সুনামগঞ্জ , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
গণশিক্ষা উপদেষ্টার সাথে সুবিপ্রবি স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সাক্ষাৎ বইমেলা আমাদের সংস্কৃতি আর জ্ঞানের প্রতীক- জেলা প্রশাসক ২০১৮ সালে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ৩৩ ডিসিকে ওএসডি বিএনপির বর্ধিত সভা এবার সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের পরিকল্পনা সভা আল-আকসা কিন্ডারগার্টেন উদ্বোধন সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসনাত কাওসার গ্রেফতার শিক্ষকের মারধরে ছাত্র আহত অ্যাড. নূরুল ইসলামের সমর্থনে প্রচার সভা ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসির উদ্যোগে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ এখনো অনেক কাজ বাকি এবারও হাওরের মাটি কাটা হচ্ছে কলমে! জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন জগন্নাথপুরে ৩ দোকান থেকে নগদ অর্থসহ অর্ধকোটি টাকার মোবাইল চুরি মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধের দাবি জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে রাণীগঞ্জ মাদ্রাসায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন চালু : স্বল্প মূল্যে সেবা পাবেন রোগীরা ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে মাদ্রাসা সুপারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার
ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ী, নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা

পাটলাই নদীতে আটকা ৬ শতাধিক নৌযান

  • আপলোড সময় : ২৮-০১-২০২৫ ১২:১৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০১-২০২৫ ১২:২৮:১৯ পূর্বাহ্ন
পাটলাই নদীতে আটকা ৬ শতাধিক নৌযান
মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ :: প্রতি বছর শীত মৌসুমে প্রায় তিন মাস তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পাটলাই নদীতে দেখা দেয় তীব্র নৌজট। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও নদীটিতে গেলো ১০ দিন ধরে আটকা পড়ে রয়েছে ৬ শতাধিক কয়লা ও চুনাপাথরবাহী স্টিল বডির বাল্কহেড নৌকা। বাংলা মাঘ মাসের প্রথম থেকেই শুরু হওয়া এ নৌজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নৌচালক ও শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীরা। এতে করে ব্যবসায়ী, নৌযান, মালিক, চালক এবং শ্রমিকরা পড়েছেন মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে। প্রতি বছর এ সময় নদীটির ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নাব্যতা সংকট দেখা দিলেও এর কোনো সঠিক সমাধান মিলছে না। নাব্যতা সংকট নিরসনে গেলো দুই বছর ধরে বিআইডব্লিউটিএ নদী খনন করে আসলেও এর কোনো সুফল মেলেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, তাহিরপুর উপজেলার তিনটি শুল্ক স্টেশনের আমদানিকৃত কয়লা-চুনাপাথরসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের একমাত্র নৌপথ পাটলাই নদীর সুলেমানপুর বাজার থেকে পাটাবুকা গ্রাম হয়ে কানামইয়া জলমহল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় নাব্যতা সংকটের কারণে প্রতিবছর দেখা দেয় তীব্র নৌজট। ৩০ মিনিটের নৌপথে এ সময় জটে আটকা পড়লে বেরিয়ে যেতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। এদিকে প্রতিদিন ১৫-২০টি নৌকা জট থেকে বেরিয়ে গেলেও এর পেছনে যুক্ত হয় ৪০ থেকে ৫০টি নৌকা। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগ খনন কাজ চলছে ধীরগতিতে। জানাযায়, তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও তিনটি শুল্কস্টেশন থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার কয়লা-চুনাপাথর এবং ফাজিলপুর বালুমহালের বালু সাভার, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দাউদকান্দি, ভৈরব, টাঙ্গাইল সিরাজগঞ্জ, বাগানবাড়ি, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশের বিভিন্ন ইটভাটায় কয়লা ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে চুনাপাথরের জোগান দেন স্থানীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নেত্রকোণা, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করা হয় এ নদী দিয়ে। এসব পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। কিন্তু নদীর নাব্যতা সংকটের ফলে প্রতি বছরই মাঘ মাসের প্রথম থেকেই পাটলাই নদীতে আটকা পড়ে শত শত মালবাহী নৌযান। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র নৌজট। কোটি কোটি টাকার কয়লা ও চুনাপাথরবোঝাই নৌকাগুলোকে পাটলাই নদীতে নৌজটে আটকা পড়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়। ২৭ জানুয়ারি সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে পাটলাই নদীতে গিয়ে নৌকার মাঝি, কয়লা-চুনাপাথর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঘ মাসের প্রথম থেকে চৈত্র মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে প্রতি বছর এ নৌজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে। তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর হেমন্তে পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে যায়। এতে আড়াই থেকে তিন মাস নদীতে নৌজট লেগেই থাকে। কয়লাবাহী বাল্কহেডের মাঝি বিলাল মিয়া বলেন, কয়লা নিতে আসার সময় নদীতে পানি ছিল এবং নৌকা খালি ছিল শুল্ক স্টেশনে ঢুকতে কোনো সমস্যা হয়নি। কয়লা নিয়ে গন্তব্যে ফেরার পথে পানি কমে যাওয়ায় নৌজটে আটকা পড়লাম আজ ৫ দিন হয়ে গেছে। এক জায়গায় আটকা পড়ায় জ্বালানি, নৌশ্রমিকদের মজুরি, ঘাটে বসে খাওয়া-দাওয়া ও পকেট খরচ বাবদ প্রচুর টাকা ব্যয় হচ্ছে। কোনদিন এ জট থেকে বের হতে পারব এখনও বুঝতে পারছি না। বিসমিল্লাহ পরিবহন নৌকার মাঝি মিয়া হোসেন বলেন, নৌজটের কারণে তারা ভয়ে রাত্রিযাপন করেন। নৌজট নিরসনের নামে স্থানীয় একটি মহলকে চাঁদা দিতে হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন নৌযান নিয়ে আটকেপড়া মালিক, মাঝি এবং ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর এই মৌসুমে নৌজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান পণ্যবাহী বাল্কহেডের একাধিক চালকরা। তারা বলেন, আটকে পড়া বাল্কহেডের ওজন কমানোর জন্য মালামাল নামিয়ে ছোট ছোট ভাড়া নৌকায় ওঠানো হয়। পরে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকা থেকে ফের ওই বাল্কহেডে মালামাল লোড করে দেয়া হয়। বাল্কহেড দিয়ে পণ্য পরিবহন করে যেখানে ব্যবসায়ীদের লাভ হওয়ার কথা সেখানে উল্টো গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের লোকসান। তারা আরও বলেন, কোটি কোটি টাকার মালামাল পরিবহনের একমাত্র নৌপথ এ নদী। সরকার যদি নদীগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে ভালোভাবে খননকাজ করতো তাহলে হয়তো এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলতো আমাদের। আমদানিকারক হাজী মুজিবুর রহমান বলেন, নাব্যতা সংকটের ফলে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কত দিন সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছে না। ক্রেতাদের সময় মতো মালামাল দিতে না পারায় এ সময় প্রতি বছর আমাদের আমদানিকারগণকে চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজী খসরুল আলম বলেন, পাটলাই ও পাইকরতলা নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে প্রতিবছর হেমন্ত মৌসুম এলেই কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনে ব্যবসায়ীদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তারা আরও বলেন, গ্রুপের (বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী) শুল্ক স্টেশন থেকে সরকার প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। তারা ব্যবসায়ীদের সুবিধার দিক বিবেচনা করে পাটলাই ও পাইকরতলা নদীটি জরুরিভিত্তিতে খনন করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গত ১৫-১৬ বছর ধরে এ সময় আমরা ব্যবসায়ীদেরকে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নৌ পুলিশের সঙ্গে আমরা সমিতির পক্ষ থেকেও চেষ্টা করছি শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে নৌকাগুলো বের করে দেয়ার। নৌজটকে কেন্দ্র করে কোন দুষ্কৃতকারী যেন কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে পুলিশের সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বানও জানান তিনি। সুনামগঞ্জের টুকেরবাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, নৌজট নিরসনে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। আটকেপড়া নৌযানের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য নৌ পুলিশের একটি টহল দল সেখানে নিয়মিত টহল করছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম জানিয়েছেন, নৌজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

গণশিক্ষা উপদেষ্টার সাথে সুবিপ্রবি স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সাক্ষাৎ

গণশিক্ষা উপদেষ্টার সাথে সুবিপ্রবি স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সাক্ষাৎ