দেখার হাওরের বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে মাছ শিকার
- আপলোড সময় : ২৮-০১-২০২৫ ১২:০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০১-২০২৫ ১২:০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দেখার হাওর অংশের বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করছেন সাব ইজারাদার আতাউর রহমান গং। এতে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছের বংশ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্মারক নম্বর ০৫.৪৬.৯০০০.০০৮.১২.০১৭.২৩- ১৩২২ (৬) আলোকে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ১৩/০৩/২০২৩ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৫০.৬৮.০০৫.২৩.২১০ নম্বর স্মারক সূত্রের প্রেক্ষিতে শান্তিগঞ্জ উপজেলা, সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা জলমহালটি ০৬/০৩/২০২৩ খ্রি. তারিখে ইজারা পান শান্তিগঞ্জ উপজেলার আসামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইনাতনগর আসামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক। তিনি ১৪৩০ বাংলা সনের জন্য বিল ইজারা পান। পরে এই বিল সাব ইজারা আনেন পৌর এলাকা সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুর রহীমের পুত্র আতাউর রহমানসহ আরও ৪/৫ জন। বর্তমানে আতাউর রহমানের নেতৃত্বে এই বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিলের আশপাশের খাগোড়া গ্রাম, মোল্লাপাড়া, সরইবন্দ গ্রাম, জায়ফরপুর, মৌকলা, মনোহরপুর, ভল্লবপুর গ্রাম, রামেশ্বরপুর, ফতেহপুর, লালপুর, পলিচর, মঙ্গলপুর গ্রাম, করিমপুর, সোনাপুর, নতুননগর গ্রামের আশপাশের সকল ডোবা-নালা শুকিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন সাব ইজারাদার আতাউর রহমান।
কৃষকেরা জানান, অসময়ে বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করার কারণে কৃষি কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় আশপাশ এলাকার প্রায় দেড় হাজার একর জমির কৃষক পানি সংকটে ভুগছেন। তারা জমিতে পানি দিতে পারছেন না। পৌষ মাসে লাগানো ধান গাছের চারা এখন প্রায় স্থানে নেতিয়ে পড়ছে।
একাধিক কৃষক জানান, মাঘ মাসে ধান গাছে বেশি পরিমাণে পানি দিতে হয়। কিন্তু এই সময়ে পানি সংকটে ভুগছেন তারা।
হাওরপাড়ের বাসিন্দা নুর হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ছলিম উল্লাহ, আরশ আলী, ওয়ারিছ আলী, মফিজ আলী, মনির উদ্দিন, নুর উদ্দিন, আলা উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, বিল শুকিয়ে মাছ শিকারে আপত্তি দেওয়ার পরও মামলা হামলার হুমকি ও ভয় দেখিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সুনামগঞ্জ শহরের সুলতানপুরের সাব ইজারাদার আতাউর রহমান দাপটের সাথে বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন।
দেখার হাওর অংশের বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে প্রতিবছর এই মাছ শিকার করতে দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পলিচর গ্রামের সন্নিকটে পান্ডারখাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন করেছে। এর আগে বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা জলমহালের খাল দিয়ে এই পানি নিষ্কাশন করেন আতাউর রহমান গংরা। কিন্তু প্রতিবছর বাংলা সনের ফালগুন মাসে মৎস্য নীতিমালা অনুযায়ী মাছ শিকার করলে মাছের পরিমাণও বাড়বে এবং মাছের বংশ ধ্বংস হবে না।
হাওরপাড়ের বাসিন্দা মো. নুর হোসেন বলেন, বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে মাছ শিকার না করতে প্রতিবছর আমরা আপত্তি দিয়ে আসছি। কিন্তু আপত্তি দেয়ায় আমরা নানা হুমকি-ধমকির সম্মুখিন হই। এটা প্রতিরোধ করা জরুরি প্রয়োজন।
আজাদ মিয়া বলেন, প্রতিবছর কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করায় দেশীয় মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে। এটা প্রতিরোধ করার কেউ নেই। সংশ্লিষ্টদের উচিত দ্রুত এটাকে প্রতিরোধ করা।
আরশ আলী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত বিল শুকিয়ে মাছ শিকারের মতো অপরাধ প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু পারছি না। কারণ আতাউর রহমান একজন প্রভাবশালী লোক। টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলেন। আমরা এটার প্রতিরোধ চাই এবং জড়িত অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানাই।
আনোয়ার মিয়া বলেন, কাষ্ঠগঙ্গা বিল সাব লীজ নিয়ে আতাউর রহমান কীটনাশক ব্যবহার করে বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করেন প্রতিবছর। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা খবর নিয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেন নি।
এ ব্যাপারে জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতীশ দর্শী চাকমা’র মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সাব্বির আহমদ আকুঞ্জি বলেন, দেখার হাওর অংশের বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে মাছ শিকারের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, দেখার হাওর অংশের বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে মাছ শিকারের বিষয়টি আমি জানি না। আমি এখন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় একটি কাজে ব্যস্ত আছি। এডিসি রেভিনিউকে বলেন, তিনি ব্যবস্থা নিবেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ