সুনামগঞ্জ , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সামনে ভয়ংকর অন্ধকার দেয়াল আছে : তারেক রহমান ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : আইজিপি বন্যা মোকাবিলায় ভাঙা হবে ইটনা-মিঠামইন সড়ক : ফরিদা আখতার এবার ফেসবুক পেজে হচ্ছে রাধারমণ লোকসংগীত উৎসব ছাতকে মদসহ গ্রেফতার দুই ৫২ বস্তা চিনিসহ গ্রেফতার ২ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে’র ভয়ঙ্করতা প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকা : ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা, জনদুর্ভোগ সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৫, আহত ৮১৫ নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ধাপে ধাপে এগোবে সরকার : উপদেষ্টা হাসান আরিফ সুনামগঞ্জ-৩ আসনে তালহা আলমকে প্রার্থী ঘোষণা শান্তিগঞ্জে বিএনপি’র কর্মীসভা ও প্রবাসীদের সংবর্ধনা দ্বিতীয় দিনেও মঞ্চ মাতালেন নাট্যকর্মীরা আমন ধানে হাসছে কৃষক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা তুমি যে চেয়ে আছ আকাশ ভরে দুই দিনের রিমান্ডে ব্যারিস্টার সুমন দিরাই আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা

কান্না থামছে না আয়াতুল্লাহ’র মায়ের

  • আপলোড সময় : ২০-০৮-২০২৪ ১১:৪৮:৫০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-০৮-২০২৪ ১১:৪৮:৫০ অপরাহ্ন
কান্না থামছে না আয়াতুল্লাহ’র মায়ের
শহীদনূর আহমেদ ::
 
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাইদ কিংবা মীর মুগ্ধের মতো অনেকের নাম দেশবাসী জানলেও নাম না জানা আরও অনেকেই রয়েছেন যারা অকাতরে প্রাণ হারিয়েছেন। তেমনি একজন মাদ্রাসা ছাত্র আয়াতুল্লাহ। ৫ আগস্ট লংমার্চ ঢাকা কর্মসূচির মিছিলে যোগ দিয়ে গাজীপুরে কালিয়াকৈয়ে গুলিতে প্রাণ হারান মধ্যনগর উপজেলার এই তরুণ। ১১ দিন মর্গে থাকার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আয়াতুল্লাহ’র মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়। পরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করা হয় এই শহীদের লাশ।
 
এদিকে, সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আয়াতুল্লাহ’র মা শুভা আক্তার। কান্না থামছে না অসহায় পরিবারের স্বজনদের। আয়াতুল্লাহ‘র মায়ের আহাজারিতে কেঁপে উঠছে জলুষা গ্রামের মাটি। প্রতিবেশীরাও তার কান্না থামাতে গিয়ে ফিরছেন অশ্রুসিক্ত নয়নে। মেধাবী সন্তানকে হারিয়ে শোকে কাতর স্বজনরা। এমন বীর সন্তানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা, করছেন কবর জিয়ারত।
 
আয়াতুল্লাহ মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের জলুষা গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে ছিল। সে তার বড়ভাই সোহাগের সঙ্গে ঢাকার গাজীপুরের কালিয়াকৈরের জামতলা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকত। আয়াতুল্লাহ কালিয়াকৈরের ভান্নারা বাজার এলাকায় মাখলাজুল ইমান নামে একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করার পাশাপাশি একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করত। পরিবারের ২ ভাই, ২ বোনের মধ্যে ছোট সে।
 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ে নিয়মিত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন আয়াতুল্লাহ (২০)। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর তার বড়ভাই সোহাগ মিয়ার সঙ্গে গাজীপুরের কালিয়াকৈর মৌচাক এলাকা থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির দিকে যায় আয়াতুল্লাহ। মিছিলটি আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে যাওয়া মাত্রই মিছিলের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে করে মিছিলে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। মিছিলে অংশ নেওয়া সোহাগ মিয়া হারিয়ে ফেলে তার ভাই আয়াতুল্লাহকে। এরপর থেকে আর খোঁজ মিলেনি আয়াতুল্লাহ’র। গাজীপুর ও ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল মর্গসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মিলেনি তার। নিখোঁজের ১১ দিন পর ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে খোঁজ মিলে আয়াতুল্লাহর মরদেহের।
 
আয়াতুল্লাহ‘র বড়ভাই সোহাগ আহমেদ বলেন, আমার ভাই আর আমি গাজীপুরে থাকতাম। সে একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখার পাশাপাশি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। আন্দোলনের সময় সে রোজ মিছিলে গিয়েছে। তার সাথে আমিও যেতাম। ৫ আগস্ট মিছিলে আনসারবাহিনীর গোলাগুলিতে তাকে হারিয়ে ফেলি। ১১ দিন বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেছি। পরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে আয়াতুল্লাহ’র মরদেহের সন্ধান পাই। মৃত্যুর ১২ দিন পর গ্রামের এনে তাকে কবর দিয়েছি। আমার ভাই একজন ধার্মিক মানুষ ছিল। সবসময় ইসলাম ও দেশের কথা ভাবতো। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
 
নিহত আয়াতুল্লাহ’র বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে আমার পরিবারের মায়ার সন্তান আছিল। তারে কেমনে ভুলি। তারা দুই ভাই যা আয়-রোজগার করতো তা দিয়ে সংসার চালাতাম। এখন কি দিয়ে কি করবো?
আয়াতুল্লাহ’র স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন আলেম হওয়ার। ইসলাম ও দেশের জন্য কাজ করার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরার। একজন মেধাবী ছেলের এমন পরিণতি মানতে পারছেননা প্রতিবেশীরা। সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি নি¤œ আয়ের পরিবারটি পাশে দাঁড়াতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
 
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়াতুল্লাহ’র পরিবারের পাশে থাকার কথা জানিয়ে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, পরিবারটি অনেক অসহায়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো। আশা করছি বিত্তবানরাও তাদের পাশে দাঁড়াবেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছি।
 
 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য