পাউবো’র কর্মকর্তাদের সরেজমিন বাঁধের কাজ তদারকিতে থাকতে হবে : জেলা প্রশাসক
- আপলোড সময় : ২৬-০১-২০২৫ ১০:০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০১-২০২৫ ১০:০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ::
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সাথে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব স¤পদ) সুনজিত চন্দ।
সভায় বক্তব্য রাখেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম, দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জিব সরকার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকুন নূর।
আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী মল্লিক মইনুদ্দীন সোহেল, দৈনিক সুনামকণ্ঠ স¤পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায়, অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক পংকজ দে, অ্যাড. এ আর জুয়েল, পরিবেশ আন্দোলন নেতা আবু নাসার, শিক্ষক কানিজ ফাতেমা, সাংবাদিক হিমাদ্রী শেখর ভদ্র, মাসুম হেলাল, জাকির হোসেন, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, রাজু রমজান প্রমুখ।
মতবিনিময় সভার শুরুতে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কাবিটা নীতিমালার আলোকে বাস্তবায়নাধীন সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরের ডুবন্ত বাঁধে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অগ্রগতি বিষয়ে ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুল হাওলাদার। এসময় তিনি জানান, এবার সারা জেলায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৬ কোটি ৩৭ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বাঁধের কাজ প্রায় ২৫ থেকে ৪২ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। সকল বাঁধের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
সভায় মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাঁধ নির্মাণকাজে দুর্নীতির পাঁয়তারা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে না এটা আমাদের আশঙ্কা। আগাম বন্যা আসলেই তাদের স্বার্থ হাসিল হবে।
বক্তারা বলেন, সময়মত বাঁধ নির্মাণ না হলে আগাম বন্যায় তলিয়ে যাবে ফসল। কারণ প্রতি তিন বছর পর পর একবার আগাম বন্যা আসে। এবার বাঁধের কাজের অগ্রগতি দেখে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অফিসে বসে সময় পার করছেন। মাঠে যেতে চাননি। বাঁধ পরিদর্শনে গেলে কর্মকর্তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো বাঁধে শুধু কার্য সহকারীকে পাওয়া যায়।
বক্তারা বলেন, বাঁধের সাইন বোর্ড পিআইসি সভাপতির বাড়িতে থাকে। কোনো কোনো সাইনবোর্ড বাঁধের শেষ স্থানে গাছের মগডালে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। যে বাঁধে সাইনবোর্ড পাওয়া যায় সেই পিআইসি সদস্যের ফোনে যোগাযোগ করা যায় না। কেউ ধরলে বলে আমি পিআইসি বিষয়ে কিছুই জানি না।
তারা বলেন, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর এবার এই সময়ে বাঁধের কাজ খুবই পিছিয়ে। আবহাওয়া বার্তা হিসাবে আগামী দিনে বৃষ্টি শুরু হবে। বৃষ্টি হলে পিআইসিরা বলবে মেশিন চলবে না। বালু দিয়ে গড়া বাঁধ ধসে পড়বে। এই বিষয়ে পাউবো কর্মকর্তারা অবহেলা করছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল বলেন, চলমান ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে বা সমস্যা রয়েছে তা আমরা আলোচনা করে চিহ্নিত করেছি। আগামীদিনের মধ্যে এসব ভুলত্রুটি ও সমস্যার সমাধান করে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ স¤পূর্ণভাবে শেষ না হলে ওই পিআইসি বিল পাবে না। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঠিক না থাকলে নিজেদের হাড়ি-পাতিল ঠিক থাকবে না। খাদ্য নিয়ে সমস্যা হবে সর্বস্তরের মানুষের। তাই সঠিকভাবে সঠিক সময়ে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যারা দায়িত্বশীল, আমাদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে এবং যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দৈনন্দিন কাজের অগ্রগতি দেখাতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যাবে না। অর্থাৎ প্রস্তুতির গড়মিল থাকলেই সমস্যা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর যদি পিআইসি কমিটি ভাল কাজ করতো তবে পিআইসি নতুন করে কমিটি গঠনের প্রয়োজন ছিল না। প্রতিবছর নানা কারণে পিআইসিতে প্রভাব পড়ে। তাই প্রতিবছর কমিটি গঠন করতে হয়।
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তাকে বাঁধের কাজ তদারকিতে থাকতে হবে। গত কয়দিন আগে ও আমি কয়েকটি উপজেলায় বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে পাইনি। এটা আমাদের কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ভাল হলে আমার সম্পর্ক ভাল থাকবে। খারাপ হলে আমার সম্পর্কও খারাপ হবে। এ ধরনের অবহেলায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সভায় জেলার সকল উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ