জেলা সদরে প্রস্তাবিত দুই স্থানের একটিতে ক্যাম্পাস স্থাপনের দাবি
সুবিপ্রবি’র স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলনের স্মারকলিপি
- আপলোড সময় : ২৮-০১-২০২৫ ১২:২০:৪২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০১-২০২৫ ১২:২০:৪২ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি) ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সকল মানুষের জন্য সুবিধাজনক স্থানে স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সোমবার সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি’র) স্থায়ী ক্যা¤পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন, সুনামগঞ্জ-এর নেতৃবৃন্দ এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যারয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে দেয়া হয়েছে।
সুবিপ্রবি’র স্থায়ী ক্যা¤পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন, সুনামগঞ্জের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রবিউল লেইস রোকেস, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মো. মুনাজ্জির হোসেন সুজন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা সুনামগঞ্জ জেলার নাগরিকগণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ নিমিত্ত এই স্মারকলিপির মাধ্যমে আপনার তড়িৎ পদক্ষেপ কামনা করি। আপনি জ্ঞাত আছেন সুনামগঞ্জে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন আছে। এ লক্ষ্যে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০ (২০২০ সনের ২৩ নং আইন) প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপর্যুক্ত আইনের ৩ (১) ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্থান হিসাবে ‘দেখার হাওর পাড়’ উল্লেখ আছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে জেলাবাসীর প্রবল আপত্তি বলবৎ ছিলো। তৎকালে এ নিয়ে বিভিন্ন আকারে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। জেলাবাসীর দাবি ছিলো উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি জেলা সদরের নিকটবর্তী কোনো অঞ্চলে স্থাপন করা হোক।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করতে যেয়ে নিজের সরকারি পদের অপব্যবহার করে সমস্ত বড় বড় উন্নয়ন কার্যক্রম তাঁর নিজ উপজেলা ও বাড়ির নিকটবর্তী শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছাকাছি নিয়ে যান। উপেক্ষা করা হয় জেলা সদরসহ অপর ৯টি উপজেলাকে। একটি উপজেলার ছোট্ট একটি অঞ্চলে বড় বড় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়টি জেলাবাসীকে বৈষম্যবোধে তাড়িত করেছে। এখন যেহেতু সব ধরনের বৈষম্যের অবলোপন ঘটিয়ে সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ শাসন করছে তখন আমাদের মনে এই আশাবাদ সঞ্চারিত হয়েছে যে, এখন বঞ্চনা ও অবহেলার হাত থেকে জেলাবাসী রক্ষা পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বা নির্ধারিত দেখার হাওরটি অত্র জেলার একটি সুবিশাল হাওর। এই হাওর সদর, শান্তিগঞ্জ ও ছাতক উপজেলার বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। এই হাওরে উৎপাদিত হয় বিপুল পরিমাণ বোরো ধান। এই হাওর মিঠাপানির মাছের বড় উৎস। দেখার হাওরে সুবিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনাদি নির্মিত হলে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় সাংঘাতিক বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশাল হাওরটি জায়গায় জায়গায় জলাবদ্ধতার শিকার যেমন হবে তেমনি কিছু অঞ্চলে পানি নিষ্কাশনের তীব্র সংকট দেখা দিবে। এর ফলে ধান ও মাছ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাসপ্রাপ্তি ঘটবে। কৃষি জমির চরিত্র অপরিবর্তিত রাখা ও হাওরের কোনো ক্ষতি না করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে সরকারের এই লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কটি দেখার হাওরের পাশ ঘেঁষেই অবস্থিত। এই সড়কের পাশে ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখন এই সড়কের পাশে নতুন করে সুবিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাস নির্মিত হলে একটি ছোট এলাকার উপর জনসংখ্যার চাপ বাড়বে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কটি নানা মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হবে। তাই বিশিষ্টজন ও বিশেষজ্ঞরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাস দেখার হাওরের পরিবর্তে অন্যত্র, প্রধানত জেলা শহরের সন্নিকটে স্থাপন করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
গত ২২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে জেলার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ সুবিপ্রবি ক্যা¤পাস সুনামগঞ্জ শহর সন্নিকটে স্থাপন করার বিষয়ে দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেন। ওই মতবিনিময় সভায় সম্ভাব্য স্থান হিসাবে দুইটি পৃথক জায়গার উল্লেখ করা হয়। সবচাইতে ভালো খবর এই যে, প্রস্তাবিত এই দুই জায়গায়ই রয়েছে সরকারের বিপুল পরিমাণ খাস জমি। ফলে দেখার হাওরে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে এই দুই স্থানের যেকোনো একটিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে। প্রস্তাবিত স্থান দুইটির খাস জায়গার বিবরণ হলো :- প্রস্তাবিত জায়গা ১. সুনামগঞ্জ সদর, মৌজা : রতনশ্রী, জে.এল. নং : ১৪। এই জায়গার ৫০১ নং দাগে ৫৪৪ একর ০৬ শতাংশ (লায়েক পতিত রকম ভূমি), একই দাগে ৫৪৪ শতক ০৬ শতাংশ (লায়েক জঙ্গল রকম ভূমি), ২৫৬৩ দাগে ৩৩৪ একর ৫৪ শতাংশ ভূমি (লায়েক পতিত রকম ভূমি), মালিক : বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ। উল্লেখ্য এই মৌজাধীন বর্ণিত জে.এল নম্বরের আওতায় বিভিন্ন দাগে আরও বহু খাস জায়গা আছে।
প্রস্তাবিত জায়গা-২, থানা : সুনামগঞ্জ সদর, মৌজা : রসুলপুর, জে.এল. নং : ৮২। এর ৬৩, ৬৪, ৮০, ৮৩, ৮৬, ৮৭, ৮৯, ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ১০০, ১২৩, ১২৮, ১৩৮, ১৪০, ১৬৪ ও ১৭২ দাগে মোট জমি ৯৬ একর ৬৩ শতাংশ। মালিক : বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ।
প্রস্তাবিত ১নং জায়গাটিতে বিপুল পরিমাণ খাস জমি আছে এবং এটি সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের গৌরারং ইউনিয়নের পাশে এবং জায়গাটি জেলা শহরের নিকটবর্তী। এই জায়গাটি শাল্লা, দিরাই, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশাসহ সমগ্র জেলার জন্য সুবিধাজনক ও সহজগম্য একটি স্থান। প্রস্তাবিত ২ নং জায়গাটি জেলা শহরের একেবারে নিকটবর্তী এবং এখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে মৃতপ্রায় সুনামগঞ্জ জেলা শহরের বহুমুখী উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটবে। ২নং স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আরও জায়গার প্রয়োজন হলে অধিগ্রহণের সুযোগ আছে। এই জায়গাটিও সমগ্র জেলার জন্য সুগম একটি অঞ্চল। উভয় স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাস হলে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কম।
এমতাবস্থায় সুনামগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের মানুষের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী স্থান দেখার হাওর পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত দুইটি স্থানের যেকোনো একটিতে নির্ধারণের লক্ষ্যে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও নতুন করে জায়গা নির্ধারণ ও অধিগ্রহণের বিধিগত প্রক্রিয়া অগ্রসর করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করা হলো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ