাউলশিল্পী আসার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়। এদিকে, উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামে ওরসের নামে জুয়া, মদ, গাঁজা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি, অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম করা হয় এমন অভিযোগ এনে এসব কাজ বন্ধ করার লক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলা প্রশাসন ও ধর্মপাশা থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্থানীয় আলেম-ওলামারা। এ নিয়ে গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ইসলামী সমমনা দল ও তাওহীদি জনতার ব্যানারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ধর্মপাশা উপজেলা শাখা কার্যালয়ে মতিবিনিময় সভা করা হয়। সভা শেষে ১০সদস্যবিশিষ্ট ইসলামী সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ গঠন করা হয়। এই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আহম্মদপুর গ্রামে মাজারের পাশের বাড়িতে ২৮ জানুয়ারি ও ২৯ জানুয়ারি বাদ আসর থেকে ফজর পর্যন্ত দুদিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। ওয়াজ উপলক্ষে তিন-চারদিন ধরে ভারতের দুই জন আলেম ও দেশবরেণ্য আলেমরা এই ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত থাকবেন মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের আহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মাজারের খাদেম মো. এনামুল হক (৩৭) বলেন, এই ওরস মোবারকে মদ, গাঁজাসহ কোনো অপরাধ ও অনৈতিক কার্যক্রম হয় না। এগুলো গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। ওরস মোবারক উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, জিকির আসকার ও বাউলগান পরিবেশন করা হয়। স্থানীয় সাতটি গ্রামের মানুষজনদের সহায়তায় এই কার্যক্রম চলে আসছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও আলেম- ওলামাদের সম্মান জানিয়ে ওরস পরিচালনা কমিটির সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমি একমত পোষণ করছি। ধর্মপাশা উপজেলা সর্বদলীয় ইসলামী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা আমিনুল ইসলাম বলেন, আহম্মদপুর গ্রামে ওরসের নামে মদ, গাঁজা, জুয়ার আসরসহ নানা ধরণের অপরাধমূলক ও ইসলামবিরোধী কার্যক্রম করা হয়। অপরাধমূলক ও ইসলাম বিরোধী সকল কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সব সময় আমরা তৎপর আছি। আমরা পূর্ব ঘোষিত দুদিনব্যাপী শান্তিপূর্ণ ওয়াজ মাহফিল কর্মসূচি পালন করব। ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ওরস মোবারক ও ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি দুদিন ব্যাপী ওরস অনুষ্ঠান স্থগিত করায় পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত আবেদন ওরস কমিটির সভাপতির কাছ থেকে আমি পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।