বাঁধের কাজে ধীরগতি, শঙ্কায় কৃষক
ধর্মপাশায় প্রথম কিস্তির টাকা না পাওয়ায় বিপাকে পিআইসিরা
- আপলোড সময় : ২২-০১-২০২৫ ০৭:৪৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০১-২০২৫ ০৭:৪৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
ধর্মপাশা প্রতিনিধি ::
ধর্মপাশা উপজেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ৮৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যরা এক মাসের বেশি সময় ধরে বাঁধ পুনঃনির্মাণ ও মেরামত কাজ করে আসলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁরা প্রথম কিস্তির টাকা পাননি। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ফলে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকেরা।
ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, জয়ধনা, সোনামড়ল কাইলানী, জয়ধনা, গুরমা ও রুই বিল হাওরটি সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন। এই সাতটি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ৮৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ১৫ লাখ ১ হাজার ৮৮টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ পুনঃনির্মাণ ও মেরামত কাজ শুরু করে তা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধের কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় পুরোদমে সবকটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। চারটি কিস্তিতে চেকের মাধ্যমে বাঁধের কাজের বরাদ্দের টাকা পিআইসিদের দেওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শুরুর আগেই পিআইসিদেরকে বরাদ্দের শতকরা ২৫ভাগ টাকার অগ্রিম চেক দেওয়ার কথা। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত পিআইসিরা বরাদ্দের প্রথম কিস্তির টাকা পাননি।
উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, সোনামড়ল, জয়ধনা, কাইলানী ও রুই বিল হাওরের অন্তত ৩৫টি ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজ ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের প্রকল্প কাজগুলো চলছে ধীরগতিতে। এসব প্রকল্পগুলোতে কোথাও ২জন আবার কোথায় ৪জন শ্রমিক কাজ করছেন।
উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ৩৩নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি সালাহ উদ্দিন (৪৬) ও একই হাওরের ৬৭ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান (৫০) বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার আগেই আমাদেরকে বরাদ্দের প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রথম কিস্তির টাকাই আমরা পাইনি। এতে আমরা হতাশ। ধার দেনা করে বাঁধের কাজ করতে গিয়ে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলা কমিটির সদস্য এনামুল হক এনাম বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। অন্যথায় হাওরের ফসলডুবির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা ২০১৭ সালের মতো ফসলডুবির সেই দৃশ্য আর দেখতে চাই না। যতটুকু জেনেছি, ধর্মপাশার ইউএনও অন্যত্র বদলি হওয়ায় পিআইসিরা প্রথম কিস্তির টাকা এখনো পাচ্ছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী এবং উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাঁধের কাজের প্রথম কিস্তির টাকা ইতিমধ্যে ব্যাংকে এসে জমা হয়েছে। কিন্তু পিআইসিরা প্রথম কিস্তির টাকা না পাওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে। দ্রুত প্রথম কিস্তির চেক প্রদানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
ইউএনও’র দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামান বলেন, ধর্মপাশার ইউএনও স্যার গত ৩১ ডিসেম্বর বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এ উপজেলায় নতুন ইউএনও পদায়ন হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ধর্মপাশায় নতুন ইউএনও দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মধ্যেই পিআইসিরা প্রথম কিস্তির টাকার চেক পেয়ে যাবেন বলে আশা করছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ